ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জমজমাট কৃষি মার্কেটে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩
জমজমাট কৃষি মার্কেটে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ

ঢাকা: কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্য পণ্য, কাপড়, স্বর্ণ, পাইকারি-খুচরা মুদি দোকান, জুতার দোকানসহ প্রায় সবকিছুই ছিল একটি চত্বরজুড়ে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানা ধরনের ক্রেতায় মুখরিত থাকতো রাজধানীর মোহাম্মদপুরের অন্যতম জনপ্রিয় কৃষি মার্কেট।

মাত্র একদিনের ব্যবধানেই পুরো মার্কেট এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দোকানগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রায় সবই। দিন-রাত জমজমাট থাকা মার্কেটজুড়ে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে কৃষি মার্কেটের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকেই যার যার দোকানের সামনে নির্বাক হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের দুচোখে যেন অনিশ্চয়তার ছাপ।

কেউ কেউ ভেতরের পোড়া স্তূপ সরিয়ে নিচ্ছিলেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগুনে তাদের দোকানই নয়, পুড়েছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। আচমকা বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।

তবে ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চান, সহায়তা চেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

পুড়ে যাওয়া শুভেচ্ছা জুয়েলার্সের মালিক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে যৌথ মালিকানায় চলছে শুভেচ্ছা জুয়েলার্সের। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পশ্চিম-উত্তর পাশ থেকে ৮ মাস আগে স্থানান্তর করা হয় উত্তরপূর্ব পাশের বর্ধিত অংশে। চোখের সামনে কোটি টাকার সম্পদ পুড়তে দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না।

কোটি টাকার সম্পদের পাশাপাশি দুটি কসমেটিকসের দোকান পুড়ে গেছে দুই ভাই জহিরুল ইসলাম লিটন ও জসিম উদ্দিনের। আগুন লাগার পরে দৌড়ে এসেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। সব শেষ হয়ে গেলেও পোড়া দোকান ছেড়ে যাননি তারা কেউই।  

জসিম বলেন, একটা কিচ্ছু বের করতে পারি নাই, একটা সুতাও না। এখন কি করবো, কোথায় কার কাছে যাবো! কবে দোকান ঠিক হবে, আর ঠিক হলেই আবার দোকান সাজাতে মালামাল তোলার টাকা কই পাবো। জানি না সামনের দিনগুলোতে কী হবে।

আমির হামজা বস্ত্র বিতানের মালিক মো. ফজলুল হক বলেন, লাখ দেড়েক টাকা ছিল দোকানে। ঋণ না থাকলেও বাকিতে আনা অনেক মালামাল ছিল দোকানে। পরশু দিনও ২০ হাজার টাকা জমা দিয়া বাকিতে ৪ লাখ টাকার মাল আনছি। চার লাখের চার পয়সাও তো বেচতে পারিনি, সব পুড়ে গেল।

মায়ের দোয়া বস্ত্র বিতানের মালিক আলমগীর পুড়ে ছাই হওয়া দোকানের সামনে বসে আছেন। তিনি বলেন, নিঃস্ব হয়ে গেছি, সামনে কী করবো জানি না। ক্ষতিপূরণ আদৌ কবে দেবে আবার কবে দোকান সাজাতে পারবো এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর ক্ষতিপূরণ কি ক্ষতির সমান হয়!

এদিকে, শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কৃষি মার্কেটের সামনে জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি বুথ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্তি করছেন।

ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করবো। তারপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মানবিক সহায়তা করার চেষ্টা করবো।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে প্রথমে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভোর ৩ টা ৫২ মিনিটে। পরে ধাপে ধাপে ইউনিট বেড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট।

প্রায় ৬ ঘণ্টা পর সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। তবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩
পিএম/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।