ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফিরে দেখা ২০১৫

বিএনপির আত্মগোপনের বছর

মো. মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
বিএনপির আত্মগোপনের বছর ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ সফলভাবে আয়োজন করতে পারলেও শেষ ভাল হয়নি চট্টগ্রাম জেলা বিএনপির।

সমাবেশের শেষদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়।



এরপর থেকে সবস্তরের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এছাড়া মধ্যম সারির বেশ কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়।
পুলিশের নিয়মিত অভিযানে গ্রেফতার আতঙ্কে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে দূরে সরে আসে বিএনপি। বছরের প্রথম ছয়মাস প্রকাশ্যে কোন সভা-সমাবেশ করতে পারেনি।

এদিকে কেউ কেউ বলছেন, জোটের শরীক দলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় নেই বিএনপির। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াত বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়েছে। কোথাও বিএনপির সহযোগিতা চায়নি। অন্যদিকে জামায়াতের সহযোগিতা চায় না বিএনপি।    

এদিকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের সকল পাড়া-মহল্লায় ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলে সেটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপি। চলতি বছরের ২ মার্চ জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার এ নির্দেশের কথা জানিয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকার কারণে চেয়ারপারসনের আদেশ পালনে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

কোন্দলে সক্রিয়:
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর থেকে আত্মগোপনে চলে যায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে কোন সভা-সমাবেশ করতে দেখা যায়নি তাদের। এমনকি দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে তালা ঝুলেছে কয়েক মাস। বছরজুড়ে বিভিন্ন ইস্যুতে হরতাল-অবরোধের ডাক দেওয়া হলেও মাঠে ছিল না কেউ।

মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে না পারলেও দলীয় কোন্দলে সক্রিয় ছিল বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারাকর্মীরা। কোন্দলের কারণে বিভিন্ন সময়ে তারা হাতাহাতি, মারামারি ও সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

নগর বিএনপি:
নগর যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরোধ দীর্ঘদিনের। চলতি বছরও এ বিরোধ ছিল চরমে।

দলের কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমীর খসরু উপস্থিত থাকলেও বেশিরভাগ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি দলের সভাপতিকে না জানিয়ে কর্মসূচি পালনের অভিযোগ উঠেছে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। দলের এই বিরোধ থেকে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই নেতার অনুসারীরা।

নগর যুবদল:
আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যার্থ বিএনপি দশম জাতীয় সংসদে অংশ না নিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ে। এরপর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে মামলা আর গ্রেফতারে সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যন্ত চালাতে পারেনি। এই অবস্থাকে বিএনপি নেতারাই বলছেন, ‘চার দেয়ালে বন্দি গণতন্ত্র। ’

অথচ দলের এই কঠিন সময়েও নিজেদের বিরোধ নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে না পারলেও আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে তারা। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর দলের ৩৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আলাদাভাবে পালন করেছে নগর যুবদলের সভাপতি কাজী বেলাল ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন দীপ্তি। বিভিন্ন কর্মসূচিতে আলাদা বলয় তৈরির চেষ্টা করছেন তারা।
নগর ছাত্রদল

দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রদলের সভাপতি গাজি সিরাজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুর সমর্থকরা। এছাড়া সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন শহীদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদের সমর্থকদের মধ্যেও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে নগর বিএনপরি দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে আয়োজিত আলোচনা সভায় দফায় দফায় সংর্ঘষে জড়ায় নগর ছাত্রদলের কর্মীরা।

ওইদিন বিকেল ৪টায় নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা শুরু হয়। কয়েকজন বক্তার বক্তব্যের পর প্রধান বক্তার বক্তব্য শুরু করেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।  

তার বক্তব্য চলাকালীন সময়ে নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুর সর্মথকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা দু’জনই শাহাদাত হোসেনের অনুসারী।

গতি নেই উত্তর-দক্ষিণে 
এদিকে কোন্দলের কারণে দুই বছর পরও কমিটি গঠন করতে পারেনি উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী ও সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান। তারা দু’জন দুই মেরুতে অবস্থান করছেন। ফলে সমন্বিতভাবে দলের কোন কাজ হচ্ছে।

অন্যদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলামের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েলের বিরোধ বহু বছর আগের। দুই নেতার বিরুদ্ধ অবস্থানের কারণে দক্ষিণ জেলা যুবদল ও ছাত্রদল অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এমইউ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।