ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ইবির সিন্ডিকেটে বৈধতা পেল বিতর্কিত নিয়োগ

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮
ইবির সিন্ডিকেটে বৈধতা পেল বিতর্কিত নিয়োগ

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা ও টাকা লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি বিভাগে ২২ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হাকিম সরকারের অবৈধ একটি নিয়োগ বোর্ডকেও সোমবারের সিন্ডিকেটে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শিক্ষক নির্বাচনী বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনী বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই স্বজনপ্রীতি ও টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ‘স্টার’ ও ‘ডাবল স্টার’ দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি ড. অরবিন্দ সাহার বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে নিয়োগ বোর্ডে চারটি শূন্য পদের বিপরীতে নয়জন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে সিন্ডিকেটে পাশের জন্য চূড়ান্ত করা হয়।

পরে স্বজনপ্রীতি ও টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বোর্ডে চূড়ান্ত প্রার্থীর বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ফলে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে পারেননি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকার।

পরবর্তীতে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৮ তম সিন্ডিকেটে বিতর্কিত সেই ৮ প্রার্থীদেরই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর অধীনে বর্তমান সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৮ শিক্ষকের মধ্যে শারমিন সুলতানা ব্যবসায় অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী আখতারের ভাগ্নী, ইসরাত জাহান ববি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর সাদাতের স্ত্রী, নাজমুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলীর জামাই।

এছাড়াও নিয়োগ পাওয়া নাজমুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক আকামুদ্দিন বিশ্বাসের ভায়রা বলে জানা যায়।

এদিকে সদ্য অনুষ্ঠিত পরিসংখ্যান, মার্কেটিং, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের নিয়োগেও স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা ও টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিসংখ্যান বিভাগে নিয়োগ পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান ওই বিভাগের সভাপতি আলতাফ হোসেন রাসেলের বন্ধু। বর্তমান সভাপতি আলতাফ হোসেন রাসেল ও একই বিশ্বিবিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন বলে জানা যায়।

২৩৮তম সিন্ডিকেটে রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগে ওবায়দুল হক, রিপনুজ্জামান, ফিরোজ আল মামুন, শিরিন আখতার বিথী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের প্রত্যেকের বাড়ি ঝিনাইদ জেলায়। এদের মধ্যে শিরিন আখতার বিথী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এইচ এম আক্তারুল ইসলামের বোন।

অর্থনীতি বিভাগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে শাহেদ আহমেদ, শারমিন আক্তার সোনিয়া, মিথিলা তানজিল, হুমায়ুন কবীর বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে শাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রোজী আহমেদ আক্তারের ভাই এবং শারমিন আক্তার সোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাসেলের স্ত্রী।

তাদের নিয়োগ দিতে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই মোটা অংকের টাকা লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নিয়োগের বিষয়টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রগতিশীল শিক্ষক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ লোক দেখানো। মেধাবীদের উপেক্ষা করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসনের নিয়োগগুলো শিক্ষকতার জন্য প্রয়োজনীয় মেধাভিত্তিক। আমরা লিখিত, মৌখিক ও অন্যান্য যোগ্যতা বিবেচনা করে নিয়োগ দিয়েছি, অন্য কোনো বিষয় বিবেচনা করা হয়নি। ’

হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের নিয়োগের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন ‘ওই বিভাগের বোর্ডের দায় দায়িত্ব তখনকার বোর্ডের সদস্যদের। তারা বলেছে বোর্ড ঠিক ছিল। বিষয়টি নিয়ে সিন্ডিকেটে মতামত চাইলে বিজ্ঞ সদস্যরা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।    

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।