ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মৌমাছি পালনে সম্ভাবনার নবদিগন্ত  

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৬
মৌমাছি পালনে সম্ভাবনার নবদিগন্ত  

বংশ পরম্পরায় মধু সংগ্রহ করতে বাদায় (বন-বাদাড়ে) যেতেন সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু এখন আর যান না। বাদা ছেড়েছেন বছর ছয়েক আগে। তাই বলে যে মৌ-মধু-মৌমাছির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, তা নয়। 

সাতক্ষীরা: বংশ পরম্পরায় মধু সংগ্রহ করতে বাদায় (বন-বাদাড়ে) যেতেন সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু এখন আর যান না।

বাদা ছেড়েছেন বছর ছয়েক আগে। তাই বলে যে মৌ-মধু-মৌমাছির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, তা নয়। আগে সুন্দরবনে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে মধু সংগ্রহ করলেও এখন বৈজ্ঞানিকভাবে মৌমাছি পালন করে তা থেকেই সংগ্রহ করেন মধু।  

শুধু সিরাজুল ইসলাম নন, সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের প্রায় পাঁচশ’ যুবক মৌমাছি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা এখন ঘুরছেন সারাদেশে। ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে পালন করছেন মৌমাছি। আর তাতেই উৎপাদন হচ্ছে অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও রপ্তানিযোগ্য মধু।  

বিসিক সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে তরুণদের ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বিসিক। এ পর্যন্ত ৪৮টি ব্যাচে শ্যামনগরের উপকূলীয় এলাকার ৪৯৩ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌমাছি পালনে ৫২ জনকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ঋণ।  

সূত্র আরও জানায়, প্রশিক্ষিতরা ২৯৫টি ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার গড়ে তুলেছেন। এসব মৌ খামার নিয়ে সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।  

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে দেওয়া হয় মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ। সিরাজুল ইসলামও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এখান থেকেই।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, তার আড়াইশ’ ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্স রয়েছে। সেগুলো এখন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। বাক্সগুলো সেখানে রাখা হয়েছে রানি মৌমাছি উৎপাদনের জন্য। রানি মৌমাছি জন্মালেই বাক্সগুলো নিয়ে যাওয়া হবে সিরাজগঞ্জে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে।  

ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে মৌমাছি পালনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি বাক্সে একটি করে রানি মৌমাছি থাকে। যার রং লাল। আকারে অন্য মাছির তুলনায় দ্বিগুণ। সন্ধ্যার পর মৌমাছিগুলো বাক্সে ফিরলে নেট দিয়ে ঢেকে যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। গাড়িতে করে নিয়ে পরের দিন সকালে বাক্সের মুখ খুলে দেওয়া হয়।  

রানি মৌমাছির গায়ে বিশেষ ধরনের ঘ্রাণ থাকে। তাই বাক্সগুলো যেখানেই নেওয়া হোক না কেন, মৌমাছিরা ছত্রভঙ্গ হয় না। আর রানি মৌমাছি জীবনকালে মাত্র একবার মিলনের জন্য বাক্স থেকে বের হয়, জানান সিরাজুল।  

তিনি বলেন, প্রতিটি মৌ বাক্সে বছরে ন্যূনতম এক মণ মধু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বরই ফুলের মধু আট হাজার, কালোজিরার মধু ১৫ হাজার, ধনিয়ার মধু ছয় হাজার ও লিচু ফুলের মধু আট হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়।  

মৌ চাষি মুন্সিগঞ্জের বাবু বাংলানিউজকে বলেন, মৌমাছি পালন অত্যন্ত লাভজনক। সারাদেশে বৈজ্ঞানিকভাবে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মধু উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে সারাদেশে সাতক্ষীরার তরুণরাই ২৯৫টি ভ্রাম্যমাণ খামারে মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন করছেন।  

তবে, প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাবে বাংলাদেশে উৎপাদিত উন্নতমানের মধু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বিসিক সাতক্ষীরা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক ফারুখী নাজনীন বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২-১৩ অর্থ-বছরে বিসিক শ্যামনগরের তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই সফল। এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।  

তিনি আরো বলেন, কয়েকটি কোম্পানি চাষিদের কাছ থেকে মধু কিনে রপ্তানি করে। এতে চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। মৌচাষিরা যাতে সরাসরি মধু রপ্তানি করতে পারে, সেজন্য সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীতে মধু রিফ্রেশনার সেন্টারের জন্য দু’টি প্লট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু শুনছি, এটি সাতক্ষীরা থেকে কেটে গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সাতক্ষীরাতেই মধু রিফ্রেশনার সেন্টার স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছি। এটা হলে মধু রপ্তানির পথে সব বাধা কেটে যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।