ঢাকা: সৌর বিদ্যুতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন মডেল’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা উঠে আসে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার ও ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বিশেষ অতিথি এবং কমিশনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া স্বাগত বক্তব্য দেন।

ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার আওতায় সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে। কাজেই, এখন থেকেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্লিন এনার্জি এবং গ্রিন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য যুগোপযোগী একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানী নীতি-২০০৮ অনুসারে ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, যুগোপযোগী নীতিমালার অভাবে এ খাতে এক শতাংশও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়নি। অবকাঠামো তৈরিতে সোলার প্যানেল স্থাপনের পাশাপাশি এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে কি না, সংশ্লিষ্টদের এটি খতিয়ে দেখতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ সংকটে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ হতে পারে। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে কার্বন নির্গমন কমবে, ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং পরিবেশের ওপর ইতিবাচক  প্রভাব পড়বে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে।
 
অধ্যাপক আলমগীর বলেন, বাস্তবতার নিরিখে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে একদিন অনলাইনে পাঠদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। লোডশেডিং ও জ্বালানি সংকটের এই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

অধ্যাপক গোলাম সাব্বির বলেন, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। পরিবেশবান্ধব সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে সরকারের ব্যয় কম হবে, জ্বালানি সাশ্রয় হবে এবং প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটবে এবং এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হবে।

অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন মডেল’ এবং মডেলটির প্রচার বিষয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওপেক্স মডেলে রুফটপ ও গ্রাউন্ডে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা গেলে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু করা হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুতের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ এখান থেকে মেটানো সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে ক্যাবের গবেষণা সমন্বয়ক প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়া ‘পরিবেশ সুরক্ষা ও সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়নে সামাজিক আন্দোলন: প্রেক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়’, নোভেলটি এনার্জি লিমিটেডের প্রজেক্ট কনসালটেন্ট প্রকৌশলী মো. ইন্তিখাব আলম ‘সোলার পিভি সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট আন্ডার অপেক্স মডেল ফর পাবলিক ইউনিভার্সিটি’, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক তাসমিয়া বাতেন ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এনার্জি অডিট পরিচালনা’ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নুসরাত চৌধুরী ও সিহাব উদ্দিন ‘অফ-গ্রিড/অন-গ্রিড ডিসি/এসি সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট পারফরমেন্স স্টাডি’ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
এমআইএইচ/আরএইচ