ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভ্যান চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাড়, জিপিএ-৫ পেল রমজান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
ভ্যান চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাড়, জিপিএ-৫ পেল রমজান রমজান আলী

ঠাকুরগাঁও: মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারায় রমজান আলী৷ তারপর থেকে ৪ সন্তানের ভরণ পোষণ জোগাতে হাড়ভাঙা খাটুনি করতেন তার মা৷ 

তীব্র অভাবের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন রমজান৷ অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাকে সহায়তার পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয়েছে রমজানকে।  

ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দেননি রমজান।

এ সময় মনোযোগ দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষার।
সফলও হয়েছেন এই সংগ্রামী শিক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ভ্যানচালক রমজান৷ 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের মীরডাঙ্গী গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে রমজান আলী। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি।  

মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.১১ পেয়েছিলেন তিনি। এবার রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন রমজান৷ 

অতি কষ্টের মাঝে এমন ফলাফলে খুশি রমজান ও তার পরিবার। খুশি তার কলেজের শিক্ষকরাসহ স্থানীয়রাও।  

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, রমজানের জীবনটা একটা সংগ্রাম। অনেক কষ্ট করে সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে, ভ্যান চালিয়ে ভাল ফলাফল করেছে। তার ফলাফলে আমরা অনেক খুশি। আমরা তার পাশে ছিলাম। আগামীতেও তার পাশে দাঁড়াব৷ সেই সঙ্গে সকলকে তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।  
 
কষ্টার্জিত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল শুনে রমজান আলী বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর পাইনি৷ মা অনেক কষ্ট করে আমাকে লালন পালন করেছেন৷ মায়ের সঙ্গে কাজ করে নিজের খরচ ও পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। তবুও পিছপা হয়নি। স্বপ্ন ছিল একদিন ভালো ফলাফল করে একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব৷ আজকে একটা মনের আশা পূরণ হলো। আমি পরীক্ষা দেওয়ার সময় যে দিনগুলোতে ফাঁকা ছিল ভ্যান চালিয়ে আয় করেছি।  

পরীক্ষা শেষ করে ঘরে বসে থাকেননি রমজান। ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে কাজ নিয়েছেন। এখনও গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত আছি৷ 

রমজান বলেন, গার্মেন্টসে বলেছিলাম আজকে আমার ছুটি লাগবে৷ ছুটি নিয়ে আজকে বাসায় ছিলাম। জিপিএ -৫ পেয়ে আমি আজ অনেক খুশি। রেজাল্ট শুনে সব কষ্ট ভুলে গেছি। আমার মা অনেক খুশি হয়েছেন।  

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে রমজান আরও বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে কোচিং করতে পারিনি৷ সে কারণে ভাবছি এক বছর পর ভর্তি হব। তারপরেও চেষ্টা করব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। ভবিষ্যতে ভালো একটি চাকরি করে পরিবারের কষ্ট লাঘব ও দেশসেবা করব৷ 

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকারনাইন বলেন, বিষয়টি যেমনিভাবে কষ্টের তেমনি অনুপ্রেরণার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।