ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমেছে মোটা চালের সরবরাহ, দাম বেড়েছে চিকন-মাঝারির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
কমেছে মোটা চালের সরবরাহ, দাম বেড়েছে চিকন-মাঝারির চাল (ফাইল ছবি)

ঢাকা: পৌষের শুরুতেই বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে ঢাকার বাজারে। একদিকে মোকামে চালের ঘাটতি রয়েছে অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা চাল ধরে রাখছেন গুদামে। 

তার ওপর আটঘাঁট বেধে আমন মৌসুমের চাল সংগ্রহে নেমেছে সরকার। বাজার অপেক্ষা সরকারি খাদ্যগুদামে ভালো দর পাওয়ায় মিল মালিকদের দৌড়ঝাঁপও সেদিকে।

ফলে দেশের অন্য পাইকারি বাজারের মতো রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে মোটা চালের সরবরাহ কমেছে। ফলে মোটা চালসহ অন্য চালের দাম রয়েছে বাড়তির দিকে।
 
পাইকাররা বলছেন, ভোটের জন্য আগে-পরে মিলিয়ে প্রায় চার থেকে পাঁচদিন করে মোট ১০ থেকে ১২ দিন চাল কলগুলো বন্ধ থাকে। এটাও মিল মালিকদের দর বাড়ানোর একটি অজুহাত। তারা তাই ভোটর ১২/১৪ দিন আগেই সিন্ডিকেট করে মোটা চালের দাম বাড়িয়েছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার বাজারে মোটা চাল পাইকারিতে কেজি প্রতি ২৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন সেই দাম কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৩ টাকা। এরপরও পাইকারি বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চাল দিচ্ছেন না মিল মালিকেরা।
 
মিরপুর ১ নম্বরে শাকিল রাইস এজেন্সির মালিক নূরে আলম শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, সরকার ৩৬ টাকা দরে মোটা চাল কিনছে। ফলে আমাদের চাল দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না মিল মালিকেরা। মোটা চালের দামও বাড়তি। আমাদের চাল দিলে যে দাম পাবে সরকার আরও বেশি দামে চাল কিনছে। ফলে মিল মালিকেরা পাইকারদের বাদ দিয়ে সরকারি গুদামে চাল দিতে ব্যস্ত। সরবরাহ কম থাকায় অন্য চালের দামও কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বাড়তি।
 
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজি প্রতি দুই টাকা বেড়ে ভালো মানের মিনিকেট ৫১ থেকে ৫২, নাজিরশাইল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আঠাশ জাতের চাল ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
 
অন্যদিকে মিল মালিকেরা বলছেন, সরকার চালের পাশাপাশি আমন ধানও সংগ্রহ করছে। তাই হাট-বাজারগুলোতে হঠাৎ করেই ধানের দামও বাড়তি। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের দাম ৭৩০ টাকা। ১৫ দিন আগেও যা ছিলো ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। সরকারিভাবে ধান ও চাল কেনা শুরুর হওয়ার পর থেকেই মোটা চালের কদর বেড়েছে।
 
পোড়াদহের (কুষ্টিয়া) স্বর্ণা অটো রাইস মিলের স্বত্তাধিকারী আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার মোটা চাল কেনা শুরুর পর থেকেই ধানের দাম বাড়তি। ফলে চালের দামও বাড়তি। তবে এখন দেশে চালের কোনো সংকট নেই। এই বাড়তি দরও সাময়িক।
 
তিনি বলেন, ধানের বাজার অস্থির থাকায় আমরা প্রয়োজনীয় চাল সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছি। দেশের পাইকারি বাজারগুলোর পাশাপাশি এখন আমাদের সরকারি গুদামেও চাল দিতে হচ্ছে। দুই জায়গায় চাল দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
 
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার মোট ৬ লাখ মেট্রিক টন আমন চাল (সিদ্ধ) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩৬ টাকা দরে এ চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে সরকারি এ আমন চাল সংগ্রহ আভিযান চলবে নতুন বছরের (২০১৯) ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সংগ্রহ অভিযান সন্তোষজনক হলে পরবর্তিতে আরও ২ থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে সরকার।
 
বর্তমানে সরকারি গোডাউনে মোট ১২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম।  
 
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ) ড. অনিমা রাণী নাথ বাংলানিউজকে বলেন, ভরা মৌসুমে সরকার চাল সংগ্রহ করছে। এখন বাজারে এমন পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়। আমরা কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই ৩৬ টাকা দরে চাল কিনছি। সবার আগে আমাদের কৃষকের স্বার্থই দেখতে হবে। বাজারে মোটা চালের সরবরাহ কম এমন তথ্য আমাদের হাতে আসেনি। চালের মূল্য স্বাভাবিক আছে, পাইকারি বাজারেও ব্যালেন্স আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
এমআইএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।