খুলনা: ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের পর থেকে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কুয়েট উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের দেখা গেছে সেখানে। সকাল থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সেন্টারের সামনে অবস্থান করছেন। দুপুর ১টার মধ্যে ভিসিকে পদত্যাগ করার জন্য সময় দিয়েছেন তারা। এছাড়া গণমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। তাদের অভিযোগ, মিডিয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে জামাত-শিবির আখ্যা দিচ্ছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে। সবমিলেয়ে কুয়েট ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতি থমথমে।
কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। কুয়েটের সব গেট খোলা রয়েছে। এতে আমরা আতঙ্কে রয়েছি। যে কোনো সময় বহিরাগত প্রবেশ করতে পারে।
খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনায় কুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ও সোহেল রানাকে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদকে অবহিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে কুয়েটে এক প্রেসব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি জানায়।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েটে ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। এই পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে হত্যার চেষ্টা ও নাশকতার মামলা করতে হবে এবং জড়িত সকলকে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কুয়েটের ভেতরে ও বাইরে, কোনো প্রকার রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবে না-এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আজীবন বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে এবং হামলায় আহত সকলের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ভার কুয়েট প্রশাসন থেকে বহন করতে হবে।
এদিকে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে সময় ধারালো অস্ত্র (রামদা) হাতে অবস্থান নেওয়া দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। ’
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার তারা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করে। মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। পরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’ ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ -সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া কুয়েটের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী, ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে বেশ কয়েকজনকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
এমআরএম/এসএএইচ