ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এ্যাননটেক্সের ঋণ আদায়ে জনতা ব্যাংকের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২২
এ্যাননটেক্সের ঋণ আদায়ে জনতা ব্যাংকের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সায়

ঢাকা: এ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ আদায়ে জনতা ব্যাংকের উদ্যোগে ইতিবাচক সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত ঋণ আদায়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কারণে অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে এই সায় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

ইতিমধ্যে ঋণ গ্রহীতা গ্রুপটি পুনঃতফসিলের জন্য প্রয়োজনীয় ডাউনপেমেন্ট জমা দিয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন এ্যাননটেক্স গ্রুপটি ব্যবসা পরিচালনা করে কয়েক হাজার পরিবারের আয়ের উৎস সচল রাখতে পারবে, অন্যদিকে জনতা ব্যাংকও বিপুল খেলাপির দায় থেকে রক্ষা পাবে। তাই এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকগণ।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণগুলো দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী থাকায় জনতা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে এবং তা পুনঃতফসিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠায়। এক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ আদায়, দুদকের ছাড়পত্র ও করোনা মহামারিতে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকা বিবেচনায় এনে কিছু শর্তরোপ করে ইতিবাচকভাবে সায় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে থেকেই ঋণ গ্রহীতা এ্যাননটেক্স ঋণগুলো পরিশোধে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আসছিল।  

সূত্রমতে, এসব কারণ ছাড়াও বৃহৎ খেলাপি ঋণের অতীত কার্যকলাপ পর্যালোচনায় নেওয়া হয়েছে। হলমার্ক গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ রেখে খেলাপি ঋণ আদায়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

বিশ্লেষকদের মতে, আইনি পদক্ষেপ নিয়েও হলমার্কের খেলাপি ঋণ আদায় এখনো সম্ভব হয়নি। তাই এ্যাননটেক্সের ঋণ আদায়ে পুনঃতফসিল সমীচীন হয়েছে বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।  

ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বাস্তবতার আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ব্যাংকের আয় বৃদ্ধি, শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস, শাখার লোকসান কভার করে বড় বড় শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। চলমান কোভিড পরিস্থিতিতে যেখানে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন; সেখানে নির্ভরশীল পরিবারগুলোর একমাত্র উপার্জনের উৎসস্থল বন্ধ না করে রপ্তানীমুখী শিল্প-কারখানা চালু রেখে ঋণ আদায়ের সিদ্ধান্ত ব্যাংক ও রপ্তানি খাতে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক পৃথক পৃথকভাবে এ্যাননটেক্স গ্রুপের কার্যকলাপ কঠোর মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।

গত মঙ্গলবার জনতা ব্যাংকের উদ্দেশ্যে ইস্যু করা একটি চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, লামিসা স্পিনিং লিমিটেড, জারা ডেনিম লিমিটেড, সিমরান কম্পোজিট লিমিটেড, গ্যালাক্সি সুয়েটার এ্যান্ড ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেডসহ এ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ১৭টি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতি ৩ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকার ঋণসমূহ পুনঃতফসিলকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডাউন পেমেন্ট বাবদ আদায়কৃত ৭১ কোটি ৬৪ লাখ সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবসমূহে জমাকরণের পর পুনঃতফসিল সুবিধাটি কার্যকর হবে।  

এ্যাননটেক্স ও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর গত প্রায় সাড়ে সাত বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ টাকারও বেশি পরিশোধ করেছে। ২০১৪ সালে এ্যাননটেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংককে ১৯২ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এরপর ২০১৫ সালে ২৩৬ কোটি, ২০১৬ সালে ২৯৬ কোটি, ২০১৭ সালে ৩৪২ কোটি ও ২০১৮ সালে ২৮৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে গ্রুপটি। ২০১৯ সালে নানা বিতর্ক সত্ত্বেও ৮৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে এননটেক্স। আর ২০২১ সালে পরিশোধ করেছে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কোভিড অতিমারিতে ইতিমধ্যে এ্যাননটেক্স গ্রুপ ৮৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। আরও ২৫ কোটি টাকা জমা দিবে বলে গ্রাহক সম্মতি জানিয়েছে। এজন্য ঋণ তদারক ও আদায়ে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করেছে। কঠোর নজরদারি ও নার্সিয়ের মাধ্যমে ঋণ আদায়ে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সতর্ক থেকে ঋণের তথ্য দফায় দফায় হালনাগাদ রাখছে।   

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চিঠিতে জানা যায়, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ না পাওয়ায়, দুদক অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছে। এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আরেকটি চিঠিতে, এ্যাননটেক্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জামানত প্রদান না করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় শত শত কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আত্মসাত সংক্রান্ত যে অভিযোগ করা হয়েছিল তা দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়নি।

এসব প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আবদুছ ছালাম আজাদ বলেন, কারখানাগুলো বন্ধ না রেখে ঋন আদায়ে সম্মতি দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধে যথেষ্ট আন্তরিক। ঋণগুলো নিয়মিত হলে ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ ও  প্রভিশন কমে প্রয়োজনীয় মুলধন সংরক্ষনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি এ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান বহাল থাকবে।  নতুন নতুন বিনিয়োগে ব্যাংকের ব্যবসাও সম্প্রসারিত হবে। ফলে ব্যাংকের কাঙ্খিত মুনাফা অর্জনে আমরা সক্ষম হব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২১
এসই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।