ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দেয়াল ঘেরা হচ্ছে বিজয়’৭১

মো.আশরাফুল আলম, বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৫
দেয়াল ঘেরা হচ্ছে বিজয়’৭১ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাকৃবি: দেয়াল তুলে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য বিজয়’৭১ এর চারপাশে।

বাকৃবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা অনিন্দ্যসুন্দর এ ভাস্কর্য ঘিরে দেয়াল তোলার কাজ পুরোদমে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।



বিজয়’৭১ এর সৌন্দর্য রক্ষা ও নিরাপত্তার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারপাশে ৪ ফুট উঁচু দেয়াল তৈরির কাজ শুরু করলেও, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশের দাবি এটা প্রশাসনের অপকৌশল।

তাদের অভিযোগ,বিজয়’৭১ কে কেন্দ্রে করে ভবিষ্যতের  আন্দোলন-সংগ্রামের পথ রুদ্ধ করতেই প্রশাসনের এ তড়িঘড়ি আয়োজন।

এতে করে মূলত বিজয়’৭১ এর যে স্বাভাবিক ও প্রকৃত সৌন্দর্য তা নষ্ট হবে বলে দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অনেকেরই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, বিজয়’৭১ এর পাদদেশ প্রবেশের একটি রাস্তা থাকলেও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শর্টকাট রাস্তা তৈরি হয়েছে। এর এর ফলে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় গরু-ছাগল প্রবেশ করে বিজয়’৭১ সংলগ্ন বাগান নষ্ট করছে। তাই  দেড় ফুট উুঁচ করে ইটের দেয়ালের ওপর ২ ফুট উঁচু গ্রিলের দেয়াল দিয়ে চারপাশে বেষ্টনী দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, টানা কয়েকটি আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে বিজয়’৭১। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সায়াদ ইবনে মোমতাজ সাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে  জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা আন্দোলনের মঞ্চ হিসেবে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়’৭১ এর পাদদেশ। এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষের (লেভেল-২, সেমিস্টার-১) শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি বাতিলের আন্দোলন মঞ্চও ছিল বিজয়’৭১। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষিত হতো এখান থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় বিজয়’৭১ এর পাদদেশে।

একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীর অভিযোগ, যেকোনো আন্দোলর-সংগ্রামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জমায়েত স্থান হিসেবে বিজয়’৭১ এর নাম সবার আগে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কৌশলে সেখানে দেয়াল তুলে দিচ্ছে, যেন শিক্ষার্থীরা আর সেখানে জমায়েত হতে না পারে। অবিলম্বেই বিজয়’৭১ এর দেয়াল নির্মাণের কাজ বন্ধ করে এর প্রকৃত সৌন্দর্য বজায় রাখার দাবি জানান তারা।

অপরদিকে, প্রকৃতিকন্যা খ্যাত বাকৃবিতে বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের কাছেও প্রধান আকর্ষণ মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মারক ভাস্কর্য।

এ বিষয়ে বাকৃবির লেকচারার-অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ফোরামের সদস্য খন্দকার হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে বলেন,বিষয়টি নিয়ে আমাদের ফোরামে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। দেয়াল দিয়ে বিজয়’৭১ ঘিরে দেওয়ার ব্যাপারে সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরো বলেন,পৃথিবীর কোথাও কোনো ভাস্কর্যকে দেয়াল দিয়ে আবদ্ধ করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের কোনো স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা কর্মী আছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গরু-ছাগল আসবে কোথা থেকে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক ভবনগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, স্যাঁতস্যাতে। মানবেতর জীবন যাপন করছে ব্যাচেলর শিক্ষকরা। এছাড়াও আরও অনেক বিষয় আছে যা জরুরিভিত্তিতে মেরামত করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

কিন্তু সেই দিকে নজর না দিয়ে  কেন যে প্রশাসন বিজয়’৭১ ঘিরে দেয়াল দেওয়ার মত রুচিহীন কাজ হাতে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন কাজে আমি ফোরামের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।

তিনি অবিলম্বে দেয়াল নির্মাণ কাজ বন্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্যকে উন্মুক্ত রাখার দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রেমাংশু মজুমদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেয়াল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবদ্ধ করে রাখতে চাচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এমন নজির পাওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলনে বিজয়’৭১ এর ভূমিকা কারও অজানা নয়।

তার অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্ত চেতনাকে বন্ধ করা, আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের জমায়েত বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চৌধুরী বলেন, বিজয়’৭১ ঘিরে দেয়াল তোলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে এ কাজ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।

এ নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জহিরুল হক খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, বিজয়’৭১ এর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যেই দেয়াল দেওয়া হচ্ছে। দেয়ালটি দেড়ফুট ইটের গাঁথুনির ওপর ২ ফুট গ্রিল দেওয়া হবে। যাতে ভেতরের সৌন্দর্য বাইরে থেকে দেখা যায়। ভেতরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও থাকবে।

সম্পূর্ণ কাজটি শেষ হলে শিক্ষার্থীদের ভ্রান্ত ধারণাগুলো থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্র্য অধ্যাপক ড. রফিকুল হককে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।