ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দাম কমে স্থিতিশীল সপ্তাহের বাজারদর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৮
দাম কমে স্থিতিশীল সপ্তাহের বাজারদর মাছ-মংস ও সবিজ বাজার। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কাঁচাবাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। কেননা বাজারে ওই সময়টাতেই শীতের সবজি আসা শুরু হয়েছিলো। এছাড়া অক্টোবরের শেষের দিকে পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে দাম বেড়েছিলো ব্যাপক হারে। চলতি মাসের শুরুতে আবারও দাম কমে বাজার সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে এসেছে। মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে বাজার করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের।

শুক্রবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর-১, ১০, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বউবাজার এলাকা ঘুরে নিশ্চিত হওয়া গেছে এসব তথ্য।  

বাজারে শাক-সবজির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাম যা বাড়ার তা মাসখানেক আগেই বেড়েছে।

যখন শীতের সবজি বাজারে আসা শুরু হয়েছিলো। বর্তমানে বাজারে শাক-সবজির চালান অনেক বেশি পরিমাণ রয়েছে। বরং দিন শেষে বিক্রেতাদের অনেক সবজি বিক্রি না হয়ে নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া পাইকারি বিক্রেতাদের মতে, শাক-সবজির চালান আসতে গরম ও বর্ষাকালে অনেক নষ্ট হয়। এখন তা হচ্ছে না। আবার শীতের সবজি বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশিই থাকে।  

আবার গত মাসে তিনদিনের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দাম বেড়েছিলো ব্যাপক হারে। ধর্মঘট শেষে সে উচ্চ দাম পড়ে গেলেও শীতের সবজি আসা শুরুতে যে দাম বেড়েছিলো তা কমেনি। কিন্তু এটাকে মেনে নিয়েই ক্রেতাদের স্বস্তিতে থাকতে দেখা গেছে।

শুক্রবার প্রতিকেজি টমেটো ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতিকেজি শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শসা।  

এসব বাজারে প্রতিকেজি গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেজে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাকরোল ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

প্রতি পিস বাধাকপি ও ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এবং জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, হালকা দাম ওঠানামা আছে শাকের বাজারে। প্রতি আটি কলমি শাক, লাল শাক গত সপ্তাহে ৫ থেকে ১০ টাকায় থাকলেও এ সপ্তাহে দাম আটি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। গেল সপ্তাহে লাউ শাক ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, পালং শাক ১৫ টাকায়, পুঁই শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ সপ্তাহে এসব শাকের দাম কমেছে ৫ টাকা হারে।  

এলাকাগুলোর কেন্দ্রীয় বাজার ছাড়াও ওলিগলিতে ভ্যানে করে সবজি বিক্রির বাজারদরও একই রয়েছে। শেওড়াপাড়া এলাকায় নাজিম নামে এক ব্যক্তি বাজার করতে এসে বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে দামের হিসাব করলে আমরা আসলেই ঠকছি। সিন্ডিকেটে দাম বাড়িয়ে রেখেছে অনেক আগেই। অর্থাৎ শীতের সবজি আসার শুরুর সময় থেকে। এখন আমরা তা মেনে নিয়েই স্বস্তিতে আছি। না থাকলে মানসিক প্রশান্তি থাকবে না। তবে এখন কেনা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে শাক-সবজি খাবো তা ভাবতেই কষ্ট হতো দামের জন্য।  

এছাড়া প্রতিকেজি সিরাজ মিনিকেট ও মিনিকেট চাল ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতিকেজি মসুর ডাল (দেশি) ১০০ টাকায়, মসুর ডাল মোটা ৭০ টাকায়, মুগ ডাল ১২০ টাকায়, ভোজ্যতেল প্রতিলিটার খোলা ৯০ টাকায় ও বোতলজাত ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিকেজি আদা ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায়, রসুন ভারতীয় প্রতিপাল্লা (পাঁচ কেজি) ২৮০ টাকায় ও দেশি রসুন ২৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে পেঁয়াজ (দেশি) ৪০ টাকা, ভারতীয় ৩০ টাকা, আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

মিরপুর-১০ এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন দাম হিসাব হবে মাছ ও সবজির। মসলা, চাল-ডালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে আরও অনেক দিন। চলতি বছরের শুরুর দিকে এসব জিনিসের দাম বাড়ার একটা প্রবণতা দেখা যাবে। তাছাড়া এখন চালান অনেক ভালো। চাহিদা এসব পণ্যের খারাপ যায় না কখনো। সব মিলিয়ে বাজার স্থিতিশীল আছে।  

আবার তুলনামূলকভাবে সুবিধা হয়েছে মাছ-মাংসের বাজারে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ইলিশ মাছ ধরার নির্দিষ্ট মৌসুম থাকায় বাজারে ইলিশের যোগান ভালো। তাই দামটাও কিছুটা নাগালের মধ্যে। তবে আরও কম দাম আশা করছেন ক্রেতারা।  

বাজারে প্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জোড়া ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি ১০০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিজোড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর-১ পাইকারি বাজারে মাছ কিনতে আসা লিমন বাংলানিউজকে বলেন, সপ্তাহের মাছ একসঙ্গে ছুটির দিনে কিনতে আসি। কিন্তু ধরা খাই এখানেই। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বাজারে এলে দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কমে পাওয়া যায়। আর ইলিশের এখন চালান ও চাহিদা দু’টোই ভালো। তাই আমার মনে হয়েছে দামটা একটু কমতে পারে। কিন্তু তা হচ্ছে না।  

এসব বাজারে মাছের আকারভেদে প্রতিকেজি ট্যাংরা মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কৈ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২৭০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, নলা ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, রুই ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছের দাম গত সপ্তাহে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা হারে বেড়েছে বলে জানা গেছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সূত্রে।  

অন্যদিকে কেজিতে ১০ টাকা দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগিতে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। অপরিবর্তিত থেকে লেয়ার মুরগি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়, খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুরের বউবাজার এলাকার মুরগি বিক্রেতা রফিক বলেন, মুরগির চাহিদা কম। মানুষ মাছ কিনছে বেশি। অথচ দাম এখন অনেক কম। একই বক্তব্য পাওয়া গেছে মিরপুর-১ এলাকার পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে।  

বউবাজার এলাকায় গরুর মাংসের ক্রেতা নীলা জামান অভিযোগের সুরে বলেন, গরুর মাংসের দামটা কমে না কখনও। কোরবানি ঈদের পর ফ্রিজে যতোদিন মাংস ছিলো ততোদিন দাম কম ছিলো। এখন আবার আগের মতোই। আবার এ মাংসে কেন যেন আগের মতো স্বাদ নেই। কেন তা জানি না। তবে খুব কম মাংসই পাই যার স্বাদ ভালো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
এমএএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।