ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মানুষ কমেছে কলকাতায়

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১২
মানুষ কমেছে কলকাতায়

ঢাকা : ভারতে জনবিস্ফোরণের ফলে প্রতিটি বড় শহর যখন প্রবল চাপের মুখে, তারই মধ্যে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত গড়ল কলকাতা। হালনাগাদ জনগণনা বলছে, গত ১০ বছরে জনসংখ্যা কমেছে এ মহানগরীর।

এমনই খবর দিয়েছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজারপত্রিকা।

জনসংখ্যা কমার ফলে কলকাতা শহরের পরিকাঠামোর উপর চাপ না হয় কমল, কিন্তু এটা কি রাজ্যের সার্বিক দৈন্যদশাকেই তুলে ধরছে না! অনেক বিশেষজ্ঞ কিন্তু এমনটাই মনে করছেন। যদিও ভিন্ন মতও রয়েছে এ ব্যাপারে।

২০০১ থেকে ২০১১ এই দশ বছরের জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে কিছু দিন আগে। দেখা যাচ্ছে, দেশের
প্রায় সব বড় শহরের তুলনায় (মুম্বই ছাড়া) কলকাতায় মোট জনসংখ্যা কমেছে। কমেছে জন্মের হারও। ২০০১-এ এই মহানগরীর জনসংখ্যা ছিল ৪৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৮৭৬।

২০১১‘তে তা কমে হয়েছে ৪৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৭৯। অথচ এই এক দশকেই কিন্তু দেশের জনসংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। ১০০ থেকে ১২১ কোটির দেশ হয়েছে ভারত। দিল্লি, চেন্নাই বা বেঙ্গালুরুর মতো শহরে মানুষ বেড়ে চলার পাশাপাশি কলকাতার ছবিটাকে যথেষ্ট ব্যতিক্রমী বলেই মনে করছেন জনসংখ্যাবিদরা।

এমনিতে মোট জনসংখ্যা কমার বিষয়টি সব সময়ই স্বাগত। কিন্তু এই সূচক কিছু অপ্রিয় প্রশ্নের সামনেও দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গবাসী এবং রাজ্যের সরকারকে। এই দশ বছরের বেশির ভাগটাই বামফ্রন্ট জমানার।

তাই জনসংখ্যা কমে যাওয়ার যে সব কারণ নির্দেশ করছেন বিশেষজ্ঞরা, মন্দ-ভাল মিলিয়ে তার অনেকটা দায়ভাগই বিগত বাম জমানার। সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী জানাচ্ছেন, “পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বিহার এবং পূর্ব উত্তর প্রদেশের যথেষ্ট সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে গিয়েছে গত কয়েক বছরে।

একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ কিন্তু এই দুই রাজ্য থেকে আসা। ফলে ওই রাজ্যগুলির সমৃদ্ধি ঘটায় নতুন করে কাজ খুঁজতে পশ্চিমবঙ্গে মানুষ আর আসছেন না।

আর যারা ছিলেন, তাঁরাও ফিরে যাচ্ছেন নিজ-নিজ রাজ্যে। ” পরিকাঠামোর ঘাটতি, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসা, শিল্পের অভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধোগতি ঘটেছে কলকাতার। তাই অভাবী মানুষকে আর সে ভাবে টানে না এই শহর। আর সে কারণেই কমছে জনসংখ্যা।

আশিসবাবুর কথায়, “কলকাতায় নতুন নতুন ক্ষেত্রে চাকরি আর হচ্ছে কোথায়? শহরটা মূলত একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে গিয়েছে। যেখানে শুধু কেনা-বেচা হয়। ”

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন সায়েন্স থেকে গবেষণা করে এখন ‘হু’-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে জনসংখ্যাবিষয়ক সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন সংগ্রামকিশোর পটেল। তিনি বললেন, “কলকাতাকে স্থবিরতা গ্রাস করেছে।

চার দশক আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য মানুষ কলকাতা যেতেন। এখন তাঁরাই যাচ্ছেন বেঙ্গালুরু অথবা দিল্লিতে। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার অবহেলা রয়েছে দু’তরফেরই। ছোট ছোট উৎপাদন শিল্প গড়া হলে মানুষের কাজের সুযোগ বাড়ে। গত দশ বছরে সে রকম কিছুই হয়নি, বরং যা ছিল সে সবই বন্ধ হয়েছে। ”

তবে এত নেতির মধ্যেও কলকাতার জনসংখ্যা কমার পিছনে আশার আলোও দেখছেন আশিসবাবু। শিল্প-কর্মসংস্থানের প্রশ্নে অনেক অভিযোগ থাকলেও বামেরা যেটাকে তাঁদের সাফল্য বলেও দাবি করতে পারেন। কারণ এটা কলকাতার উপর চাপ কমার একটা সূচক।

আশিসবাবু মতে, “আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলির যা অবস্থা ছিল, আজ অবশ্যই তার থেকে কিছুটা ভাল হয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে কলকাতায় যাওয়ার হিড়িকটাও কিছুটা কমেছে। গ্রামে-মফস্সলেও কর্মসংস্থান হয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ সময় : ১৫৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১২   
সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।