ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বন্ধ হতে বসেছে পাথর গুঁড়ো করা ৩০ কারখানা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৭
বন্ধ হতে বসেছে পাথর গুঁড়ো করা ৩০ কারখানা পাথর গুঁড়ো করার কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকরা

লালমনিরহাট: কাঁচামাল সহজলভ্য হওয়ায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় গড়ে উঠেছে পাথর গুড়ো করা বেশ কিছু ছোট বড় কারখানা। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় বেঁচে আছে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পরিবার।

বন্দর ও ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবেশী দেশ ভূটান থেকে ১৯৮৮ সাল থেকে শুল্কমুক্ত হয়ে দেশে আমদানি হচ্ছে জিপসাম স্টোন ও লাইম স্টোনসহ ১৮টি পাথরজাত পণ্য। জিপসাম ও লাইম স্টোন গুড়ো করে তৈরি হয় জিপ সার, প্রসাধনী সামগ্রীর কাঁচামাল, পোল্ট্রি ও ফিস ফিড।

ভূটানী এসব পাথর দেশে আসছে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে।

এসব পাথর গুড়ো করতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বুড়িমারীতে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ৩০টি কারখানা। প্রতিটি কারখানা প্রতিষ্ঠায় কোটি টাকার উপরে মূলধন ব্যয় করতে হয়েছে মালিকপক্ষকে। যেখানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। কাক ডাকা ভোরে শ্রমিকের ঢল নামে বুড়িমারী এলাকায়। এসব শ্রমিকের ঘামে প্রস্তুত গুড়ো পাথর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সার, প্রসাধনী সামগ্রী, পোল্ট্রি ও ফিস ফিড কারখানায় চলে যাচ্ছে।

এদিকে ভূটানের ব্যবসায়ীরা পাথর গুড়ো করার কৌশল আয়ত্ব করে তারাও গড়ে তুলেছেন এসব পাথর গুড়ো করার কারখানা। বিগত ২০১৩ সালে ভূটানের ব্যবসায়ীরা বড় পাথর না দিয়ে গুড়ো করা কাঁচামাল পাঠাতে শুরু করে। দৈনিক গড়ে প্রায় ৫০ ট্রাক কাঁচামাল আসত। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চাপে তা কমে আসে। তবে এখনও দৈনিক ৮/১০ ট্রাক ভূটানী কাঁচামাল আসছে। ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে রাজধানী ঢাকায় ৫ নভেম্বর এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ সম্মেলন হয়েছে। যেখানে দেশি কারখানা ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে কিছু অসাধু কুচক্রী মহল। মহলটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআর কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে ভূটানের গুড়ো করা কাঁচামাল আমদানির পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে বুড়িমারী শিল্প মালিক সমিতির নেতাদের দাবি।

বুড়িমারী এএম ট্রেডার্সের শ্রমিক আব্দুল জলিল, মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আগে কাজের জন্য ছুটতে হতো। এখন কারখানায় নিয়মিত কাজ করে দৈনিক প্রায় ৫/৭শ’ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছে। কারখানা বন্ধ হলে আবারো কর্মহীন হয়ে না খেয়ে মরতে হবে। দেশি কারখানা ধ্বংস না করতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহবান জানান তারা।

এসপি মিনারেল কারখানার মালিক আশিকুর রহমান পরাগ বাংলানিউজকে জানান, গুণগত মান যাচাই বাচাই করে দেশি কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলো। সেক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মানও ঠিক থাকছে। কিন্তু দেশের কারখানা ধ্বংস করে বিদেশের কম মানের কাঁচামালে প্রস্তুত পণ্যের গুণগত মান কতটা ঠিক থাকবে তা ভেবে দেখা দরকার।

এছাড়াও হাজার হাজার দেশি শ্রমিককে বেকার করে বিদেশি কাঁচামাল আমদানি করলে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বুড়িমারী শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি তাহসিন এগ্রো'র মালিক হাবিবুর রহমান পবন বাংলানিউজকে জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত কারখানা ধ্বংস করে বিদেশি কাঁচামাল আমদানি করলে দেশের অর্থনীতিতে আঘাত হানবে। বেকার হয়ে পড়বে দেশের কয়েক হাজার শ্রমিক। দেশের শিল্প কারখানা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৪ ঘণ্টা, ০২ ডিসেম্বর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।