ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন

১ টাকার উৎপাদন ব্যয় ৯৫ পয়সা!

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৬
১ টাকার উৎপাদন ব্যয় ৯৫ পয়সা!

ঢাকা: মানুষের আর্থিক প্রয়োজনের যোগান দেয় টাকা। টাকার বিনিময়ে ব্যাংকের স্বীকৃতি, সম্পত্তি হস্তান্তর, ব্যবসায়িক লেনদেন।

সব মানুষই চেষ্টা করেন সাধ্যমতো টাকা আয়ের। কিন্তু মানুষের হাতে হাতে ঘোরা এই টাকারওতো একটা উৎপাদন ব্যয় রয়েছে।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে সেই উৎপাদন ব্যয়ের একটি হিসাব বের হয়ে এসেছে। আর তাতে দেখা গেছে, মুদ্রাগুলোর মধ্যে ১ টাকার কয়েন উৎপাদনের খরচ ৯৫ পয়সা। অর্থমূল্য ও তৈরি খরচের তারতম্যে মুদ্রার এই সর্বনিম্ন এককের উৎপাদনে ব্যয় হয় সবচেয়ে বেশি। অংকের হিসেবে যা ৯৫ শতাংশ।
 
দেশে বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে ১ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ৯ ধরনের নোট ও কয়েন। সর্বনিম্ন মুদ্রা ১ টাকার ওপরে এবং সর্বোচ্চ মুদ্রা এক হাজার টাকার মাঝে রয়েছে ৫শ’, ১শ’, ৫০, ২০, ১০, ৫ ও ২ টাকার নোট। ৫ টাকা ও ২ টাকার কাগুজে মুদ্রা ও কয়েন দু’টিই রয়েছে। আর ১ টাকার কাগুজে মুদ্রা থাকলেও অনেক আগেই তা ছাপানো বন্ধ রয়েছে। তৈরি হচ্ছে কেবলই ধাতব কয়েন। আর তারই প্রতিটির উৎপাদন খরচ পড়ে যায় ৯৫ পয়সা করে।  
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২ টাকার কয়েন তৈরিতে খরচ হয় এক টাকা ২০ পয়সা। যা অর্থমূল্যের ৬০ শতাংশ। আর ৫ টাকার একটি কয়েন তৈরিতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৯৫ পয়সা। যা অর্থমূল্যের ৩৯ শতাংশ মাত্র।  
 
কেন এতো খরচ? সে প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানালো, কয়েন বা ধাতব মুদ্রাগুলো জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে মুদ্রণ করা হয়। ব্যাংকিং ভাষায় কয়েন মুদ্রণ কাজটি মিন্টিং বলে পরিচিত।  
 
এছাড়া কাগুজে মুদ্রার উৎপাদন খরচও কম। সবচেয়ে ছোট কাগুজে নোট ২ টাকার উৎপাদন খরচ দেড় টাকা, ৫ টাকার নোটের উৎপাদন খরচ প্রায় ২ টাকা,  ১০ টাকার নোটের উৎপাদন খরচ ২ টাকা ২০ পয়সা, ৫০ টাকা ও ২০ টাকার একটি নোটের উৎপাদন খরচ আড়াই টাকা। ১০০ টাকার নোটের উৎপাদন খরচ সাড়ে ৪ টাকা। ৫০০ টাকার নোটের উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ৬ টাকা। সবচেয়ে বড় ১ হাজার টাকার নোটের উৎপাদন খরচ প্রায় ৭ টাকা।
 
এসব নোট গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের টাকশাল (দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড) থেকে ছাপানো হয়। ছাপার কাগজ, কালি, রং, নিরাপত্তা সুতা ও অন্যন্য উপকরণ আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে।  
 
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রতি বছর চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত টাকার মুদ্রাগুলো উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় চারশ’ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ উৎপাদন প্রক্রিয়া তদারকি করে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নোট প্রিন্টিং ও মিন্টিং করতে খরচ হয়েছে ৩৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে বাজারে ৮৪ হাজার ৭১৭ কোটি মূল্যমানের কাগুজে নোট ও কয়েন ছাড়া হয়।
 
সূত্র জানায়, ১০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটগুলো ছাপানোর কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এক, দুই ও ৫ টাকার টাকার নোট ও ধাতব মুদ্রা সরকারি হিসেবে বের করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবহারের সময় টাকা ছেড়ে, পোড়ে কিংবা রং পরিবর্তিত হয়। ধীরে ধীরে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সব টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে জমা নিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। চাহিদা পূরণে ওই পরিমাণ টাকা ছাপাতে খরচ করতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রিন্টিং ও মিন্টিং খরচ প্রকাশ করা হয়। তবে প্রতিটি নোটের উৎপাদন খরচ আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয় না।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৬
এসই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।