ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

এবার তারুণ্যে জোর দিল সিপিএম

কলকাতা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১২

কলকাতা : তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে এবার দলে তরুণ মুখের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্যের সাবেক শাসক দল সিপিএম। ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক তাপস  সিংহ এবং দলের দৈনিক মুখপত্রের তরফে অতনু সাহাকে রাজ্য কমিটিতে স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।



তরুণতম ঋতব্রতই প্রথম এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় দায়িত্বে থাকতে থাকতেই রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেলেন। তাঁকে আপাতত একই সঙ্গে দিল্লি ও কলকাতায় পার্টি কেন্দ্রে কাজ করতে হবে।

ডিওয়াইএফআইয়ের পদ ছেড়ে দেওয়ার পরে গত কয়েক মাস দলের কোনও দায়িত্বে ছিলেন না তাপসবাবু। তাঁকে রাজ্যেই পুনর্বাসন দিল আলিমুদ্দিন।

আলিমুদ্দিন তরুণ রক্তকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশিই দলের নেতা-কর্মীদের শৃঙ্খলারক্ষার বার্তাও দিতে চেয়েছে । কিছু নেতা দলের কর্মসূচি এড়িয়ে চলেন, এমনকী রাজ্য কমিটির বৈঠকেও গরহাজির থাকেন এ সব যে কমিউনিস্ট পার্টিতে আদর্শ আচরণ নয়, স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন বিমান বসু।

 সিপিএমের রাজ্য কমিটির সোমবারের বৈঠকে এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলাওয়াড়ি সাংগঠনিক পরিস্থিতির খতিয়ান নেওয়া হচ্ছে। বৈঠকের প্রথম দিনে জেলার প্রতিনিধিরা যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে বলে দাবি করা হল।

বৈঠক সূত্রে খবর, দক্ষিণবঙ্গের অন্তত ৭টি জেলায় অবশ্য সংগঠনের হাল এখনও আশাপ্রদ নয়। প্রারম্ভিক ভাষণেই বিমান বসু পরামর্শ দিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে সই সংগ্রহের কর্মসূচিকে উপলক্ষ করে বাড়ি বাড়ি যেতে হবে কর্মীদের।

গণমানুষের সঙ্গে থাকলে সংগঠন এমনিই গড়ে উঠবে। দলের অনেক কর্মী-সদস্য আছেন কিন্তু মানুষ সঙ্গে নেই, এমন সংগঠন আদতে কাজের কথা নয়।

সাংগঠনিক হাল-হকিকত নিয়ে এই আলোচনার সময় অনুপস্থিত ছিলেন রেজ্জাক। তিনি অবশ্য নিজের জেলায় দলেরই অন্য কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। কলকাতায় রোববার আদিবাসী সমাবেশে যোগ দিয়ে ফেরার পরে ভাঙড় ও ক্যানিং এলাকার কিছু আদিবাসী পরিবারের উপরে হামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

ওই ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাবেন বলে রাজ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন না, দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীকেজানিয়েছিলেন রেজ্জাক। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর মন্তব্য, “আদিবাসী মহিলারা মার খাবে আর আমি আলিমুদ্দিনে মিটিং করব?”

আলিমুদ্দিনে না-এলেও এ দিনই কিন্তু বিধানসভায় এসে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়ে যান রেজ্জাক। দলের কর্মসূচিকে অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে দেখাতে পারলেও বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার এই প্রবণতার বিরুদ্ধেই বিমান বসু  এ দিন হুঁশিয়ারি দিতে চেয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর।

রাজ্য কমিটির আগের বৈঠকেই রেজ্জাককে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। হজ করতে সেই সময় দেশের বাইরে ছিলেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী।

পুরনো সৈনিকদের সতর্ক করার পাশাপাশিই দলকে চাঙ্গা করতে তরুণ মুখের উপরে ভরসা রাখতে চেয়েছে আলিমুদ্দিন। মূলত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপেই ঋতব্রতের সদস্যপদ এ কে জি ভবন থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছে তাঁকে রাজ্য কমিটিতে আনার জন্য।

যে প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। আবার তাপসবাবুকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত দু’জন প্রভাবশালী সদস্যের আপত্তি জয় করেই তাঁকে রাজ্য কমিটিতে নিয়ে আসতে সক্রিয় হয়েছেন বিমানবাবু।

তবে চারটি জেলা থেকে আরও রাজ্য কমিটির আরও চারটি শূন্য পদ পূরণ করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এ যাত্রায় আটকে গিয়েছে দলেই মতবিরোধের জন্য। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “প্রয়োজন বুঝেই কিছু তরুণ মুখ আনা হল।

দলের মধ্যে উঠে-আসা প্রস্তাব মেনে একটি মিডিয়া কমিটি তৈরিরও চিন্তাভাবনা চলছে। ”
পঞ্চায়েতের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবে কৃষক সভার নেতাদের সঙ্গে এ দিনই রাজ্য কমিটির অবসরে আলোচনায় বসেছিলেন দলের রাজ্য নেতারা।

দলীয় সূত্রের খবর, এর পরে জেলা থেকে পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরও ডাকা হচ্ছে। বামফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পঞ্চায়েতে আসন বণ্টন নিয়ে ২০০৮-এর কাজিয়ার পুনরাবৃত্তি আটকানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিমানবাবু।

তবে পঞ্চায়েত আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার আগে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময় : ১৬৫২ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১২
বিএস/সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।