ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিচার চেয়ে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৮
বিচার চেয়ে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

টাঙ্গাইল: ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের বিচার দাবিতে একসঙ্গে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি)  সব ধরনের প্রশাসনিক পদ থেকে ৫৬ শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। 

সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেওয়া হয়।  

৫৬ শিক্ষকের মধ্যে দু’জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চারজন ডিন, চারজন প্রভোস্ট ও ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান রয়েছেন।

জানা যায়, শনিবার দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস নামে এক ছাত্রী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। জিপিএ-৪ এর মধ্যে তিনি পেয়েছেন ১.৯৮। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সর্বনিম্ন পাস নম্বর জিপিএ- ২.২৫। এদিকে, রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ছিল কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষা। কিন্তু ওই ছাত্রী পদার্থে  উত্তীর্ণ না হওয়ায় বিভাগ তাকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু পরীক্ষার একদিন আগে ফলাফল ঘোষণাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বিরোধী উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে ঈশিতাকে জোড় করে পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেন। বিভাগের শিক্ষকরা এতে বাধা দিতে গেলে সজীব পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিরুজ্জামান, শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারধর করতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করান।  

পরীক্ষা শেষে তারা সব শিক্ষার্থীকে ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেন। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।
 
এদিকে, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিকেল ৪টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়। শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত দু’টি লিখিত অভিযোগ ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলে।  

অর্ডিন্যান্স হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া ক্লাস পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফলাফল পদ্ধতি।  

একপর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভাইস চ্যান্সেলর অফিস থেকে বৈঠক করে জানান, অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের ব্যাপারে শিক্ষকরা তাদের আশ্বস্ত করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।  

এদিকে, বিচার না পেয়ে রাতেই সব শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।  

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের ড. মো. আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।


বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।