ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

স্মৃতির আয়নায় প্রিয় ‘মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়’

এম আকবর আলী, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
স্মৃতির আয়নায়  প্রিয় ‘মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়’ ছবি : রাসেল খান

‘মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়’— আমার স্কুল, আমাদের স্কুল, মিরপুরের স্কুল, বাঙালির স্কুল, বাংলা স্কুল। উর্দুভাষী বিহারি-অধ্যুষিত মিরপুরে তখনও অনাগত ‘বাংলাদেশের’ স্বপ্নবিভুর কতিপয় সাহসী বাঙালি যুবক অবাঙালিদের চ্যালেঞ্জ করেই ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এ  বাংলা স্কুল।

বর্তমান অবস্থানের পূর্বদিকে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বিহারীরা এটা দখল করে নেয় এবং তাতে বিহারী-ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ফলে স্বাধীনতার পর স্কুলটির কার্যক্রম শুর হয় মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের একটি পরিত্যক্ত তিনতলা ভবনে (যেখানে এখন বালিকা শাখা)। তখন মিরপুরে এটা ছাড়া আর কোন তিনতলা স্কুল ছিল না। তাই স্কুলের ডাকনাম হয়ে যায় ‘তিনতলা স্কুল’। ১৯৭৫ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ  স্কুল। স্কুল-বিল্ডিং-এর উচ্চতার মতোই স্কুলের সফলতার দালানটি উঁচু হতে থাকে ধীরে ধীরে। ১৯৭৮ সালে এ স্কুল থেকে প্রথম এক ছাত্র ঢাকা বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান দখল করতে সক্ষম হয়। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে পরবর্তীতেও। ২০০০ সালে এটি শ্রেষ্ঠ স্কুলের মর্যাদা পায়।

১৯৮৩ সালে স্কুলটি আবার বর্তমান অবস্থানে চলে আসে। এর আকার-আয়তন-উচ্চতা সবই বেড়েছে। কিন্তু মর্যাদার বিল্ডিং-ব্লকগুলো খসে খসে পড়ছে ক্রমশ। তবুও আমরা যারা এ স্কুলে পড়েছি, তাদের কাছে এ স্কুল আছে মহামহিমায়, শিক্ষা-আনন্দ-গৌরবের উৎসস্থল হয়ে।   

স্কুলের গণ্ডি ছেড়ে এসেছি সেই ১৯৭৮ সালে। কিন্তু মনে হয় এইতো সেদিন! ‘সে কী ভোলা যায়!’ ভোলা কি যায় ক্লাস এবং ক্লাসের বাইরের দুরন্তপনা, হেড স্যারের ডবল বেত্রাঘাত! তাতেও দমিনি কখনো। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে এখনকার ‘রূপনগরের’ পাহাড়ি ঢালু পথ-আইল বেয়ে এক দৌড়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন কিংবা চিড়িয়াখানা! তখনকার সিনেমার পাহাড়-পর্বতের অনেকদৃশ্যের শুটিং হতো এখানেই। সুতরাং ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শুটিং-দর্শন। আবার বেত্রাঘাত!! তিন তালায় উঠার সিঁড়ি ছিল। অনেকেই কষ্ট (!) করে সিঁড়ি না বেয়ে বিল্ডিংএর পিছনের পাইপ বেয়ে উঠত তিনতলায়! সুতরাং পুনঃবেত্রদণ্ড!!! শয়তানিতে সেরা, লেখাপড়ায় আরও  সেরা। What a life it was! এখনও একত্রিত হলে আমরা চলে যাই সেই সময়ে-প্রেরণা পাই বাঁচার, আশারঃ

                                             'Oh! my childhood, oh! my Early youth,
                                             Oh! my sweet days, I remember you,
                                             I live in you, I live for thee.'

মনে পড়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষকদের। অনেকেই এ নশ্বর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। পরম শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাইয়ুম, আবেদা হালিমা, কবির স্যার, আবদুল আউয়াল, সাবদার  আলী ভূইয়া, হাবিবুর রহমান, জামাল উদ্দিন, শামসুন্নাহার, নুরুন্নহার, রণজিৎ কুমার মৌলিক, তাজ উদ্দিন (মরহুম), মোস্তাফিজ (মরহুম) মাওলানা মকবুল, খান মান্নান, (ছোট) মান্নানসহ সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলির কথা মানসপটে আজও উজ্জ্বল। তাঁদের সকলেই এখন অবসরে। শিক্ষাকে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেয়া এসব নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকদের বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞায় স্কুলটি এগিয়ে গেছে আগামির প্রত্যাশা পূরণে। আজ সেই স্কুলের হাজারো ছাত্র দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে।  

আসছে ৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের সোহাগ পল্লীতে বসছে সেই প্রিয় স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীদের মিলন মেলা। এ উপলক্ষে গত ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে।

নিবন্ধনের শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারি। ফেইসবুক পেইজ: https://www.facebook.com/groups/mbhschool/। বিস্তারিত তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে এ নম্বরগুলোতে (০১৯ ১১৭ ৬০৮ ৮৩, ০১৬ ৭৮০ ০৯০ ০৩, ০১৭ ১১১ ১৭৯ ৩৫) কথা বলতে অনুরোধ করা হল।

লেখক: এম আকবর আলী, সাবেক ডিআইজি, ১৯৭৮ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।