ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মদিনা সনদ দেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উন্নতির সুযোগ আছে: আবুল কাসেম ফজলুল হক

ইউনিভার্সিটি করেস্পন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২৪
মদিনা সনদ দেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উন্নতির সুযোগ আছে: আবুল কাসেম ফজলুল হক

প্রাবন্ধিক ও বাংলা একাডেমির পরিচালক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, মদিনার সনদ রাসুল (সা.) এর সময়ের মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা বিবেচনায় বড় অর্জন তো বটেই, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমির সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সভাগৃহে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বৈচিত্র্যে বহুত্বে বাংলার সংস্কৃতির দ্বিতীয় পর্বে ‘ইসলামের অভেদ ভাব’ শিরোনামে আলোচনা সভাটির আয়োজন করে ‘সংস্কৃতিবাংলা’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

এতে বক্তব্য রাখেন দেওয়ানবাগ শরীফের আশেকে রসূল (সা.) জামে মসজিদের খতিব ফজলে রাব্বী মোহাম্মদ ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আহসানুল হাদী, সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও প্রকৃতি রক্ষা পরিষদের সমম্বয়ক আব্দুল করিম কিম, সুফি সাধক কাজী জাবের আহম্মেদ আল জাহাঙ্গীর, লেখক ও শিক্ষক জগলুল আসাদ, আলেম ও লেখক মনযূরুল হক, অ্যাক্টিভিস্ট তুহিন খান, আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্স সেন্টারের পরিচালক মুফতি মোহাম্মাদ মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।

এতে সভাপ্রধান হিসেবে আবুল কাসেম ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নূরুননবি শান্ত।

আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য মদিনা সনদ করলেন। আজকের দিনে মদিনা সনদ সামান্য বিষয় মনে হতে পারে। কিন্তু সেইকালে মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা বিবেচনায় এটা একটা বড় অর্জন। ওই সময়ের জন্য তো বটেই, আজকের দিনে বাংলাদেশে মদিনা সনদ দেখে এর থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে উন্নত করার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, মূল বিষয় হলো সদিচ্ছা। যদি সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে যত ভালো কথাই বলা হোক না কেন, সে কথা কার্যকরী হয় না। কিছু লোক সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে নেয়।

ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ সব সময়ই ছিল উল্লেখ করে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, হিন্দু-মুসলমানে সব সময়ই বিরোধ ছিল। সে বিরোধ নিয়েও মানুষ শান্তিতে সহাবস্থান করতো। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই বাড়তে থাকে। এক সময় এত বেশি দাঙ্গা হয়েছে যে, আমি সিরাজুল ইসলামের কথায় শুনেছি, দাঙ্গায় অন্তত এক কোটি মানুষ নিহত হয়েছে। এই সংখ্যাটা একটু বানিয়ে বলতে পারে, কিন্তু এই সংখ্যাটা উপেক্ষা করার মতো নয়।

তিনি বলেন, অনেকে এখন ইতিহাস লিখছেন, হিন্দু-মোসলমানের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের একটু ভালো করে দেখানোর জন্য। কিন্তু আমার মনে হয়, প্রকৃতপক্ষেই যা ঘটেছে, তা বলে চিন্তাভাবনাকে পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন। যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু ৩০ লক্ষ শহীদের কথা বলা কী ঠিক হয়েছে? কেউ এটি গণনা করে দেখেনি। এটি একরম ইতিহাসের বিকৃতি।

‘এটার ফলে জাতির জীবনে ভালো কিছু হয় না। এক জায়গায় মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করলে আরও বহু জায়গায় তার প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন মিথ্যা প্রতিষ্ঠা পায়। ’

আবুল কাসেম ফজলুল হক আরও বলেন, ঐক্য ও অভেদ দেখার সময় আমাদের এ জিনিসগুলোও দেখতে হবে। মানুষের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের প্রবণতা আছে, যে সংঘাত কাটিয়ে ওঠার কথা মনীষীরা বলেছেন, কিন্তু একেবারেই যায়নি। ইসলামের শুরুর পর থেকে খলিফা ওমর হত্যা ও কারবালার ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পারি, মানুষের মাঝে ধর্ম গ্রহণের পরও সহিংসতার প্রবণতা রয়েছে।

কাজী জাবের আহম্মেদ আল জাহাঙ্গীর বলেন, সমাজে একটি অভেদ হবে যখন অসাম্প্রদায়িকতা আসবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকবে। সবাই সর্বজনীনতায় বিশ্বাস করবে। ইসলামের মধ্যে দুইটা বিষয় আছে। আইন ও প্রেম। যারা প্রেমের চর্চা করে তাদের এখন পাগল বলা হয়। প্রেমের চর্চা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি ইসলামের ভেতর ও বাহির দুটো বিষয় মেনে নেই এবং পরমতষহিষ্ণু হই, তাহলে অভেদ তৈরি হবে।

আহসানুল হাদী বলেন, মতপার্থক্য নিয়েই আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে। ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত না হতে পারলে আমাদের ওপর মহাপ্রলয় ধেয়ে আসবে। আমরা পরমতকে সহ্য করতে পারলে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে না।

জগলুল আসাদ বলেন, ইসলামে এক ধরনের বহুত্বের চর্চা আছে। ইসলামে মতভিন্নতাকে খারাপভাবে দেখা হয় না। তবে দলাদলি করা খারাপ। ইসলামের জ্ঞানের শাখার সাথে আমরা পরিচিত হতে পারলে একটা সহনশীলতা তৈরি হবে।

তুহিন খান বলেন, সমাজের মধ্যে যে বহু মত, চিন্তা, আদর্শ আছে। গত ১৫ বছরে এসব মতাদর্শ চাপা পড়ে গিয়েছিল। সমাজের মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদান ছিল না। সমাজের নানা মত নিয়ে কীভাবে আমরা একটা সমঝোতা করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করতে পারছি, এটাই জুলাই অভুত্থানের বড় প্রাপ্তি।

মোহাম্মদ মূর্তাজা ইবনে সালেহী বলেন, সুফি ঘরানা আমাদের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। এখানে ভিন্ন ধর্মের মানুষরাও যায়। তারা নিজেদের মতো অর্চনা-উপাসনা করে। আমরা কখনো তাদের বাধা দেইনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, ভারতবর্ষে যারা সত্যের পতাকা উড্ডীন করেছে, তাদের মাজারগুলোতে হামলা হয়েছে। কোনো জায়গায় হামলা-মামলা ইসলাম সমর্থন করে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২৪
এমএম/
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।