ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

‘মনকে জিজ্ঞেস কর, তুমি কী চাও?’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
‘মনকে জিজ্ঞেস কর, তুমি কী চাও?’ ছবি: সুমন শেখ

সেদিন কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করে বাবার কাছে গেলাম। বললাম-এটা সবার চাওয়া ছিল। আমি গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমার মন ‍অভিনয় করতে চায়। তুমি কি সেটা মেনে নেবে?

ঢাকা: সেদিন কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করে বাবার কাছে গেলামবললাম- এটা সবার চাওয়া ছিল।

আমি গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমার মন ‍অভিনয় করতে চায়। তুমি কি সেটা মেনে নেবে?

বাবা বলেছিলেন-‘তোমার যা পছন্দ, তুমি তাই কর। আমি মেনে নেব। ’

এ রকম সার্পোট আমি বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলাম। এই সমাবর্তনে উপস্থিত আমাদের অনেকেরই তেমন উ‍ৎসাহ রয়েছে। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা তার পিতা-মাতার পছন্দের ক্যারিয়ারকেই নিজের অজান্তে বেছে নিয়েছেন। অনেকেই আছেন যাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নির্ভরযোগ্য উপার্জনের পেশাকে পছন্দ করানো হয়েছে। কিন্তু নিজেকে জিজ্ঞেস কর, তুমি সেটা প্রকৃতপক্ষে চাও কিনা?

রোববার (০৫ ডিসেম্বর) বেসরকারি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সমাবর্তন বক্তা’ হিসেবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শাবানা আজমী শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

গুণী এ অভিনেত্রী বলেন, ‘সময় এসেছে নিজেকে জিজ্ঞেস করার। তুমি জীবনের কাছ থেকে কী চাও? তুমি ইন্টারনেট ঘেটে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতে পারো, কোনো কিছুর দেখা পেতে পারো, তুমি চাকরি পেতে পারো। কিন্তু তোমার মন কী চায়, এটা ইন্টারনেট ঘেটে পাবে না। তাই নিজেকে জিজ্ঞেস কর, তুমি কী চাও? আমি বলছি-তুমি যা মেনে নিয়েছো, সেখানেই শেষ নয়। এটা লিমিটেড নয়। তোমার পছন্দই তোমার ক্যারিয়ার।

শাবানা আজমী বলেন, ‘বোঝাপড়ার মানে তোমাকে বুঝতে হবে। চাকরি করে অর্থ উপার্জন মানেই সাফল্য নয়। ব্যক্তিত্বের সার্বিক উন্নয়ন থেকেই সাফল্য আসে। তুমি যদি ডাক্তার হও আমি বলব-গান গাও, ছবি আঁকো, কবিতা পড়ো ইত্যাদি। আইনজীবী, ব্যাংকার বা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হলেও একই কথা বলবো। সাফল্যের জন্য ইন্টারপারসনাল সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পরিবারকে সময় দিতে হবে। সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।

‘তর‍ুণ প্রজন্মের কাছে অনেক চাওয়ার আছে। সারা বিশ্বেই বিপ্লব এসেছে। পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনটাই তরুণ প্রজন্মের চাহিদা। তরুণদের কাছেই তাই প্রত্যাশা রয়েছে। কেননা, পরিবর্তনের জন্য তাদের শক্তি ও সক্ষমতা আছে। তাই বিশ্বের দিকে, সমাজের দিকে, সমাজের খারাপ দিকগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে’- বলেন তিনি।

শাবানা আজমী বলেন, নিজেদের দিকে তাকাও। আমাদের সমাজে গুরুত্ব পায় ছেলেরা। কারণ তারা ছেলে। আর মেয়েরা সমতা থেকে বঞ্চিত হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সমতা থেকে বঞ্চিত হয়। এটার পরিবর্তন হতে হবে। পিতাড়-মাতাকে ছেলেমেয়ে উভয়কেই সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। নিজের কাছেই নিজেদের চাহিদা ঠিক করতে হবে। যদি কেউ তার ভাই-বোনকে সমতার দৃষ্টিতে দেখে, তবে সমতাভিত্তিক সভ্যতা গড়ে ওঠবে। আজকের দিনে তোমরা যদি জেন্ডারের ক্ষেত্রে সৌজন্য আর সম্মানের দিক থেকে সমতা প্রতিষ্ঠা করো, তবেই সমতাভিত্তিক সভ্য সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠবে।

নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতেই নারী নির্যাতন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অনেক বাবা-মা আছেন যারা বৈবাহিক জীবনের অপব্যবহার মেনে নেন। মেয়ে যদি বলে স্বামী আজ মারধর করেছে, তারা বলেন এটা তেমন কিছু নয়, বিচ্ছেদ করো না। না, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তুমি কখনোই নির্যাতনকে মেনে নিতে পারো না। পিতা-মাতার উচিত, ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই সমানভাবে দরজা খোলা রাখা।

ধর্মীয় মৌলবাদের বিষয়ে আজমী বলেন, তোমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে। ধর্মীয় মৌলবাদ কখনই ধর্ম থেকে আসেন না। এটা আসে, যারা এটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে নেয়, তাদের কাছ থেকে। কোনো ধর্মই ভায়োলেন্সের শিক্ষা দেয় না এবং আমাদের অবশ্যই এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে যে, আমরা এটা গ্রহণ করবো না। তরুণরা কখনোই বলতে পারে না, আমরা এগুলোর মধ্যে নেই।

ব্যাঙকে যদি হঠা‍ৎ গরম পানিতে ছেড়ে দাও সে লাফিয়ে বের হয়ে আসবে। কিন্তু যদি অল্প গরম পানিতে ছেড়ে দাও, সে সেখানেই থাকবে। কিন্তু আস্তে-আস্তে পানি গরম করলে এক সময় সে মারা পড়বে। আমরা সে ব্যাঙ এর অবস্থায় রয়েছি, যেখানে পানি আস্তে-আস্তে গরম হচ্ছে।

অবিচার, অসমতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। এটা অন্য কারো জন্য নয়, তোমার নিজের জন্যই করতে হবে। যদি তা ন‍া কর, তবে তুমি নিজেকেই সাহায্য করছো না।

রাজধানী ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রী হলে আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ, উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তনে ২ শিক্ষার্থীকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ এবং ২৯ শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর’ স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

১ হাজার ২৮৩ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
ইইউডি/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।