ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্বর্ণশিল্পের বিকাশে বাধা চোরাচালান ও বাড়তি শুল্ক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
স্বর্ণশিল্পের বিকাশে বাধা চোরাচালান ও বাড়তি শুল্ক জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ঢাকা কলেজ দলকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: স্বর্ণশিল্পের বিকাশের পথে প্রধান বাধা চোরাচালান ও বাড়তি শুল্ক। চোলাচালান রোধ, বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার এবং স্বর্ণশিল্প সহায়ক নীতির তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এটিএন বাংলা কার্যালয়ে আয়োজিত জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ঢাকা কলেজের দলকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। সংবর্ধনার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বে স্বর্ণের দাম একই। একই দামে স্বর্ণ অকশন হয়।  কোনো দেশে স্বর্ণ আমদানি শুল্ক বেশি হলেই স্বর্ণের চোরাকারবার হয়। এর ফলে বৈধ পথের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা চোরাকারবারিদের সাথে পেরে ওঠে না। এতে স্বর্ণশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বর্ণশিল্পকে বাচাতে শুল্কের ব্যাপারে বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, স্বর্ণের বাজার দখল করে আছে ভারত। তাদের সাথে আমরা পেরে  উঠতে পারছি না। তারা দেশে স্বর্ণের বড় মার্কেট করার পাশাপাশি দুবাইয়ে তাদের বড় মার্কেট। সেখানে ট্যাক্স কম। এখন পর্যন্ত আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের এখানে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বর্ণশিল্প এখন সমস্যায় জর্জরিত। একটু ধাক্কাতে এ শিল্প সংকটে পড়ে, অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যায়, কারিগররা বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ শিল্পে সংকট আরও বাড়বে। এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। শুল্ক কমানোতে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ বাড়তি শুল্ক দিয়ে প্রতিযোগী দেশের সাথে ব্যবসা করা সম্ভব নয়।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আমাদের যে বিপুল ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড রয়েছে, তা কতটা কাজে লাগাতে পারছি প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু সুনাগরিক করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিতার্কিক যে ভূমিকা পালন করে, আমার তা কাজে লাগাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা কলেজের বিতার্কিকরা জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ভূমিকা বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নওয়াজিশ আলি খান বলেন, যারা বিতর্ক করেন তারা অনেক পড়াশোনা করেন, তারা যুক্তি দিয়ে কথা বলেন। যারা বিতর্ক করে তারা সবাই সমাজের উচু পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন।



সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বর্তমানে দেশে গোল্ড জুয়েলারির বাজার প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। আমরা যদি জুয়েলারি শিল্পের দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারি তাহলে মোট জিডিপি ১ থেকে দেড় শতাংশ বৃদ্ধি সম্ভব।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দক্ষ কারিগররা অত্যন্ত সুদক্ষভাবে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক গহনা প্রস্তুত করছেন। এসব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার জন্য এসব গহনার কারিগররা ভালো কাজের সুযোগ ও পরিবেশ না পেয়ে ভারত ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশে যেমন মসলিন শাড়ির কারিগরদের বিলুপ্তি ঘটেছে, তেমনি জুয়েলারি শিল্পের কারিগররাও তাদের পেশা পরিবর্তন করে ফেলার শঙ্কা রয়েছে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আরও বলেন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) বর্তমান সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে সকল ছোট বড় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আনার যে প্রচেষ্টা, তা নিশ্চয়ই এই শিল্পের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে গোল্ড রিফাইনারি। একই সাথে দেশে প্রথমবারের মতো স্থাপিত হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের জুয়েলারি পার্ক। যার মাধ্যমে মেড ইন বাংলাদেশ লেখা সোনার বার বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। দাবিগুলো হলো—
১) সোনা, সোনার অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা।

২) সোনার অলংকার রপ্তানি ও দেশীয় চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে অলংকার প্রস্তুত করার কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ওপর বিশেষ শুল্ক ছাড় দেওয়াসহ অন্তত ৫ বছরের জন্য কর অবকাশ প্রদান করতে হবে।

৩) গ্রাহকদের আস্থা তৈরিতে নিম্নমানের অলংকার, জুয়েলারি পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৪) আইন প্রয়োগকারী যে সংস্থার মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালান ধরতে পারছে, তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বাজার মূল্যের ১০ শতাংশ পুরস্কার হিসেবে প্রদানের সুপারিশ।

৫) সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অনিবন্ধিত জুয়েলারি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে বাজুসের সদস্যপদ না দেওয়া এবং নিবন্ধিত সকল প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) যত দ্রুত সম্ভব বিতরণ করতে হবে।

(৬) বাংলাদেশকে স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্থল ও বিমানবন্দরকে সতর্ক থাকতে হবে।

৭) স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নামের তালিকা প্রকাশ করে দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৮) স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার করতে হবে।

(৯) জুয়েলারি শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশেষ ইকোনামিক জোন গঠন করতে হবে।

১০) জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দিতে হবে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায় ও ঢাকা কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের চিফ মডারেটর অধ্যাপক ড. আবু সৈয়দ মো. আজিজুল ইসলাম ও এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান ও সম্প্রচার বিভাগের উপদেষ্টা আশিক আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
জেডেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।