ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোড়াদহ মেলায় দৃষ্টিনন্দন ‘মাছ মিষ্টি’

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
পোড়াদহ মেলায় দৃষ্টিনন্দন ‘মাছ মিষ্টি’

বগুড়া: বাঙালি জীবনের সঙ্গে মেলার যোগ দীর্ঘকালের। মেলার কথা শুনলেই মনে জাগে এক ধরনের উচ্ছ্বাস।

বগুড়ায় প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ মেলা’। ‘পোড়াদহ’ মেলা একধাপ যেন বাড়িয়ে দেয় আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। এ মেলাকে ঘিরে নিমন্ত্রণ জানানো হয়  জামাই-বউ ও স্বজনদের। নিমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে নতুন-পুরনো বিবেচনা করা হয় না। কারণ, এ মেলা শত শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে সবাই মেতে ওঠেন বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলা মাছের জন্য বিখ্যাত। ভোর থেকে দিনব্যাপী মেলার বেশিরভাগ জুড়ে স্থান পায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এ মেলায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে মুখে বড় বড় মাছের নাম শোনা যায়। মেলায় সেই মাছকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হয় বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী। নাম দেওয়া হয় ‘মাছ মিষ্টি’। বাতাসে ঘ্রাণ ছড়ায় এসব মিষ্টির। মাছের পাশাপাশি এসব মিষ্টান্ন সামগ্রী বিক্রিতেও বেশ সুনাম রয়েছে এ মেলার। পোড়াদহ মেলায় মাছ মিষ্টি এক ভিন্ন আকর্ষণ।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় মিষ্টিপট্টিতে আসা জামাই, স্বজনদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে।

পোড়াদহ মেলায় নিমন্ত্রণে আসা জামাই বাবুরা শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে সাধ্যানুযায়ী পান মোটা অঙ্কের সেলামি। সঙ্গে যুক্ত হয় নিজের টাকা। এসব টাকায় চলে কেনাকাটার ধুম। তবে কেনাকাটার তালিকায় মাছের পর স্থান পায় মিষ্টান্নসামগ্রী। এর মধ্যে প্রাধান্য পায় মাছের আদলে তৈরি করা ‘মাছ’ মিষ্টি।

মেলায় ছোট-মাঝারি ও বড় আকারের ‘মাছ’ মিষ্টি, লাভ মিষ্টি, কদম মিষ্টি, চমচম, হাসিখুশি, কালোজাম, স্পঞ্জ মিষ্টি, ছানার জিলাপী, জিলাপী, লাড্ডুসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্নসামগ্রী রয়েছে মেলার দোকানগুলোতে। এর মধ্যে বড় আকারের মিষ্টি ২৪০ টাকা কেজি, মাঝারি আকারের মিষ্টি ২০০ টাকা কেজি, ছোট আকারের মিষ্টি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মিষ্টি কিনতে আসা নতুন জামাই শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান এলাকায় বিয়ে করেছেন তিনি। মেলা উপলক্ষে তিনি দু’দিন আগে নিজ বাড়ি সদর উপজেলার সুত্রাপুর থেকে শ্বশুরবাড়ি এনেছেন। সঙ্গে এনেছেন ছোট ভাই ও বোনকে। এলাকার নিয়ম অনুযায়ী জামাইদের মাছ ও মিষ্টান্ন কিনতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সকালে মেলায় এসে ঘুরে ঘুরে সাড়ে ১১ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছও কিনেছেন তিনি। মাছের দাম পড়েছে নয় হাজার টাকা।

তিনি বলেন, মাছের সঙ্গে মিল রেখে সাত কেজি ওজনের একটি ‘মাছ’ মিষ্টি কিনেছেন দুই হাজার ১০০ টাকায়। মাছ ও মিষ্টি নিয়ে শ্বশুরালয়ে যাবেন তিনি। শ্বশুরবাড়িতে সেই মাছ রান্না হবে। মাছ ও মিষ্টিতে চলবে আনন্দ আর উল্লাস। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) একই স্থানে বসবে বৌ মেলা। এদিন স্ত্রী-বোনসহ বাড়ির অন্যান্য মেয়েরা কেনাকাটা করতে আসার পরদিন নিজ বাড়িতে ফিরবেন বলেও জানান তিনি।

মেলায় ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি এনেছেন চৈতালি ঘোষ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়নে তার বসবাস। প্রতি বছর মেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির মিষ্টি নিয়ে আসেন। এ বছর বড় আকৃতির মধ্যে ১০ কেজি ওজনের মাছ মিষ্টি এনেছেন। এ মিষ্টির দাম হাঁকানো হয়েছে সাড়ে আট হাজার টাকা। এছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, তিন কেজি, চার কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে ও দামে। তার দোকানে প্রায় ৮০ মণ মিষ্টি রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরেক মিষ্টি দোকানি আব্দুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, মিষ্টি বিক্রি তার পৈতৃক ব্যবসা। এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি পোড়াদহ মেলায় আসেন। এবার বিভিন্ন স্বাদের মিষ্টি নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি। বেচাও বেশ ভালো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মেলায় মাছ, মিষ্টি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খেলনা, গিফটসামগ্রী, চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজল, মেকআপ বক্স, ব্যাট ও বল, ভিডিও গেমসসহ নানা ধরনের প্রসাধনী ও খেলনাসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া মেলায় পাওয়া যাচ্ছে কাঠ, স্টিল ও লোহার তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
কেইউএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।