ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জুয়েলারি শিল্প গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে: বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
জুয়েলারি শিল্প গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে: বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

ঢাকা: দেশের গার্মেন্টস শিল্পের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক জুয়েলারি শিল্পের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন দেশের শীর্ষ শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। একইসঙ্গে তিনি ‘গোল্ড ব্যাংক’ বা ‘গোল্ড এক্সচেঞ্জ’ চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির প্রেসিডেন্টের  পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের লেভেল ১৯-এ বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুসের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। সঞ্চালনা করেন বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশির আমলে প্রথম গোল্ড রিফাইনারি অনুমোদন পেয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী সৃষ্টি। টিপু মুনশির মতো একজন ব্যবসায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী না হলে কারও মাথায় আসতো না যে দেশে একটি গোল্ড রিফাইনারি দরকার। বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীরা পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত। পুরো ভারতবর্ষে বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীরা কাজ করেন। আমরা জুয়েলারি শিল্প দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যেতে পারবো।
 
তিনি বলেন, আমরা যদি শুধু চায়না ও ইউরোপে এক্সপোর্ট করি, আমাদের টাকা রাখার জায়গা থাকবে না। গার্মেন্টসের দাম কম, স্বর্ণের দাম প্রচুর। এটার ভ্যালু অ্যাডিশন প্রচুর। কিছু কিছু স্বর্ণের ভ্যালু অ্যাডিশন ৩০, ৪০ ও ৫০ শতাংশ। যেখানে আমাদের গার্মেন্টসের ভ্যালু অ্যাডিশন ৫,৭ ও ৮ শতাংশ।  
 বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার পর আপনারা রপ্তানি শুরু করেন। সবার ঘরে ঘরে ইন্ডাস্ট্রি করেন। আজকে বলতে হয়, বঙ্গবন্ধু এদেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তু আততায়ীর গুলি তাকে বাঁচতে দেয়নি বলে স্বাধীনতার সুফল তিনি এনে দিতে পারেননি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। নাহলে ৫০ বছর কেন দেরি হবে এই গোল্ড রিফাইনারি করতে। বঙ্গবন্ধু থাকলে আমাদের গোল্ড রিফাইনারি হয়তো অনেক আগেই হয়ে যেতো।  

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাজুসের প্রেসিডেন্ট যেটা বললেন, স্বর্ণের কোনো নীতিমালা ছিল না এখন নীতিমালা হয়েছে। রিফাইনারি হবে। বাংলাদেশ গর্ব করে বলতে পারবে পৃথিবীর মধ্যে আমাদেরও একটি গোল্ড রিফাইনারি আছে। ইটস এ প্রেস্টিজ। এটা শুধু রিফাইনারি কিংবা ইন্ডাস্ট্রি না। আমাদের ৩০-৪০টি ইন্ডাস্ট্রি আছে। তারপরও আমি মনে করি, গোল্ড রিফাইনারী যুগান্তকারী।
 
তিনি আরও বলেন, আমি যেখানেই কথা বলি বাণিজ্য মন্ত্রী, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করতে বলি। কারণ শেখ হাসিনা একজন। শেখ হাসিনা হাজারজন হয়নি আর হবেও না। তিনি বেঁচে থাকলে এদেশ কোথায় যাবে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সৈনিক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে বলেন, তোমরা করো আমার কাছে এমন কিছু নাই যে তোমাদের দেব না। ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে তিনি সকাল-সন্ধ্যা চিন্তা করেন। যত ভালো জিনিস আছে তিনি আমাদের করতে বলেন। আমার হয়তো বয়স হয়ে গেছে। এখন তরুণ প্রজন্ম করবে। একটা কেন এরা হয়তো দশটা রিফাইনারি করবে ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে আজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
 
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বলছে, বাংলাদেশে গোল্ড একচেঞ্জ দরকার, গোল্ড ব্যাংক দরকার। আমি নিশ্চিত বাণিজ্যমন্ত্রীসহ আপনারা (জুয়েলার্স মালিকরা) সবাই বলেন, প্রধানমন্ত্রী এক সেকেন্ডও দেরি করবেন না। হবে না কেন? সবকিছুর ব্যাংক রয়েছে, গোল্ড ব্যাংক কেন হবে না। গোল্ড একচেঞ্জ কেন হবে না। আপনারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করেন। দুনিয়ার বহু দেশ চায় না বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। একমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনদিন মাথা নত করেননি। আপনারাও নিশ্চিত থাকবেন বাঙালি স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কোনদিন মাথা নত করবেন না।
 
তিনি আরও বলেন, আমি নিজে ব্যবসায়ী। অনেক সেক্টরে ব্যবসা করি। আমি বলি, বাংলাদেশের ৯০ দশমিক ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী খুশি যে আমরা ভালো ব্যবসা করছি। আমাদের কাপড় কেনার ক্ষমতা হয়েছে, বিদেশ যাওয়ার ক্ষমতা হয়েছে। এসব কার বদৌলতে। গত ১২ বছরে কত পরিবর্তন হয়েছে আপনারা সবাই জানেন। আপনারা সবাই জিজ্ঞেস করেন আমাদের কি উন্নতি হয়েছে। এমন একজন ব্যবসায়ী বলবে না যে আমার ব্যবসা খারাপ। আজকে এত বড় দুর্যোগ। সারা দুনিয়ায় কোথাও হাসি নাই কারো। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আজকে পুরো গতিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
 
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা বলেছেন গোল্ড ব্যাংক, গোল্ড একচেঞ্জ দরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী আমার চেয়ে অনেক বেশি বোঝেন। সুতরাং তিনি যদি একবার গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জুয়েলারি খাত রপ্তানিতে গার্মেন্টসকেও ছাড়িয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী এক সেকেন্ডও দেরি করবেন না। তিনি আপনাদের বলেছেন, শুধু গোল্ড কেন, হোয়াই নট ডায়মন্ড। আজকে কেন প্রধানমন্ত্রী বলার সাহস রাখেন শুধু গোল্ড কেন করবেন, ডায়মন্ড কেন না। আমি বলবো, আপনারা ডায়মন্ডেও আসেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের প্রতি তার যে সহমর্মিতা। এটা কোনকালেই আমরা দেখতে পারিনি। সুতরাং আমরা দোয়া করি, আমরা সবাই সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে যেন ব্যবসা করতে পারি। আরও অনেক হতে পারি। ষড়যন্ত্র থাকবেই। আজকে চিন্তা করেন পূর্বাচলে যে রাস্তাটা হচ্ছে এটা এশিয়ার নয় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা হচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, লক্ষ লক্ষ লোক এই রাস্তা দেখতে আসবে। একটা সময় ছিল আমি নিজেও বলেছিলাম এই রাস্তার কী দরকার। আজকে বোঝা যাচ্ছে এই রাস্তা হলে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-জয়দেবপুর সব কত এগিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রীর যে সুদক্ষ নেতৃত্ব, এই নেতৃত্ব কেউ দিতে পারবে না। আপনারা সবাই মনে রাখবেন, শেখ হাসিনা একজনই এবং তিনি অনন্য। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

গোল্ড ব্যাংকের পরিকল্পনা আইকনিক: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

‘গোল্ড ব্যাংক’ বা ‘গোল্ড এক্সচেঞ্জ’- প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে ‘আইকনিক’ বলে উল্লেখ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।  

তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে একটা গোল্ড ব্যাংক দরকার। দারুন একটা আইকনিক চিন্তা থেকে এটা এসেছে। এটা ঠিক যে বাংলাদেশে যারা স্বর্ণকার, স্বর্ণ শিল্পী যারা, তাদের হাতের কাজ অনেক সুন্দর। এক সময় মসলিন যেমন বিখ্যাত ছিল। সেদিন সংসদে এটাও আলোচনা হয়েছে যে বাংলাদেশে যারা স্বর্ণের কাজ করে, তাদের হাত অনেক সুন্দর, যা দিয়ে আর্ন্তজাতিক বাজারেও খ্যাতি লাভ করা সম্ভব। এটাতে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। অসংখ্য হাতের কাজ করা মানুষ রয়েছে। যারা শত শত বছর ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। আমাদের ভালো একটা স্কোপ রয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হাতের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাবে। আমি বিশ্বাস করি, যোগ্যতা আর পরম্পরতা দিয়ে সফল হবো। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। কাজের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আপনাদের মুখ উজ্জ্বল হোক।

বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। তবে কাগজপত্র আমরা যে কোনোভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারি। সুদিন ফিরলেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো। বললেই তিনি রাজি হয়ে যাবেন।

গোল্ড ব্যাংক বা গোল্ড এক্সচেঞ্জ পলিসি করা হোক: বাজুস প্রেসিডেন্ট

অনুষ্ঠানে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, আমরা জুয়েলারি সেক্টরে আরও উন্নতি করতে চাই। আমি বাণিজ্যমন্ত্রী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। জুয়েলারি শিল্পে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি যৌথ মিটিং দেওয়ার অনুরোধ করছি। প্রধানমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রী থাকলে জুয়েলারি ভাইদের যত সমস্যা আছে বসে সমাধান করতে পারবো। সমস্যা শুধু একটা নয়, সমস্যা অনেকগুলো। একটা সময় মানুষ স্বর্ণ বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারতো। ১৯৮০ সাল থেকে এই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, এটার জন্য ভালো একটা পলিসি দরকার।
 
বাজুস প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করবো, বাজুসের মাধ্যমে একটি গোল্ড ব্যাংক বা গোল্ড এক্সচেঞ্জ পলিসি করা হোক। আজকে পেপার পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, স্বর্ণ চোরাচালান ও পাচার হচ্ছে। এগুলো আসলে কতটুকু সত্য। সত্যটা হয়তো আমরা আসলেই লুকিয়ে গেছি। লুকিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে পরিকল্পিত কোনো নির্দেশনা নাই আমাদের। তো নির্দেশনার জন্য একটি ইনস্টিটিউট দরকার। যেখানে ডেইলি দাম নির্ধারণ হবে। গোল্ড ব্যাংক দরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা দরকার। অর্থমন্ত্রণালয়ের সহায়তা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করলে এই সেক্টরের উন্নতি করা সম্ভব নয়।
 
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, এই সেক্টরের উন্নতির জন্য আমাদের জুয়েলারি ভাইদের কাছে আমি অনুরোধ করবো। আপনারা সবাই আস্তে আস্তে জুয়েলারি ফ্যাক্টরির দিকে নজর দেন। সবাই ট্রেডিং করেছেন, এখন ইন্ডাস্ট্রি করার সময় এসেছে। আমরা শুধু আমদানি করবো কেন, রপ্তানির দিকে যেতে হবে। আমি যখন ভারতে গেলাম, সেখানে প্রচুর বাঙালি ওয়ার্কার দেখলাম। তারা আমাকে বলল, স্যার বাংলাদেশে একটা ফ্যাক্টরি করেন। যেখানে আমরা এসে কাজ করতে পারি। কারণ কেউ বিদেশে গিয়ে কাজ করতে চায় না, যদি বাংলাদেশে এই কাজ থাকে। আমরা আশা করবো, আপনারা সবাই একটা একটা করে ইন্ডাস্ট্রি করার পরিকল্পনা করেন। আমদানির চিন্তা না করে রপ্তানি করে দেশকে সমৃদ্ধশালী করেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে শক্তিশালী করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
এসই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।