ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’ নীতি গ্রহণ করেছে সরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২১
‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’ নীতি গ্রহণ করেছে সরকার

ঢাকা: বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল করতে বর্তমান সরকার ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’ নীতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।  

তিনি বলেন, আগামী মাসের মধ্যে এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সার্ক ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল।

এজন্য সরকার 'ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’ নীতিতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৈশ্বিক বাজারে দেশীয় উদ্যোক্তাদের অভিগম্যতা বাড়ানো, দেশীয় পণ্যের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং তথ্য-প্রযুক্তির আদান-প্রদান বাড়ানো প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য দেবে।  

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ তিন দিনব্যাপী অনলাইন ভিত্তিক বিটুবি সম্মেলন ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে, ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ডিসিসিআই’র এ উদ্যোগ বৈশ্বিক ব্যবসায়িক সমাজে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কর্মস্পৃহা ও উদ্যোম এর বহিঃপ্রকাশ এবং এ ধরনের উদ্যোগ  দেশের অর্থনীতির উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।  

তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদের পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল ছিল এবং বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা মধ্যে সমন্বয়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সরকার গৃহীত প্রণোদনা প্যাকেজের যথাযথ বাস্তবায়ানের মাধ্যমে মহামারিতেও দেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সচল ছিল এবং বর্তমানে দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সরকারের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রধান্যের বিষয়।  

তিনি বলেন, শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কার্যকর আন্তঃযোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে এবং এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্প্রসারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি নতুন শাখা স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে। এছাড়া বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলো ঢাকা চেম্বারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।    

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ২০২১ সালে স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উত্তরণের মানদণ্ড বিচারের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২০১’ স্থানীয় ও  বৈশ্বিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, চামড়া ও কৃষিজাত পণ্য, পাট পণ্য, সিরামিক এবং জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত এবং আশা প্রকাশ করে এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের এ খাতগুলো বিনিয়োগ করবে।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিদ্যমান পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশও শিল্পখাতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। তিনি ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এ অংশগ্রহণকারী বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আজকের এ আয়োজন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে এবং একই সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়াবে বলে জানান তিনি।

ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারির কারণে তথ্য-প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং এ পরিস্থিতিতে তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা গ্রহণের জন্য আমাদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি দেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের আহ্বান জানান।  

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান বলেন, করোনা মহামারি আমাদের সবারর ব্যক্তিগত জীবন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে এবং এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সবাইকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন মনে করেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, এফসিএস, এফসিএ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ৩৪ জন দেশি-বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা এবং ১০টি দেশের প্রায় ২০০ জন উদ্যোক্তা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
    
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।