ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘পরীক্ষা ছাড়া’ নিয়োগ দিয়ে ফেঁসে গেলেন প্রধান শিক্ষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
‘পরীক্ষা ছাড়া’ নিয়োগ দিয়ে ফেঁসে গেলেন প্রধান শিক্ষক

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরে নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগ এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তিন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ চার শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।  

ঘটনাটি ঘটেছে শিবচরের ভান্ডারীকান্দি আছালত মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে।

 

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় তাদের বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকৃত শিক্ষকরা হলেন প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক হাওলাদার, সহকারী শিক্ষক যুধিষ্টির কুমার মণ্ডল, সহকারী শিক্ষক শিশির বিশ্বাস ও সহকারী শিক্ষক সুমিতা রানী বৈদ্য।

এদিকে এ ঘটনায় এরই মধ্যে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে মহামারি করোনার সময় সভাপতি অসুস্থ থাকলে তার কাছে তথ্য গোপন করে তার স্বাক্ষর নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত ১০ মে ২০১৫ সালে একটি জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে ভুয়া শাখা দেখিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেন। পরে তারা ২০২১ সালের মে মাস থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি বেতনভাতা ভোগ করে আসছেন।

এছাড়া গত ২০১৯ সালে মন্ত্রনালয়ের অডিট রিপোর্টে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনের কোনো তথ্য নেই। পরে বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতির দৃষ্টিগোচর হলে তিনি প্রধান শিক্ষকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। এসময় প্রধান শিক্ষক তাকে অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের সময় পত্রিকায় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। নিয়োগের সময় নয়জন আবেদন করেছেন বললেও কোনো দরখাস্তও পাওয়া যায়নি। নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও কর্মরত শিক্ষকদের না জানিয়ে নিয়োগ দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তাদের গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক সুমিতা রানী বলেন, হেড স্যার তখন আমাদের বলেছেন, বিধি অনুযায়ী আপনাদের নিয়োগ হবে।  

তবে নিয়োগ পরীক্ষা কোথায় এবং কবে হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি।

অপর শিক্ষক যুধিষ্টির কুমার মণ্ডল বলেন, আমার বাড়ি ফরিদপুরের কামারখালি। আসলে নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছু জানতাম না। আমার এক বড় ভাই যোগাযোগ করে দিলেন। তারপর নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র পেলাম। আমার ওই ভাইয়ের নাম সুজন। তিনি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং এমপিওর জন্য সব ব্যবস্থা করেছেন। এমপিওভুক্ত হওয়ার পরে আমি স্কুলে আসি। এ ক্ষেত্রে চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক হাওলাদার বলেন, শিক্ষক নিয়োগ যেভাবে হওয়ার হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি আমাকেসহ চারজন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে। তাছাড়া সভাপতির সঙ্গে আমার একটু খারাপ সম্পর্ক। এ কারণেই ঝামেলাটা হয়েছে। সভাপতিসহ অন্যরা আমাকে ফাঁসিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করার মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ খান বলেন, তদন্ত করে দেখা হবে যে তারা ২০১৫ সালে যোগদান করছেন, নাকি ২০২১ সালে যোগদান করেছেন। সেটা তাদের নথিপত্র দেখলেই বোঝা যাবে। অনিয়ম থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।