ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ভারতের নির্বাচন শেষে পাটের অ্যান্টি ডাম্পিং প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়া হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৪
‘ভারতের নির্বাচন শেষে পাটের অ্যান্টি ডাম্পিং প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়া হবে’

ঢাকা: ভারতের নির্বাচন শেষ হলেই সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পাটের অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

তিনি বলেন, পাটের সুদিন ফেরাতে এবং রপ্তানি বাড়াতে নেওয়া যেকোনো উদ্যোগের পাশে থাকবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী মৌসুমে কাঁচা পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

সোমবার (১৩ মে) দুপুরে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজেএমএ চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।

প্রধান বক্তা ছিলেন বিজেএমএ সদস্য এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ।  

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি পাটের অ্যান্টি ডাম্পিং বিষয়ে। তাদের জাতীয় নির্বাচন চলছে। আগামী ১১ জুন নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে দেশটির বাজারে বাংলাদেশি পাটের অ্যান্টি ডাম্পিং প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।  

তিনি বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। একই সঙ্গে ডব্লিউটিওতে অভিযোগ করব। এ বিষয়ে আইনি মতামত রয়েছে। তাদের নির্বাচনের এ সময়ে এটিকে কেউ রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করুক, তা আমি চাই না। নির্বাচনের পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বিষয়ে আমরা সবার সঙ্গে একমত। এটি সবার আগে শুরু করা উচিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের, যেহেতু ২২-২৫ লাখ টন ধান চাল তারা সংগ্রহ করবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দিয়ে আপনারা আমাদের কাছে সুপারিশ করলে আমরা উদ্যোগ নেব।  

কাঁচা পাটের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাঁচা পাট নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন তাদের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যে, আমরা যাতে কাঁচা পাটের দাম ঠিক করে দিই। কাঁচা পাটের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া আমাদের জন্য কোনো বিষয় নয়। আপনারা চিঠি দিলে আমি সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিয়ে দেব। একইসঙ্গে পাট সড়কপথে রপ্তানি না করে জাহাজের মাধ্যমে রপ্তানি করার জন্যও চিঠি দিলে সেটিও আমি করে দেব। তাহলে রপ্তানি আয়ের সঙ্গে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং শিল্পগুলো সুরক্ষা পাবে।  

পাট দেশের অর্থনীতির প্রাণ উল্লেখ করে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, পাট মন্ত্রণালয় থেকে আমার কাছে যে কোনো ধরনের সুপারিশ করা হলে তা বাস্তবায়ন করা আমার দায়িত্ব। কিন্তু সুপারিশটা আসতে হবে। বাংলাদেশ বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল রয়েছে। সেখানে আপনারা (বিজেএমএ) অংশ নিয়ে আগামী এক বছরের জন্য পরিকল্পনা দেবেন। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব। এ ছাড়া পাট কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের তালিকায় আসবে কি না, সে বিষয়ে আমরা কাজ করবো। একইসঙ্গে ডিউটি ড্রব্যাক না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সঠিক কাগজপত্র দিন, আমি রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কথা বলব। যেহেতু এটি রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, পাটে ২ শতাংশ যে উৎসে কর ধরা হয়, সেটির কোনো ন্যায্যতা আছে বলে আমার মনে হয় না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিন। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। দুই-চারজন ঋণ খেলাপির জন্য পুরো খাতের বদনাম হয়ে যায়। ব্যাংক ও শিল্প একে অপরের পরিপূরক। এখানে ব্যবসায়ীদের সচেতন হতে হবে। অ্যাসোসিয়েশনের নজর রাখতে হবে। এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা করব।  

পণ্যের বহুমুখীকরণ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে, তৈরি পোশাক শিল্প যে ধরনের সুযোগ- সুবিধা পায়, পাট ও চামড়া শিল্পও একই ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবে। তারা কী পাচ্ছে, আপনারা কী পাচ্ছেন না, তার একটা তালিকা দিন, আমরা চেষ্টা করবো সেগুলো সমাধানের।

গবেষণার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা কলকারখানার মালিক তাদেরই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন ধরনের কাঁচামাল চান। আমাদের একাডেমিক ও শিল্পকারখানার মধ্যে একটি লিংক থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন পাট নিয়ে গবেষণা করা হয়, কীভাবে এর উৎপাদন বাড়ে ও গুণগত মান বাড়ে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উন্নত জাতের পাটের বীজ দেওয়া হয় কৃষকদের। তা পরিমাণে কম হতে পারে। পরিমাণ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করে চিঠি দিতে পারেন। একইসঙ্গে আমরা যখন এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাব, তখন যাতে পাটের যে সুযোগ-সুবিধা পাই, তা যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য ২০ থেকে ২৫টি দেশের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি করব। সেখানে আপনাদের প্রস্তাবনাগুলো দিতে পারেন। আমরা আপনাদের সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দেব।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাট আমাদের সোনালী আঁশ ছিল। রপ্তানির মাধ্যমে আমরা যেন এটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। আপনারা যতগুলো মেলায় যেতে চান, ব্যবস্থা করে দেব। তবে ব্যবসা প্রমোট করতে যাবেন, ঘুরতে নয়।  

এ সময় বিশ্বের যেকোনো বাজারসহ বিকল্প বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন আহসানুল ইসলাম টিটু।

এর আগে, দেশের পাটশিল্পের নানা সংকট তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। জুট মিলগুলোর জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার দাবিও জানানো হয়। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দেশে মানসম্মত পাটবীজের অভাব রয়েছে। সোনালী আঁশের দেশ হওয়ার পর এখন দেশের পাটশিল্প আমদানি করা বীজনির্ভর হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয় না। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশের আরোপ করা অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি রহিতকরণ, কাঁচা পাটের ওপর ২ শতাংশ উৎসকর রহিতকরণ, পাটের ভালো বীজ সরবরাহ, পাট মিলগুলোর মেশিনারি নবায়ন করার জন্য ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান তারা।

পাট কেন কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি পাবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম  পাটজাত পণ্যের প্রসারে দেশে বিদেশে রোড শো করার পরামর্শ দেন তিনি। সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাটশিল্পও একদিন তৈরি পোশাক শিল্পের মতো বিকল্প রপ্তানি আয়ের খাতে পরিণত হতে পারে বলেও আশার কথা শোনান তিনি।  

সভাপতির বক্তব্যে বিজিএমএ চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন বলেন, আমরা পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে যে পরিমাণ নগদ সহায়তা পেয়ে থাকি, তার চেয়ে বেশি ভ্যাট-ট্যাক্স হিসেবে দিতে হয়। অথচ গার্মেন্টস শিল্পে কাঁচামাল কেনা থেকে রপ্তানি পর্যন্ত কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স নেই। গার্মেন্টস শিল্প কাঁচামাল কেনার জন্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পায়। অন্যদিকে পাটশিল্পকে কাঁচামাল কেনার জন্য ১২ শতাংশ সুদে (যা চক্রবৃদ্ধি হারে ১৫ শতাংশে দাঁড়ায়) ঋণ নিতে হয়। তা ছাড়া পাটশিল্পে প্রত্যক্ষ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত কাঁচা পাট কিনলে ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। তাছাড়া উৎস করের জন্য সিভিল অডিট এসে কোটি কোটি টাকার আপত্তি দিয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করে, এভাবে প্রতি ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করলে সরকার থেকে যতই দেওয়া হোক না কেন, তাতে পাটশিল্পের উন্নতি হবে না। তাই গার্মেন্টস শিল্পের মতো পাটশিল্প খাতকে সহযোগিতা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।  

একইসঙ্গে পাট খাতের জন্য গার্মেন্টসের মতো কাঁচামাল কেনার জন্য ২ শতাংশ সরল সুদে জেএসডিএফ নামে একটি ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে হবে, যাতে মিলমালিকরা স্বল্প সুদে স্বপ্ন সময়ের জন্য ঋণ নিয়ে কাঁচা পাট কিনতে পারেন। তা ছাড়া পাটের বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতা ও ব্যাংকের চড়া সুদের কারণে ব্যাংকগুলোকে তাদের গৃহীত ঋণের প্রায় দ্বিগুণ টাকা পরিশোধ করার পরও মিলগুলো ঋণগ্রস্ত। তাই হিমায়িত খাদ্য ও চামড়া শিল্পের মতো বেসরকারি পাটশিল্প খাতের ঋণ মওকুফ করার জন্য আবেদন জানান তিনি।  

আরও উপস্থিত ছিলেন বিজেএসএ চেয়ারম্যান সেখ আফিল উদ্দিন ও সাবেক চেয়ারম্যান সেখ নাসিরউদ্দিন। জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস-চেয়ারম্যান, পরিচালক, অর্ডিনারি, অ্যাসোসিয়েটস ও কো- অ্যাসোসিয়েট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৪
জিসিজি/আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।