ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাতের চট্টগ্রাম

রেল স্টেশনে আতঙ্কের রাত

মো. মহিউদ্দিন, ইফতেখার ফয়সাল, এসবি টুপসি ও বিপ্লব পার্থ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৫
রেল স্টেশনে আতঙ্কের রাত ছবি : এসবি টুপসি/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: সোমবার বিকালে মহানগর গোধূলীতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) কর্মচারী মো. জাফর হাওলাদার।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছায় ট্রেনটি।

  কিন্তু বিএনপির হরতাল-অবরোধের ডাকে আনোয়ারায় অবস্থিত কর্মস্থলে পৌঁছানোর মতো সাহস ছিল না তার।   তাই স্টেশনেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন জাফর।


স্টেশনের অপেক্ষাগারে অবস্থানকালে ভীষণ উদ্বিগ্ন দেখা যায় ২৫-৩০ বছরের এই যুবককে।   অপেক্ষাগারে অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাত দুইটার দিকে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ট্রেন স্টেশেনে পৌঁছানোর আগেই মুঠোফোনে পরিবারের সদস্যের কাছে চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষের বিষয়টি শুনেন। এ ঘটনার পর অবরোধ-হরতাল ডাকায় রাতে বাসায় ফেরার সাহস করতে পারেননি তিনি।

“গোধূলীতে এসেই ভূল করেছি।   চারদিকে থমথমে অবস্থা। এত রাতে বাসায় গেলে কোথায় আবার কী হয়। তাই স্টেশনে রাত কাটাচ্ছি।   সকালে বাসায় যাবো। ”

একইসময় কাজী রেহেনা নামে এক যাত্রী বাংলানিউজকে জানান, তিনি তার দুই বোনসহ পরিবারের ছয়জন সদস্যকে নিয়ে মহানগর গোধূলীতে চট্টগ্রাম আসেন।   তার বাসা নগরীর পতেঙ্গা এলাকায়। রাতে গণ্ডগুলের আশঙ্কায় তিনিও বাসায় ফিরেননি।   সকলেই স্টেশনে রাত কাটাচ্ছেন।

শুধু জাফরই কিংবা রেহেনাই নয়। সোমবার রাত স্টেশনের অপেক্ষাগারে এভাবেই রাত কাটাতে দেখা গেছে শতাধিক যাত্রীকে।   এদের কেউ কেউ যেমন অন্য জেলা থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন, তেমনি অনেকে আবার অনেকে সকালের ট্রেন নিশ্চিত করতেই অবস্থান নেয় স্টেশনে।

রাজধানীর জুরাইন এলাকার আয়েশা সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, চারদিন আগে তিনি পরিবারের চার সদস্যসহ নগরীর আমানবাজার এলাকায় তার চাচার কাছে বেড়াতে আসেন।   ঢাকায় ফেরার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সকালের সূবর্ণ এক্সপ্রেসের টিকেট কেটেছেন।   যাত্রা নিশ্চিত করতেই আগের রাতে স্টেশনে চলে আসা।

“হরতাল ডাকছে হুনলাম। সকালে ঝামেলা হইলে তো ফিরতে পারব না তাই রাতে চইলা আইছি। ”

যাত্রীদের দুর্ভোগ:
রাতে স্টেশনে অপেক্ষাকালে যাত্রীদের বিভিন্ন দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।   যাত্রীরা জানান, কয়েকশ’ মানুষ অপেক্ষাগারে অবস্থান করলেও স্টেশনের শৌচাগারগুলোতে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত চেয়ার না থাকায় অনেককে ঘুমাতে হয়েছে স্টেশনের মেঝেতে।

ঢাকাগামী যাত্রী মো. জোবায়ের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষ তো মানুষ কে মানুষই মনে করে না। নাইলে টয়লেট বন্ধ রাখে ক্যামনে।   কাউকে গিয়ে বলার মতো লোকও খুঁজে পাচ্ছি না। ’

ট্রেনই ভরসা:
রাতে কয়েকজনকে ঘুমাতে দেখা যায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে।   তাদের পেছনে একজন বসে আছেন চেয়ার নিয়ে, আবার কেউবা আছেন দাঁড়িয়ে।

বসে থাকা ওই ব্যক্তির কাছে কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জানান, তার নাম মাসুদ। তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।   বাড়ি রাজধানীর ধামরাইলে।

মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ১০ তারিখ বাড়িতে যাবো। দেশের যে অবস্থা গাড়ির কোন ভরসা নাই। তাই টিকেট নিতে রাত আটটা থেকে কাউন্টারের সামনে বসে আছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।