ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

একসেট বই দিয়ে পড়ালেখা, জিপিএ-৫ পেল ৩ ভাইবোন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৩
একসেট বই দিয়ে পড়ালেখা, জিপিএ-৫ পেল ৩ ভাইবোন  তিন ভাইবোনকে ফুলের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ডিসি

দিনাজপুর: যমজ তিন ভাই-বোন। দুই বোনের এক ভাই।

একই শ্রেণিতে পড়ার কারণে এক সেট বই কিনেই তারা চালিয়ে নিয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। কারণ, তিনজনকে আলাদাভাবে গাইড, টেস্ট পেপার কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না তাদের বাবা।

আর তাতে তিনজনের কারো পরীক্ষা খারাপ হয়নি। তিনজনই পেয়েছেন জিপিএ-৫। মন সাফল্যে খুশি হয়ে তাদের সংবর্ধনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ওই তিন যমজ ভাইবোনের নাম - মেরি মৌমিতা মুরমু, লাসার সৌরভ মুরমু ও মারথা জেনিভিয়া মুরমু।

দিনাজপুরের বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তারা।  

ভালো ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় এ তিন যমজের একজন মেরি মৌমিতা মুরমু বলে, আমরা তিন ভাইবোন একসঙ্গে লেখাপড়া করি। স্কুল থেকে সবার জন্য আলাদা আলাদা পাঠ্য বই দেওয়া হত। এগুলো ছাড়াও যে গাইড বই, টেস্ট পেপার এগুলো দরকার হতো আমরা একসেট গাইড বই, টেস্ট পেপার, সাজেশনস কিনেছি। একসেট দিয়েই সমন্বয় করে তিনজন পড়তাম।  বাবার যে আর্থিক অবস্থা তাতে প্রত্যেক ভাই-বোনকে আলাদা আলাদা বই কিনে দেয়া সম্ভব ছিল না।  

এতে অসুবিধায় পড়েছিলে? মৌমিতা বলে, পরীক্ষার সময় অসুবিধা হয়েছে। কারণ পরীক্ষা তো একই দিনে একই সময়ে হতো। মাঝেমধ্যে গ্রামের বড় দাদা-দিদিদের পুরাতন বই নিয়ে এসে পড়েছি। এখন পরীক্ষায় আমরা জিপিএ-৫ পেয়েছি, অনেক ভালো লাগছে।  

তিন সন্তানের জিপিএ-৫ পাওয়ায় আনন্দিত তাদের বাবা-মা।  

তাদের মা সোহাগিণী হাঁসদা বলেন, ছোট থেকে তিনজনকে বড় করতে একটু অসুবিধা হতো। তারপর স্কুলে ভর্তি হলো‌। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষাতেও তারা ভালো রেজাল্ট করেছে। আমরা বাচ্চাদেরকে বলেছি তোমরা শুধু লেখাপড়ায় মনোযোগ দাও, আমরা তোমাদের পাশে আছি। কিন্তু অভাবের সংসারে তাদের সব চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ও মেয়ে দুজনেরই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা আছে।  

তিন যমজের বাবা জোহানেস মুরমু জেলার বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন।  

কথা হলে তিনি বলেন, আমার যমজ তিন ছেলে-মেয়ে পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মত তাদের বাড়তি কোনো চাহিদা নেই। আমি আমার সামান্য আয় দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ করতে চেষ্টা করেছি।  

এদিকে রোববার (৩০ জুলাই) দুপুরে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষায় এ যমজ তিন ভাইবোনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছেন। এসব সুবিধা পাওয়ায় আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এর কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যমজ তিন ভাইবোনকে আমরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আগামীকাল (সোমবার) তাদের পড়ালেখার জন্য বিরামপুর উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।  

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) দেবাশীষ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনিচুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।