ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ত্রিপুরা কংগ্রেসের উপজাতি সেলের নেতাদের গণপদত্যাগ

আগরতলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৩

আগরতলা (ত্রিপুরা):  ত্রিপুরা কংগ্রেসের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন আরও বাড়ল। দলের উপজাতি সেলের নেতারা গণপদত্যাগ করেছেন কংগ্রেস থেকে।



এর ফলে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে বড়সড় ধাক্কা খেল কংগ্রেস।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে দল ছাড়ার কথা জানান কংগ্রেসের উপজাতি সেলের প্রবীণ নেতা দেবব্রত কলই।

শুধু দল থেকে পদত্যাগই নয়, বিধানসভার ২১টি আসনে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবেন বলেও জানিয়েছেন দেবব্রত কলই। সংবাদ সম্মেলনেই ঘোষণা করা হয় ১৭ জন প্রার্থীর নাম।

ইন্ডিজিনাস ন্যাশনালিস্ট পার্টি অব ত্রিপুরার (আইএনপিটি) সঙ্গে দলের জোট করা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন কংগ্রেসের উপজাতি নেতারা। তাদের বক্তব্য, কংগ্রেসের উপজাতি নেতাদের সঙ্গে কোনো রকম কথাবার্তা না বলেই আইএনপিটির সঙ্গে জোট গঠন করা হয়েছে।

আই এন পি টি কে ১১ আসন ছাড়াও তীব্র বিরোধিতা করেছেন এই নেতারা। সব মিলিয়ে কংগ্রেসের সমস্যা যেন কাটতেই চাইছে না।

উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের জন্য কংগ্রেস যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে প্রবীণ এবং সুপরিচিত কংগ্রেসের আনেক উপজাতি নেতাই বাদ পড়েছেন এবার।

আইএনপিটি ত্রিপুরার একটি আঞ্চলিক দল। উপজাতি অংশের মানুষদের নিয়ে তাদের দল। গত প্রায় এক দশক ধরে রাজ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে এই দলটি কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাত করছে।

এবার আসন সমঝোতা নিয়ে প্রথম থেকেই দুই জোট শরিকের মধ্যে কিছুটা মতান্তর হয়। আইএনপিটি দাবি করেছিল ১৫টি আসন। কংগ্রেস ৮টির বেশি আসন আইএনপিটির জন্য ছাড়তে রাজি ছিলা না। এ নিয়ে গত ছয় মাস ধরে দুই জোট শরিকের মধ্যে তীব্র টানাপড়েন চলে।

শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের দিল্লির নেতারা ১১টি আসন খালি রেখে বাকি আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। প্রথম দিকে এ ১১টি আসন নিয়েও আইএনপিটির মধ্যে অসন্তোষ চলে। শেষ পর্যন্ত উভয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বৈঠকে আইএনপিটি ১১টি আসনেই দাঁড়াতে রাজি হয়। সেই মতো তারা প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করে দেয়।

উল্লেখ্য, ৬০ সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভায় ২০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে উপজাতিদের জন্য। ওই ২০টি আসনের মধ্যে আইএনপিটি দাঁড়াচ্ছে এবার ১১টি আসনে। আর বাকি ৯টি আসনে প্রার্থী হবেন কংগ্রেসের উপজাতি নেতারা।

কিন্তু এখন আবার কংগ্রেসের উপজাতি নেতারা নতুন করে বিরোধিতা করছেন এ জোটের। তাদের বক্তব্য, উপজাতি এলাকায় আইএনপিটির শক্তি আগের মতো নেই। ফলে তাদের ১১ আসনে দাঁড়াবার কোনো অধিকার নেই।

সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে দেবব্রত কলই বলেন, ‘‘আইএনপিটিকে আমরা ৫টি আসন দিতে বলেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের কোনো উপজাতি নেতার সঙ্গে যোগাযোগ বা কথাবার্তা না বলেই তাদের ১১টি আসন দিয়ে দেয়া হয়। তার ওপর বিধানসভার যে ৯টি উপজাতীয় সংরক্ষিত আসনে কংগ্রেস নিজে প্রার্থী দিচ্ছে, তার মধ্যে চারজন প্রার্থীই মহিলা। এক্ষেত্রেও দলের উপজাতি সেলের নেতাদের সঙ্গে কোনো রকম কথা বলা হয়নি।
দেবব্রত কলই বলেন, মহিলাদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন যদি দিতেই হয়, তবে সব ধরনের আসনে এটা হবে না কেন? শুধু কেন মাত্র উপজাতি সংরক্ষিত আসনে ৩০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দাঁড় করানো হবে?

এ কারণে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে থাকা ৩২ জন উপজাতি সদস্যই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন বলেও জানান দেবব্রত কলই।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের পদত্যাপত্র কংগ্রেস হাইকমান্ড সোনিয়া গান্ধী, রাজ্য কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগই এবং দলের রাজ্য সভাপতি সুদীপ বর্মণের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। ’’

কংগ্রেস ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়া ৩২ উপজাতি নেতার প্রায় সবাই দলের পুরোনো এবং উপজাতি এলাকায় কংগ্রেসের শক্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম। সংবাদ সম্মেলনে তাদের মধ্যে দেবব্রত কলই ছাড়াও মণিহার দেববর্মা, দীনেশ দেববর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তারা তাদের পক্ষ থেকে বিধানসভার ১৭টি আসনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেন। ঘোষিত ১৭ টি আসনের মধ্যে ১৬টি উপজাতীয় সংরক্ষিত আসন। বাকি একটি সাধারণ আসন।

উপজাতি নেতারা মহারাজা প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মণকে প্রার্থী না করায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন বর্তমান কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৩
তন্ময় চক্রবর্তী/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।