ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা

শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা অনিশ্চিত

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা অনিশ্চিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ। তার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে।

চারটির মধ্যে তিনটি কোর্সের পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি)। কিন্তু সোমবার (১১ জানুয়ারি) থেকে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে মাত্র একটি দিনের জন্য আটকে যাচ্ছে তার পুরো সম্মান ডিগ্রি সম্পন্নের প্রক্রিয়া।
 
সাব্বিরের মতো দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম অসংখ্য শিক্ষার্থীর ক্লাস-পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। অন্যদিকে নতুন স্বপ্ন নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ পরিসরে পা রাখা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল বা ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বেশিরভাগ বিভাগের পরীক্ষাই এখনও শেষ হয়নি। অন্যদিকে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই শেষ করেছে তাদের প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। ক্লাস শুরুর অপেক্ষায় দিন গুণছেন নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
 
ঠিক এমন মুহূর্তে শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণায় শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী।
 
এ সময়টাকে স্পর্শকাতর বলে মানছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অনেক বিভাগের সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসও শুরু হওয়ার কথা। তাই এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে তা ক্ষতির কারণ হবে।
 
তবে নিজেদের ঘোষিত কর্মসূচির ব্যাপারে অনড় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা। তারা বলছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে শিক্ষকদের। তাই সোমবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
 
ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কর্মসূচি ঘোষণার পরও সরকারের কোনো মহল থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। এমতাবস্থায় লাগাতার কর্মবিরতি ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।
 
তিনি বলেন, গত আটমাস ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া ও আপত্তির জায়গাটা স্পষ্ট করেছি। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেই আমাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু এখন আমাদের কর্মসূচির ফলে শিক্ষার্থীরা যদি বিপাকে পড়েন তার দায় আমাদের নয়, যারা মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির তোয়াক্কা না করে পরিপত্র জারি করেছেন তাদের।
 
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আশা, শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার আগেই একটা সমাধান হবে। এজন্য শিক্ষক প্রতিনিধি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল উভয় পক্ষকেই আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনায় বসলেই এ সমস্যা মিটে যাবে বলেও আশা করেন উপাচার্য।
 
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ছয় বছরে একদিনের জন্যও অনির্ধারিতভাবে বন্ধ থাকেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত তিনি।

এ কারণে শিক্ষকদের কর্মসূচি শুরুর আগেই শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন উপাচার্য। রোববার (১০ জানুয়ারি) যেকোনো সময় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
 
অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণা হওয়ার পর থেকে গত আট মাস ধরে বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের মর্যাদা ‘অবনমনের’ প্রতিবাদ ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন এবং সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শুরুতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, বক্তব্য-বিবৃতি ও নির্দিষ্ট সময়ে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। সরকারের কোনো মহল তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করায় গত ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
 
এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিরা দেখা করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা তাদের দাবির ব্যাপারটি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি গঠিত হয়।
 
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর পে-স্কেলের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর তাতে শিক্ষকদের চার দফ দাবির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বলে অভিযোগ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
 
তাদের অভিযোগ, গত ০৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গেজেটে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
 
এ প্রেক্ষাপটে গত ০২ জানয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক করে কালোব্যাজ ধারণ, দুই ঘণ্টা কর্মবিরতিসহ ১১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫
এসএ/এমজেএফ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।