ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা অসংগতিপূর্ণ: সিপিডি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা অসংগতিপূর্ণ: সিপিডি

ঢাকা: সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাজারে যেভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, তা অযৌক্তক। বৈশ্বিক কারণে আমদানি পণ্যের দাম বাড়ছে, আবার দাম বাড়ার যথেষ্ট কারণ নেই এমন স্থানীয় পণ্যের দামও বাড়ছে—এটা সংগতিপূর্ণ নয়।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ব্র্যাক ইনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সংকটে অর্থনীতি, কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে  তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সুশীল সমাজ ও দেশের প্রকৃত পরিস্থিতির মধ্যে অসংগতি আছে। দেশে যে উন্নতি হচ্ছে তা সুশীল সমাজের বক্তব্যে উঠে আসে না। কিন্তু আমরা সারা দেশের অবস্থার প্রেক্ষিতে দেখে থাকি, কথা বলি। দেশের মানুষের ভাগ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হয়েছে।

সুশীল সমাজ ও অর্থনীতিবিদদের উদ্দেশে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আপনারা যেখানে কালো মেঘ দেখেন, আমরা সেখানে উজ্জ্বল আলোর রশ্মি দেখতে পাই।

সংকটে অর্থমন্ত্রীর কোনো ভূমিকা নেই। কে মন্ত্রণালয় চালাচ্ছে বোঝা যায় না, অর্থমন্ত্রী আছে কি নেই বোঝা যায় না—এমন সমালোচনার জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতি চালাচ্ছেন। আমরা সরকারে আছি, কাজ করছি। আমরা জেনেশুনে অর্থনীতি চালাচ্ছি।

গত চার মাস মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে। তবে এই হ্রাসের হার কম। একই সময়ে মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাও একটি ইতিবাচক দিক, যোগ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ৩০ বছর আগে যে সমস্যাগুলো আলোচিত হতো, এখনো সেই সমস্যা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। সমস্যাগুলো ঘুরে ফিরে ভিন্ন ফর্মে আসছে। গুণগত পরিবর্তনের জন্য টেকসই ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ খাবার খাওয়া কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। এতে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে এমন অবস্থা তৈরি হচ্ছে।

কেস টু কেস ঋণ পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি এসএমই খাতের দিকে নজর দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেন।

সালেহ উদ্দিন বলেন, স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণ সমস্যা তৈরি করে। ব্যাংক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বচ্ছতা এবং সুশাসন নিশ্চিতে তিনি পরামর্শ দেন।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলার সংকট দ্রুত দূর হবে বলে সরকার আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করলেও সংকট দূর হতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে।

তিনি বলেন, আামনতকরীরা এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিলেও অন্য ব্যাংকে রাখছেন। ব্যাংক খাত থেকে আমানত কমে গেলে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে। এজন্য শুধু ‘দেখার’ জন্য ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। কার্যকর উদোগ নিতে হবে।

বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিয়ে রিজার্ভ হিসাব করার তাগিদ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

মূল্যস্ফীতি রোধে জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করেন অধ্যাপক আবু আহমেদ।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি এমপি বলেন, বিদেশি শ্রমিক নিয়োগদাতা দেশগুলোকে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ঝাকুনি দিয়েছে। সেখানে প্রবাসীরা আয়ের বড় অংশ থাকা খাওয়াতে খরচ করে ফেলছেন। সেই সাথে ‘দেশে টাকা পাঠালে পরিজনের কাছে না পৌছোনোর’ গুজব পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে দিয়েছে। এ জন্য দেশে আগের মতো টাকা পাঠাতে পারছে না।

তিনি বলেন, দেশে ডলার সংকটের একমাত্র উপায় রেমিট্যান্স বৃদ্ধি। প্রবাসীদের প্রণোদনা বৃদ্ধিসহ সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্যে দিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে হবে।

শ্রমিকনেতা কামরুল আনাম বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করলেই বাড়ি ভাড়া আর নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়তি টাকা নিয়ে যায়। উৎপাদনশক্তির সক্ষমতার কথা বিবেচনায় শ্রমিকদের কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। এ জন্য বাজার পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণ ও ঘন ঘন বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২/আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা
জেডএ/এসআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।