ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুরোনো বৃত্তেই থাকছে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
পুরোনো বৃত্তেই থাকছে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ

ঢাকা: পুরোনো বৃত্তে থাকবে নতুন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট। শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলমান অর্থনৈতিক ধকল সামাল দিতে সরকার সংকোচনমূলক বাজেট প্রণোয়নের দিকে এগুচ্ছে। তাই এ অবস্থায় নতুন বাজেটে চলতি অর্থবছরের চেয়ে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না।

এরই মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এতে অর্থবছরটিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে যথাক্রমে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যা মোট এডিপির ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ যথাক্রমে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি ১২ লাখ ও ১৬ হাজার ২০৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। যা মোট এডিপির ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এডিপি টাকার অংকের পাশাপাশি মোট এডিপির অংশ হিসাবে কিছুটা বাড়লেও অর্থনীতিবিদরা এ বাড়ানোকে বলছেন, খুবই কম।

তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আগামী বছরে শিক্ষাখাতে ১ হাজার ৬৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বাড়ছে। যা মোট এডিপির দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর স্বাস্থ্য খাতে বাড়ছে ৪ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। যা মোট এডিপির দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দুই খাতেই আগামী অর্থবছরে এডিপি কিছুটা বাড়বে। তবে স্বাস্থ্য খাতে তুলনামূলক কিছুটা বেশি বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হচ্ছে। সরকার ভৌত অবকাঠামোরও উন্নয়ন করছে। এ অবস্থায় এসব ভৌত অবকাঠামো ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনবল তৈরির প্রয়োজন। আর এ জনবল তৈরি করবে সময়োপযোগী শিক্ষা। যার সুরক্ষা দেবে স্বাস্থ্য খাত। এ জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ দুই খাতে উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই খাতে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি হারে বরাদ্দ প্রয়োজন। পাশাপাশি চলমান অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দরকার। আমাদের শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে, আবার স্বাস্থ্য খাতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর দরকার। আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে যে পরিমাণ বাড়ছে তা নামমাত্র।

অবশ্য আগামী অর্থবছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা অন্য কোনো খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ বাজেট গত বছরের চেয়ে বেশি বড় হওয়ার সুযোগ নেই। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ঋণের চাপ সহনীয় করার জন্য অর্থনীতিকে সঞ্চয়মুখী হতে হবে। সঞ্চয়মুখী হতে হলে রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতিকে সংকোচনমুখী হতে হবে। এটা করতে হলে যেটা আমরা শুনতে পাচ্ছি গতবারের চেয়ে এবার বাজেট চার শতাংশের মতো বেশি হচ্ছে। এডিপিও গত বাজেটের তুলনায় বেশি না। সেই জায়গা থেকে সার্বিক বাজেটের আকারে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না, সেই জায়গা থেকে শিক্ষা বলেন, স্বাস্থ্য বলেন, বা অন্য কোনো খাতে বড় ধরনের বাজেট বাড়ানোর সুযোগ নেই। একইভাবে প্রত্যেকটা খাতের যে বরাদ্দ শেয়ার, সেই জায়গা থেকে এবারের বাজেটের আকার সরকারের বাড়ানোর সুযোগ নেই।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যখন অর্থনীতিতে সার্বিকভাবে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে তখন মানবসম্পদের ওপর বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। গত ১০ বছরে অবকাঠামো খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, আগামী বছরগুলোতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রাধান্য দিতে হবে। এ বাজেটে আমার মনে হয় না খুব একটা বাড়ানোর সুযোগ আছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, যে হারে জটিল রোগ বাড়ছে সেভাবে দেশে চিকিৎসার সুযোগ নেই। বিশেষ করে কিডনি রোগ, ক্যানসার, হৃদরোগের মতো জটিল রোগে মানুষ যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে সে হারে দেশে যথেষ্ট চিকিৎসা মিলছে না। আমাদের হাসপাতালগুলো সেভাবে তৈরি না। চলতি বছরে মোট দেশেজ মোট উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা। বাজেটের কত শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, আমার কাছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। সে বিবেচনায় বাজেটে যে হারে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা যথেষ্ট নয়।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টাকার অংকে প্রতিবার বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু আমি যদি জিডিপির অনুপাতে দেখি মাত্র দুই শতাংশের কিছুটা ওপরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি দেশের মানুষে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন। গত বছরগুলোর স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দও যদি লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যাবে, দুই শতাংশ বা এর কাছাকাছি রয়েছে। এর ফলে দেখা গেছে মানুষ উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না, বা চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের পাশাপাশি মানসম্পন্ন ব্যয় নিশ্চিতের তাগিদ দেন এ গবেষক। তিনি বলেন, বরাদ্দ হলো, কিন্তু সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেল না, তাহলে তো বাজেটে বরাদ্দ করেও লাভ হলো। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দের পাশাপাশি সঠিকভাবে খরচও নিশ্চিত করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
জেডএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।