ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উৎপাদন বাড়াতে ছাঁটাই করা হয় চা গাছ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
উৎপাদন বাড়াতে ছাঁটাই করা হয় চা গাছ প্রুনিং অর্থাৎ ছাঁটাই করা চা গাছ | ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: গাছ কেটে ফেললে গাছের ক্ষতি হয়! অন্তত অনেকের তা-ই ধারণা। অনেকে মনে করেন গাছ কাটা মানেই গাছের সর্বনাশ! আসলে তা নয়।

গাছ কাটা মানেই গাছের বিনাশ নয়। অন্তত চা গাছেদের বেলায়। এখানে গাছ কাটা মানে পুরোপুরি কেটে ফেলা নয়।

চা গাছগুলোর মাথা কাটলে অর্থাৎ ছাঁটাই করা হলে গাছের উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক বাড়ে। তবে প্রুনিং মানে চা গাছের পুরোপুরি মাথা ছাঁটাই নয়। অন্তত একটি মাত্র ডাল রেখে দেওয়া হয় সূর্যোলোক থেকে খাদ্য গ্রহণের জন্য।

শুধু চা গাছই কেন? অন্যান্য গাছের ডালপালাও ছাঁটাই করা হয়। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, পুরনো বা বয়স্ক গাছে ডাল-পালা ছাঁটাই করা প্রয়োজন, যাতে করে বেশি পরিমাণ আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এবং পোকা-মাকড়ের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গাছে ফল ধরা অবস্থায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাছের পরিধির দিকে যেসব ডালপালা থাকে তাদের চাইতে কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত ডালপালা কেটে ফেলা উচিত। এতে করে প্রচুর সূর্যালোক এবং আলো-বাতাস চলাচল করে থাকে।  

প্রতি বছর শীত মৌসুমে চা বাগানের চা গাছের আগা ছাঁটাই করা হয়। চা বাগানের ভাষায় একে ‘প্রুনিং’ (Pruning) বলে। বাংলায় যাকে ‘ছাঁটাই’ বলা হয়। বাণিজ্যিক চায়ের গাছে এভাবেই চলে মাথা-ছাঁটাই। প্রতি বছরের এই শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে চা বাগানগুলোতে সুনির্দিষ্ট  সেকশনের চা গাছগুলো প্রুনিংয়ের আওতায় চলে আসে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, চা গাছের স্বাস্থ্য ও উৎপাদন ক্ষমতার দিক বিচেনায় এনে এমন পদ্ধতি বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় সবগুলোতেই প্রয়োগ করা হয়। কয়েকটি পদ্ধতিতে প্রুনিং হয়। যেমন চা গাছের বয়স হিসাব করে একেকটি চা গাছের মাথা বেশি পরিমাণে ছাঁটাই, মাঝারি পরিমাণে ছাঁটাই এবং কম পরিমাণে ছাঁটাই করা হয়। এগুলো কোনোটাই গাছের ক্ষতিসাধনের জন্য নয়, বরং চা গাছের অধিকতর উপকারিতার জন্য। সম্প্রতি ভাড়াউড়া চা বাগানের সেকশনগুলোতে দেখা গেল নতুন পদ্ধতির ছাঁটাই। পুরো চা গাছ ছাঁটাই না করে প্রতিটি চা গাছে একটি করে ডাল রেখে দেওয়া হচ্ছে।


চা গাছের সবগুলো ডাল ছাঁটাই না করে একটি রেখে দেওয়া হয় গাছের খাদ্য গ্রহণের জন্য | ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

বাংলাদেশ চা সংসদ, সিলেট ভ্যালির ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং ফিনলে চা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, চা বাগানের ভাষায় প্রুনিংয়ের আরেকটি অর্থ কলম করা। এই পদ্ধতিটি হচ্ছে মাটি থেকে যে গাছগুলো ২৪ ইঞ্চি ছাঁটাই করা হয়, সে গাছগুলোতে অতিরিক্ত একটি ডাল রাখা হয়।

প্রুনিংয়ের উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, চা গাছের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রুনিং করা হয়। প্রুনিংয়ে পুরো চা গাছের আগা ছাঁটাই না করে একটি মাত্র ডাল রাখা হয়। এই ডালের ফলে চা গাছগুলো সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সূর্যোলোক থেকে তার প্রয়োজনীয় খাদ্য-পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।

বিভিন্ন কাটিং সম্পর্কে গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, প্রুনিং নানা ধরনের। যেমন- কলার প্রুনিং (গলাকাটা ছাঁটাই), মিডিয়াম প্রুনিং (মধ্যম ছাঁটাই), লাইট প্রুনিং (হালকা ছাঁটাই), লো প্রুনিং (নিচু ছাঁটাই), ক্লিন প্রুনিং (পরিষ্কার ছাঁটাই)। গাছের বয়স, মাটির উর্বরতা প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে প্রতিটি সেকশনের জন্য আলাদা আলাদা প্রুনিং নির্বাচন করা হয়।

মাসখানেক পর যখন বুশ থেকে (কাটা ডালগুলোর অংশ) কুঁড়ি আসতে শুরু করে তখন আগে থেকে রাখা বাড়তি ডালটি কেটে ফেলা হয়। তাতে এই কম বয়সী চা গাছগুলো মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তারা পরিপূর্ণভাবে নতুন পাতা গজিয়ে বড় হওয়ার সুযোগ পায়।

চা গাছে প্রুনিং মানেই হলো নবজীবন দান। এজন্য প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা, মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য উপাদান প্রভৃতি বিষয়গুলো প্রুনিং পরবর্তী সময়ে নজরে রাখতে হয় বলে জানান সিনিয়র টি প্লান্টার গোলাম মোহাম্মদ শিবলি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
বিবিবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।