ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রপ্তানিকারক হতে চাইলে যা যা করতে হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
রপ্তানিকারক হতে চাইলে যা যা করতে হবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ভবন

ঢাকা: অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। আর সে অর্জনের প্রধানতম উপায় হলো রপ্তানি-বাণিজ্য। সরকারও তাই রপ্তানি-বাণিজ্যকে সর্বাধিক গরুত্ব দিয়ে থাকে। রপ্তানিকারক হতে চাইলে আগেই জেনে নিতে হবে কিছু প্রাথমিক তথ্য ও এ সম্বন্ধে করণীয়। 

এদিক থেকে মুসকিল আসান হিসেবে আপনি পাশে পেতে পারেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্র বা ট্রেড ইনফরমেশন সেন্টারকে(টিআইসি)। এই কেন্দ্র থেকে আপনি পাবেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য, করণী ও করণীয় বিষয়ে প্রযোজনীয় পরামর্শ।


  
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ভবনসংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা যায়, নতুন কেউ রপ্তানিকারক হতে চাইলে তাকে প্রথমেই আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে নাম নিবন্ধন করতে হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ‘রপ্তানি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করতে পারে না। সেজন্য নতুন রপ্তানিকারককে নিকটস্থ আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অফিসে গিয়ে রপ্তানি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিতে হয়।  
ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। এজন্য ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, স্বীকৃত চেম্বার/অ্যাসোসিয়েশন থেকে বৈধ মেম্বারশিপের সার্টিফিকেট, ফি জমাদানের প্রমাণ হিসেবে  ট্রেজারি চালানের মূল কপি, অংশীদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড অংশীদারি দলিলের সত্যায়িত কপি, লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়।

রপ্তানি নিবন্ধন সনদপত্র বা এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ইআরসি) পাওয়ার পর নিকটস্থ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে বিদেশি ক্রেতাদের তালিকা, নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য বিদেশের নির্দিষ্ট বাজারের সন্ধান ও ফলাফল জানা যাবে। বিদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করবেন সেসব পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, বিদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণের সুযোগও মিলবে। রপ্তানি নীতিতে প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার নানা দিকের কথাও এখান থেকে জানা যাবে।


রপ্তানি-বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য সরকার রপ্তানিকারকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। রপ্তানি থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ রপ্তানিকারক তাদের রিটেনশন কোটায় বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে পারেন। যার পরিমাণ সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে থাকে। জমাকৃত টাকা থেকে রপ্তানিকারক প্রকৃত ব্যবসায়িক ব্যয়নির্বাহ করতে পারবেন।  

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোতে (ইপিবি) একটি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল রয়েছে। এ তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদের পণ্য উৎপাদনের জন্য হ্রাসকৃত সুদে ও সহজ শর্তে ভেঞ্চার-ক্যাপিটাল (উদ্যোক্তা-বান্ধব অর্থায়ন) প্রদান করা হয়। পণ্যের উন্নয়ন ও বহুমুখিকরণের ক্ষেত্রে বিদেশি কারিগরি পরামর্শ, সেবা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়। বিদেশে বিপণন মিশন প্রেরণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণে সহায়তা করা হয়।


রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্যান্য রপ্তানিপণ্যের ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলার সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয়।  

এছাড়া রপ্তানির অর্থ সংস্থান, রপ্তানি-ঋণ, রপ্তানিশিল্পের ক্ষেত্রে বন্ড সুবিধা, রপ্তানিমুখি শিল্পের জন্য সাধারণ সুযোগসুবিধা, আকাশপথে শাক-সব্জিসহ প্ল্যান্ট, ফলমূল, ফুল ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে বিমানভাড়ার সুবিধা ও সর্বোপরি রপ্তানিকারকদের জন্য আমদানি নীতি আদেশ ২০১২-২০১৫ তে প্রদেয় সুযোগ সুবিধা, রপ্তানি বাণিজ্যে বর্জনীয় বিষয়সমূহ, রপ্তানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা (২০১৫-২০১৮) কোন কোন্ পণ্য রপ্তানি করা যাবে, সে তালিকা পেতে যোগাযোগ করতে পারেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্রে (টিআইসি)।


রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর টিআইসি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান আমলে, ১৯৬২ সালে। বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ এই শাখা ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স ও নলেজ’ হিসেবে কাজ করছে। এখানে ইন্টারনেট সুবিধাসহ কম্পিটার-সেবা পাওয়া যায়। ম্যাগাজিন, সাময়িকী ও পত্রিকা পড়ার সুবিধাও রয়েছে এখানে। বাণিজ্য-জিজ্ঞাসা বা চাহিদা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় হালফিল তথ্য এখানে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়। পণ্য ও পণ্যের দেশভিত্তিক রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের তালিকাও এখানে পাওয়া যায়।
  
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহকারি পরিচালক রাহিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, রপ্তানিকারকদের জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য সরবরাহ করে থাকে বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্র (টিআইসি)। নতুন অথবা পুরনো রপ্তানিকারক যে কেউ যেকোনো তথ্য ও সহায়তার জন্য আমাদের বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন।

ইপিবি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ টিআইসিতে যান। তাদের মধ্যে অনেকে লাইব্রেরির বই ও কম্পিউটার ব্যবহার করেন। বছরে ৭০০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিয়ে এই লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ব্যবহার করা যায়। যারা ঘন্টা হিসেবে সেবা নিতে চান তাদের প্রতি ঘন্টার জন্য ২০ টাকা ফি দিতে হয়।
 
হস্তশিল্প রপ্তানিকারক আনোয়ার হোসেন পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ৩ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে হস্ত-শিল্পপণ্য রপ্তানি করে আসছি। প্রথমে ইপিবির টিআইসি থেকে তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে কাজ শুরু করি। এখনো মাঝেমাঝে টিআইসিতে যাই নতুন তথ্য সংগ্রহ করতে। রপ্তানিকারকদের জন্য টিআইসি (বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্রটি) অনেক কাজে লাগে।

রপ্তানি-ব্যবসায় আগ্রহী রানা বড়ুয়া টিআইসিতে গিয়েছিলেন কিভাবে ব্যবসা শুরু করবেন তা জানতে।  
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি রপ্তানি ব্যবসা করতে চাই। সেজন্য ইপিবির টিআইসিতে গিয়েছিলাম। তাদের কাছ থেকে আমি বিস্তারিত জানতে পেরেছি। কোথায় কি করতে হবে এগুলো জানার জন্য সেন্টারটি ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১০ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
এমএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।