ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দেড় বছর পরই জবির নতুন ভবনে ফাটল

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
দেড় বছর পরই জবির নতুন ভবনে ফাটল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৩ তলা নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পর কর্তৃপক্ষ বুঝে নেওয়ার দেড় বছরের মাথায় ফাটল ধরেছে।  

এই ভবনে ৯ টি দপ্তর ও ১৯ টি বিভাগসহ এ ভবনে রয়েছে সকল ডিন অফিস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম, শিক্ষকদের ক্যান্টিনও।

প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে প্রায় ৮ হাজারের বেশি মানুষ ভবনটিতে অবস্থান করেন।

এ ফাটলের কারণ হিসেবে নিম্নমানের নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারকে দুষছেন প্রকৌশলীরা। তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এ বিষয়ে বলছেন ভিন্ন কথা।

এ বিষয়ে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লি. (জেপি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভবন বুঝিয়ে দিয়েছি। এক বছরের বেশি হয়ে গেছে। এর ভেতরে কিছু হলে আমরা দেখতাম। আমরা আমাদের জামানতও তুলে ফেলেছি।  

এতো কম সময়ে ভবনের ফাটলের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি ওই প্রতিষ্ঠানে এখন চাকরি করি না। এ বিষয়ে আমি কথা বলতে রাজি না।

সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের ১৩ তালায় পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মঞ্জুর হোসেনের রুমের ভেতরে পিলার-বিমে দীর্ঘ ফাটল ধরেছে। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বুঝে নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ।  

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে ও এর আগে প্রকাশিত একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালে ভবনটির ছয়তলা করা হয়েছিল। এরপর সেটি ২০ তালা ভবনের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় কয়েক বছরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়। তখন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ১৩ তলা পর্যন্ত এ ভবনের সম্প্রসারণ করা যাবে। সে অনুযায়ী ওই নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ৮ বার টেন্ডার আহ্বানেও কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশই নেয়নি।  

পরে ২০১৪ সালের শেষের দিকে কাজটি পায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড' (জেপি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান ৫ বার মেয়াদ বাড়িয়ে ৮ বছরে ভবনটির সম্প্রসারিত ৬ তালার কাজ শেষ করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভবনটির নির্মাণের সময় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা নানা সময় এসব অনিয়ম হাতে নাতে ধরেছেন। একবার মেঝের ঢালাই দেওয়ার সময় পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়া দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রকৌশলী ধরে ফেলেন। বস্তা বোঝাই করে সে ইটের খোয়া সাবেক উপাচার্য মিজানুর রহমানকে দেখানো হয়। পরবর্তীতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হলেও নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। গোপনে নানা সময় নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহার হয়েছে।  

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীর সঙ্গে ফাটলের বিষয়ে তার রুমে কথা বলতে গেলে দেখা যায়, তার রুমের দেয়ালেও চিকন ফাটল। তবে সেটি প্লাস্টারের ফাটল বলে জানান তিনি। পরে ১৩ তালায় বড় ফাটল বিষয়ে জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ফাটলের বিষয়টি জানা নেই। তবে সরেজমিন করে ফাটল পেলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে আমরা বিষয়টি জানাব। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে জামানতের টাকা না দেওয়া হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

এদিকে ভবনটির সার্বক্ষণিক দেখভালে নিয়োজিত থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী সামসুল আলম বলেন, ভবনটি ২০ তলা করার কথা ছিল। কিন্তু বেজমেন্টের পরীক্ষা করে ১৩ তালা পর্যন্ত করা হয়েছে। ভবনের কাজে কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়নি। আমাদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী টিম সার্বক্ষণিক কাজ দেখেছেন। তারা তখন কোনো অভিযোগ করেননি। ফাটল ভূমিকম্পেও হতে পারে। কোনো অভিযোগ এলে আমরা বিষয়টি দেখব।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।