ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘খালি হাতে বাড়ি যাবো না, এমপিও না পেলে আত্মাহুতি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
‘খালি হাতে বাড়ি যাবো না, এমপিও না পেলে আত্মাহুতি’ চারদিন ধরে কনকনে শীতে খোলা রাস্তা-ফুটপাতে অবস্থানরত শিক্ষকরা। ছবি: কাশেম হারুন/ বাংলানিউজ

ঢাকা: রাত সোয়া ২টা। কনকনে শীতের মাত্রাকে দ্বিগুণ করছে সামনের রাস্তা দিয়ে দ্রুত ছুটে চলা যানবাহনের তৈরি বাতাস। তীব্র এ শীতের মাঝেই কম্বল গায়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত ও রাস্তায় অবস্থান করছেন নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।

শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে গিয়ে দেখা গেছে, এমপিওভুক্তির দাবিতে খোলা আকাশের নিচে পেপারের ওপর মোটা চট বিছিয়ে শুয়ে আছেন টানা অবস্থান কর্মসূচি পালনরত শিক্ষকরা। ফুটপাতে কেউ কেউ আবার শুধু পেপার বিছিয়েই বসে আছেন।

তবে কুয়াশা ঠেকাতে মাথার ওপর পলিথিনের ছাউনি দিয়েছেন তারা।
 
নানা ব্যানার পাশে রেখে অবস্থান কর্মসূচি ‍াালনরত শিক্সকনা।                                          ছবি: কাশেম হারুন/ বাংলনিউজ সামনে ‘এমপিও চাই, এমপিও’র দাবিতে চলো চলো ঢাকা চলো, এমপিও’র দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি’- এসব ব্যানার-ফেস্টুন রাখা। শিক্ষকদের কেউ কেউ ঘুমিয়েছেন, কেউ কেউ ঘুমানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না অনেকে। কিছু শিক্ষক দাবি আদায় নিয়ে আর কিছু শিক্ষক রাত পোহালেই প্রকাশ হতে যাওয়া জেএসসি-পিইসি শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত। তবে সবার চিন্তা অভাবের সংসারে এলাকায় রেখে আসা পরিবার-পরিজনকে নিয়েও।

পলিথিনের ছাউনির বাইরে গিয়ে পায়চারিরত মাদ্রাসা শিক্ষক রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ফলের দিন নিজের বেতনের জন্য রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি। প্রত্যেক বাবা-মাই আশা করেন, সন্তান পড়ালেখা শেষ করে তাদের সহায়তা করবে। কিন্তু আমি উল্টো বাবা-মায়ের ওপর খেয়ে চলছি। যেখানে বাবা-মাকে খাবার-দাবার, ওষুধপত্র কিনে দেওয়ার কথা, সেখানে তাদের কাছ থেকে উল্টো নিচ্ছি!’

তিনি যশোর সদর উপজেলার দূর্গাপুর দাখিল মাদ্রাসার কৃষি শিক্ষক। ২০০৩ সালে সরকার মাদ্রাসাটির অনুমতি ও ২০০৭ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু গত দশ বছরেও প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়নি।  

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাশেদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, আমাদেরকে এমপিওভুক্ত করতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মন্ত্রী, আমলা ও রাজনীতিবিদ- সবাই আমাদের ডিনাই করেছেন। তারা কেউ আমাদেরকে দেওয়া কথা রাখেননি। এক মন্ত্রী অন্য মন্ত্রীকে দোষ দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেছেন। এখন আমাদের একমাত্র ভরসা প্রধানমন্ত্রী’।
 
‘আমাদের কথা যদি প্রধানমন্ত্রী না শোনেন, তবে এখানেই আত্মাহুতি দেবো’।
 
২০০৫ সালে স্বীকৃতি পাওয়া সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তালা টেকনিক্যাল কলেজের কম্পিউটার শিক্ষক বলেন, ‘সমাজে আমরা হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি। এমপিও’র চিন্তায়, টেনশনে ঘুম আসে না’।
 
‘শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যতোক্ষণ না এমপিও’র ঘোষণা দেবেন, ততোক্ষণ এ কর্মসূচি পালন করে যাবো। এখন আমরা অবস্থান কর্মসূচিতে আছি। আগামী রোববার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে আমরণ অনশন শুরু করবো। তাতেও যদি কাজ না হয়, তবে এখানেই আত্মাহুতি দেবো’।
 
তিনি বলেন, ‘হয় এমপিও দেবে, না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেবে সরকার। তারপরও আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েই বাড়িতে যাবো। খালি হাতে যাবো না’।
 
সারাদেশের মোট ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বঞ্চিত এই শিক্ষকেরা গত রোববার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও তার আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে আন্দোলন করেছেন তারা। তবে শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্যরা আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত দাবি পূরণ হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।