ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ছাগলের সফল খামারি বদরগঞ্জের মাবিয়া

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
ছাগলের সফল খামারি বদরগঞ্জের মাবিয়া  বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভাগ্য বিধাতা সর্বদাই কর্মঠ আর সাহসিদের পক্ষে থাকেন। দার্শনিকদের অমর এই বাণীকে সত্য প্রমাণ করে সফলতার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন এক সময়কার হতদরিদ্র গৃহিণী মাবিয়া খাতুন।

রংপুর: ভাগ্য বিধাতা সর্বদাই কর্মঠ আর সাহসিদের পক্ষে থাকেন। দার্শনিকদের অমর এই বাণীকে সত্য প্রমাণ করে সফলতার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন এক সময়কার হতদরিদ্র গৃহিণী মাবিয়া খাতুন।

মাবিয়া রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার মুন্সিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া। মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ভরণ-পোষণসহ সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা ক্ষুদে ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়ার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল।

এক সময় ব্যবসা যখন বন্ধের উপক্রম, ঠিক তখন সংসারের একটু স‍ুখ সমৃদ্ধি আর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করেই মাবিয়া শুরু করেন ছাগল পালন।

সম্প্রতি সরেজমিনে মুন্সিপাড়ায় গিয়ে কথা হয় মাবিয়া খাতুনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, আর্থিক অনটনের কারণে ২০০৯ সালে একটি দেশি জাতের ছাগল কিনে পালন করতে শুরু করি। পরে ওই ছাগলটি বিক্রি করে আরও কিছু টাকা দিয়ে তিনটি রামছাগল কিনি। পরবর্তীতে আরও দুইটি ছাগল কিনি। সর্বমোট পাঁচটি ছাগল পালন করতে থাকি।

কিছুদিন পর থেকে ওই সব ছাগলের বাচ্চা হয়ে এবং আরো কিছু ছাগল কিনে দিনে দিনে আমার খামার ছাগলে পূর্ণ হতে থাকে। কয়েকদিন আগেও আমার খামারে ১২৫টি ছাগল ছিল।

সেই ছাগলের পাল থেকে কয়েকটি বিক্রি করে ছয়টি বিদেশি গরু কিনেছি। এরও কয়েকদিন আগে ১৫টি ছাগল বিক্রি করে আমার স্বামীকে ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছি। বর্তমানে খামারে ৬৫টি ছাগল রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমার পাঁচটি মেয়ে, তারা সবাই লেখাপড়া করে। দুই মেয়ে বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ও একজন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। এছাড়া এক মেয়ে অর্নাসে ও ছোট মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। মূলত তাদের জন্যই আমার ছাগল ও গরু পালন শুরু।

আমার খামারের একটি ছাগল কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। গত কোরবানির ঈদে চট্টগ্রাম থেকে এক ভদ্রলোক এসে আমার খামার থেকে ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি রামছাগল কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ছাগলের খামারিরা আসেন ভাল জাতের ছাগল কেনার জন্য।
   
মাবিয়া বলেন, আমাকে সন্তানদের জন্য দুধ কিনতে হয় না। প্রতিদিন খামারের ছাগল থেকে কমপক্ষে পাঁচ কেজি দুধ পাই। ছাগল পালন শুরুর পর আমার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। সন্তানরা ঠিকমতো লেখাপড়া করছে। বসতভিটার জন্য পৌরসভায় ২৫ শতাংশ জমি কিনেছি। এছাড়াও ৩ বিঘা ধানি জমি কিনেছি।

তিনি আরও জানান, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করলে যে কেউই আমার মত স্বাবলম্বী হতে পারবে।

বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার বলেন, মাবিয়া খাতুন একজন সফল মা ও খামারি। নিজের চেষ্টায় তিনি সংসারের স্বচ্ছলতাসহ সন্তানদের লেখাপড়া নিশ্চিত করেছেন। আমার এ কলেজে তার তিন সন্তান লেখাপড়া করে। মাবিয়া খাতুনের মত মায়ের কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা প্রাণী হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শাখাওয়াৎ হোসেন জানান, মাবিয়ার ছাগলের খামার গোটা উপজেলায় একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাকে অনুসরণ করলে যে কেউ নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
এসআরআর/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।