ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাইড শেয়ারিং পরিচালনায় শর্ত ভাঙলে কার্যক্রম বন্ধ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
রাইড শেয়ারিং পরিচালনায় শর্ত ভাঙলে কার্যক্রম বন্ধ

ঢাকা: পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের জন্য সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রেখে ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
 
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, রাইডিং শেয়ারের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

উবার বা বিভিন্ন এজেন্সি কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেটা আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
 
নীতিমলায় মোটরযানের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে কোনো স্পস্টতা নেই।
 
নীতিমালা খুব বড় নয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাত্র আটটি অনুচ্ছেদ। আর রয়েছে ১১টি শর্ত। রাইড শেয়ারিং পরিচালনার জন্য বিআরটিএ’র কাছ থেকে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে একটি এনলিস্টমেন্ট সনদ নিতে হবে। মোটরযানের মালিক সনদ গ্রহণ করবেন।
 
রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টিআইএন ও ভ্যাট থাকতে হবে। তবে কোম্পানি হলে প্রাইভেট-পাবলিক কোম্পানির শর্তাবলী মেনে চলতে হবে।   
 
যাত্রী চাহিদা, সড়ক নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি, রাইডিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ইত্যাদি বিআরটিএ থেকে নির্ধারণ করা হবে।
 
রাইড শেয়ারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় অফিস থাকতে হবে।
 
কোনো রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেবার সঙ্গে যুক্ত হতে বিআরটিএ থেকে নির্ধারিত সংখ্যক মোটরযান নিয়োজিত করতে হবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসি) অনুমোদিত এলাকার জন্য কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য ৫০টি, দেশের অন্য মহানগর-শহর এলাকার জন্য কমপক্ষে ২০টি বাহন বাধ্যতামূলক।
 
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় ব্যক্তিগত মোটরযান যেমন- মোটরসাইকেল, মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
 
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- নিবন্ধন সনদ, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, ইনস্যুরেন্স, এনলিস্টমেন্ট সনদ হালনাগাদ থাকতে হবে।
 
রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এনলিস্টমেন্ট সনদ প্রাপ্তির পর রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযানের মালিক ও চালকের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। যেখানে সব পক্ষের অধিকার এবং দায়-দায়িত্বের বিষয় উল্লেখ থাকবে।
 
মোটরযান মালিক বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এক মাস আগে লিখিত নোটিশ দেওয়ার মাধ্যমে চুক্তির সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারবে।
 
নির্ধারিত স্ট্যান্ড, অনুমোদিত পার্কিং স্থান ছাড়া কোনো রাইড শেয়ারিং মোটরযান যাত্রী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যেখানে সেখানে অপেক্ষমাণ থাকতে পারবে না।
 
নীতিমালার অধীন একজন মোটরযান মালিক মাত্র একটি মোটরযান রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালনার অনুমতি পাবেন।
 
ব্যক্তিগত মোটরযান নিবন্ধনের পর ন্যূনতম এক বছর অতিক্রম না হলে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় নিয়োজিত হতে পারবে না।
 
বিআরটিএ’র ওয়েব পোর্টালে রাইড শেয়ারিং প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতাধীন সব মোটরযানের তালিকা শ্রেণীবদ্ধভাবে একটি মেন্যুতে রাখতে হবে। এতে সুযোগ রাখতে হবে যাত্রীর অভিযোগ জানানোর।  
 
রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সনদ প্রদান পদ্ধতি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এনলিস্টমেন্ট সনদ ছাড়া অন্য কোনো সার্ভিস পরিচালনা করবে না।
 
রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সনদের জন্য অনলাইনে বিআরটিএ’র কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময় এনলিস্টমেন্ট ফি ১ লাখ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স, ইটিআইএন সনদ, ভ্যাট ও অন্য কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। তবে এনলিস্টমেন্ট ফি সরকার সময়ে সময়ে কম-বেশি করতে পারবে।
 
আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে এক বছরে মেয়াদে এনলিস্টমেন্ট সনদ প্রদান করবে, মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে নবায়নের আবেদন করতে হবে। নবায়ন ফি প্রতিবছর ১০ হাজার টাকা।  
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এনলিস্টমেন্ট সনদ হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে ১ হাজার টাকা দিয়ে সংগ্রহ করা যাবে।
 
রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা পরিবর্তন হলে বা এনলিস্টমেন্ট সনদ বর্ণিত বিবরণের সংশোধনীর প্রয়োজন হলে এক হাজার টাকা ফি দিয়ে সংশোধন করা যাবে।
 
রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সনদ সর্বোচ্চ তিন বছর মেয়াদে প্রদান ও মেয়াদ শেষে নবায়ন করা যাবে। প্রতিবছর রাইড শেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সনদ ফি মোটরসাইকেলের জন্য ৫শ টাকা এবং অন্য মোটরযানের জন্য ১ হাজার টাকা।
 
রাইড শেয়ারিংয়ে ভাড়ার হার ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন, ২০১০’ এর বেশি ভাড়া ধরা যাবে না, এরমধ্যে নির্ধারিত রাখতে হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
 
তবে মোটারসাইকেলের ক্ষেত্রে ভাড়ার বিষয়ে স্পস্টতা নেই নীতিমালায়। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর জবাব আমার কাছে নাই। মোটরসাইকেল ভাড়ায় যাওয়া নতুন সংযোজন, ট্যাক্সিক্যাবের নীতিমালায় নেই। তিনি বলেন, সিএনজি মোটরযানের মধ্যে আসে, তবে বাইসাইকেল আসবে না।  
 
নীতিমালা না মানলে অনলাইনে অভিযোগের সুযোগ রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শর্ত ভঙ্গ করলে কোনো রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করলে এনলিস্টমেন্ট সনদ বাতিল ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধসহ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
চালকের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বিধি-বিধান না মানলে যাত্রী বিআরটিএ’র কাছে অভিযোগ করবে এবং বিআরটিএ আপিল কর্তৃপক্ষ হয়ে কাজ করবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।