ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের পথচলা নিয়ে শঙ্কা!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের পথচলা নিয়ে শঙ্কা!

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকিং সেবার প্রতিশ্রতি নিয়ে এবং দেশে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।

ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকিং সেবার প্রতিশ্রতি নিয়ে এবং দেশে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।

যাত্রা শুরুর সাড়ে তিন বছরের মাথায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে বিভক্তির পথে এখন ব্যাংকটি।

ব্যাংকের পরিচালকরাই একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সরকারের কাছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই তারা অভিযোগের খেলায় মেতেছেন। ফলে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলও এখন চরমে।

পরিচালকরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় ব্যাংকটির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান। বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালনার জন্য ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন এই দুই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন গর্ভনর। চিঠিতে বলা হয়েছে, এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফরাসত আলী ব্যাংকটির পাঁচজন পরিচালকের বিরুদ্ধে ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। একইভাবে বিকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আদনান ইমামের নেতৃত্বে অন্য পরিচালকরাও ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডি ও তার দলভুক্ত অন্যান্য পরিচালকদের বিরুদ্ধে আপনার কাছেই বেশ কিছু গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।

গর্ভনরের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালকেরা এভাবে অর্ন্তদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে ব্যাংকটির পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আমানতকারীরা ব্যাংকের ওপর আস্থা হারাবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, একটি নতুন ব্যাংক হিসেবে এ ধরনের পরস্পর বিরোধী অবস্থান কাম্য নয়। সার্বিক বিবেচনায় পরিচালকগণ কোন আর্থিক অনিয়মে না জড়িয়ে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যাংক পরিচালনায় মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেওয়াই সমীচীন।

ফরাসত আলীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পরিচালক এএম সাইদুর রহমান ও একেএম মোস্তাফিজুর রহমান ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (ডিওএসডি) নামক এনজিও’র নামে ব্যাংকটি থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন।

আবার উদ্যোক্তা পরিচালক মো. আদনাম ইমাম অরনিতা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের নামে বরিশালের উজিরপুরের কৃষিভিত্তিক প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকটি থেকে তিন কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নিজেই সেই ঋণের সুবিধাভোগী হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বর্ণিত ঋণ হিসাবসমূহ সরাসরি ব্যাংকের পরিচালকদের নামে না হওয়ায় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রদত্ত ঋণসমূহ ব্যাংকের পর্ষদ-পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত হওয়ায় আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে উল্লিখিত পরিচালকদের অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।

বিকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আদনান ইমামের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফরাসত আলী ও এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমান নামে-বেনামে শতশত কোটি টাকা ঋণ দিয়ে ব্যাংকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছেন। এই টাকা আদায় না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৩৫০ শতাংশ।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে নোয়াখালীর এজি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও বেগমগঞ্জ ফিড মিলস লিমিটেডকে ৪শ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন চেয়ারম্যান ও এমডি। বর্তমানে ব্যাংকের তিনজন পরিচালক এজি গ্রুপের কর্মকর্তা। বর্তমান চেয়ারম্যান ও এমডি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা না করে ঋণ খেলাপি কামরুন নাহার সাথী, কানিজ ফারজানা রশিদ ও মুনসিফ আলীকে পরিচালক নিয়োগ করেছেন।

প্রবাসীদের পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উভয়পক্ষকে সমঝোতার মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালনায় মনোনিবেশ করা উচিত বলে অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন গর্ভনর।  

প্রবাসে যাওয়া, ফিরে আসার পর তাদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি, সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং শিল্প স্থাপনে  ৮টি দেশের ১৩ জন পরিচালক এবং মোট ৫৩ জন বিনিয়োগকারী নিয়ে এই ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়।

এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক বিভক্ত হলে বিনিয়োগ ও আমানত ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। কর্মহীন হবে বহু মানুষ। সবকিছু মিলিয়ে আমরা চাই ব্যাংকটি টিকে থাকুক।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
‌এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।