ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

নিয়োগ নিয়ে ফের ইবি উপাচার্যের দুটি অডিও ফাঁস

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৩
নিয়োগ নিয়ে ফের ইবি উপাচার্যের দুটি অডিও ফাঁস

ইবি: কয়েকমাস বিরতির পর ফের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠসদৃশ্য’ অডিও ফাঁস হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে 'রক সালাম’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে শুক্রবার (৯জুন) রাতে ৫৩ সেকেন্ডের ও শনিবার (১০ জুন) রাতে ৪৬ সেকেন্ডের দুইটি অডিও ভাইরাল করা হয়।

ফাঁস হওয়া দুটি অডিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত। অডিওতে নিয়োগের সাক্ষাৎকারে চাকরির প্রশ্নফাঁস, নিয়োগ অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়। তবে অডিওর অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির কথা শোনা যায়নি।

অডিও পোস্টে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ইবির মার্কেটিং ও ফাইন আর্টস বিভাগে ও তার সিন্ডিকেটের মূল হোতার পরামর্শ নিয়েই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কে এই ক্লিয়ারেন্স দাতা? প্রতিটি টেন্ডার ও নিয়োগের ক্লিয়ারেন্স দেন সেই বড় ভাই। সব অর্থ কালেকশন ও বণ্টন করে সব জায়গায় পৌঁছানোর দায়িত্ব বড় ভাইয়ের।

৫৩ সেকেন্ডের অডিওতে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘ফাইন আর্টসের ওটা করে দিতে পেরেছি। সিন্ডিকেট পর্যন্ত কাউকেই কিছু করার দরকার নেই। সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হবে। আজকে সকালে দেখলাম যে মার্কেটিংয়ের একটা ইয়ে পাঠিয়েছিলেন।

ওটা তো কালকে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আমি একটু আগে জানলে হয়তো...(অস্পষ্ট)। খুব খারাপ ছিল না, হয়তো পাঁচেটাচে ছিল। সোজা কথা, আমি আপনার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া এখানে কাউকে নিয়োগ দেব না।

৪৬ সেকেন্ডের অডিওতে শোনা যায়, ‘আমরা কিন্তু মেডিক্যালেরটা ডিসিশন নেইনি। একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছে, ওর জন্যই নেইনি। ৭ তারিখের ভেতরেই―না এ মাসের ভেতরেই আরেকটা অ্যাড (বিজ্ঞপ্তি) আছে ওইটাতে ও যেন অ্যাপ্লাই করে দেয়। একটা তো...(অস্পষ্ট) আমাকে এখানে একটা একোমোডেট করতে হবে। ’

এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েক মাসে পৃথক তিনটি ফেসবুক আইডিতে অন্তত ১০টি অডিও ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন ও ভিসির কার্যালয়ে তালা, ভিসির একান্ত সচিবকে অব্যাহতি এবং শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা ও তদন্ত করে ব্যবস্থার দাবি করেন।

এমনকি গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ অডিওগুলো প্রশাসনের ভবনের সামনে মাইকে উচ্চস্বরে বাজানো হয়।

পরবর্তীতে ১২ মার্চ অডিও ফাঁসের নেপথ্যের মানুষদের চিহ্নিত করতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে যথাশীঘ্র প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ওই কমিটির কোনো মিটিং হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য ও শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান।

তিনি বলেন, আহ্বায়ক মিটিং ডাকবেন তারপর কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো চিঠি পাইনি।

তিনি আরও বলেন, শাপলা ফোরামের সাধারণ সভায় আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানাবো। সে অনুযায়ী আমরা জানিয়েছি। তবে এখনো রেসপন্স পাইনি। উপাচার্যের অবস্থান লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি করেছিলাম সেটাও তিনি করেননি। নতুন করে যেহেতু আবার অডিও আসলো। ক্যাম্পাস খুললে আমরা সবাইকে নিয়ে আবার বসবো।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এগুলো খুবই বিব্রতকর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোটেই শুভকর নয়। এগুলোর একটা সমাধান আসা উচিত। আমরা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি ও তদন্ত চেয়েছি। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, 'এক প্রার্থীর জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতার একটি ডকুমেন্ট থাকায় আমি কোনো একজনকে বলেছিলাম আপনারা ক্লিয়ারেন্স না দিলে নিয়োগ দেব না। অংশবিশেষ ধরে ধরে এগুলা করা হচ্ছে। আমি কারো কথায় চাকরি দেই না। মেধার বাইরে আমি কিছু করি নাই, করবো না। আর টাকা পয়সা খাওয়া এসমস্ত জিনিস আমার চিন্তার বাইরে। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।