ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জান্নাতুল বাকি: হাজারও সাহাবির কবর যেখানে

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
জান্নাতুল বাকি: হাজারও সাহাবির কবর যেখানে ছবি: বাংলানিউজ

সৌদি আরব থেকে ফিরে: মদিনার একটি কবরস্থানের নাম জান্নাতুল বাকি। আরবিতে বলা হয়- বাকিউল গারকাদ।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী, কন্যা, ছেলে ও অন্য আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে হাজার হাজার সাহাবির কবর রয়েছে জান্নাতুল বাকিতে।  

এই কবরস্থানটির অবস্থান মসজিদে নববীর পূর্বদিকে।

ইমাম মালিক (রহ.) এর বর্ণনা মতে, ‘জান্নাতুল বাকিতে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার সাহাবার কবর। কিন্তু কোনও কবরে নামফলক নেই’।

জান্নাতুল বাকিতে রয়েছে- নবী কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) ও হজরত রোকাইয়া (রা.), নবীর চাচা হজরত আব্বাস (রা.), নবী পুত্র হজরত ইবরাহিম (রা.), নবী দৌহিত্র হজরত হাসান (রা.), হজরত উসমান ইবনে মজঊন (রা.), নবীর দুধ মা হজরত হালিমা সাদিয়া (রা.), উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.),ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.), চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.), সাহাবি হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), হজরত সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রমুখ এর কবর।

জান্নাতুল বাকিতে প্রবেশ মুখে আলাদা করে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে ২টি কবর। এই দুই কবরের একটি হজরত ফাতেমা (রা.) এর এবং অপরটি হজরত আয়েশা (রা.)। কবরস্থানের শেষ দিকে রয়েছে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) এর কবর।

হুজুরে পাক মদিনায় থাকাবস্থায় তাঁর দুধভাই হযরত উসমান ইবনে মযঊন (রা.)-এর মৃত্যু হলে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাকে কোথায় দাফন করা হবে?  হুজুর (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাকে বাকিউল গারকাদ’য় দাফন করা হবে। (মুসতাদরাকে হাকিম, খ.১১ পৃ.১৯৩)।

এভাবেই জায়গাটি কবরস্থানের জন্য নির্বাচিত হয়। সেখানে সর্বপ্রথম হুজুর (সা.) এর দুধভাই হযরত উসমান ইবনে মযঊন (রা.) কে দাফন করা হয়। তারপর কবরস্থানের পরিধি তিনদিকে বাড়তে থাকে। বর্তমানে বিশাল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত জান্নাতুল বাকি।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই শেষ রাতে জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং দোয়া করতেন। দোয়ায় নবী করিম (সা.) কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

জান্নাতুল বাকি জিয়ারতের জন্য খুলে দেওয়া হয় ফজর ও আসরের নামাজের পর। ওই সময় পুরুষরা জিয়ারতে জন্য ভেতরে যেতে পারেন। ইসলামি শরিয়তে নারীদের জন্য কবর জেয়ারত করা বৈধ নয়।

জানা গেছে, মদজিদে নববি ও জান্নাতুল বাকি’র মাঝখানে ‘হারতুত দাগওয়াত’ নামে একটি পাড়া ছিলো। সেখানে মদজিদে নববির খাদেমরা পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ১৪০৫ হিজরীতে মসজিদে নববি সংস্কারের সময় এই পাড়া অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। এখন জায়গাটি মসজিদে নববির বারান্দা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।  

এরপর রয়েছে ‘আবু যর’ নামে একটি সড়ক। সড়কের পেরিয়ে জান্নাতুল বাকি কবরস্থান। চতুর্দিকে আছে এক হাজার ৭২৪ মিটার দীর্ঘ উঁচু দেওয়াল। পশ্চিম দিকে আছে একটি বড় গেট, কবরস্থানে যাওয়ার জন্য প্রশস্ত সিঁড়ি।  

মদিনায় হজ পালনকারীদের মৃত্যু হলে জান্নাতুল বাকিতে দাফনের সুযোগ মিলে। মদিনাবাসীদেরও মৃত্যুর পর এখানে দাফন করা হয়। জান্নাতুল বাকির একপাশে মরদেহ গোসল করানো এবং কাফন পরানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

ওসমানি খেলাফতের সময় জান্নাতুল বাকিতে সাহাবিদের কবরের ওপর স্থাপনা ছিল। পরবর্তীতে সৌদি আরব সরকার এসব স্থাপনা সরিয়ে নেয়।  

সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ এর আমলে উত্তর দিকে কবরস্থান ছয় হাজার মিটার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। কবরস্থানের ভেতরে তৈরি করা হয় পাকা রাস্তা। এরপর বাদশাহ ফাহাদের আমলে আশপাশের পাড়া, বাজার ও সড়ক জান্নাতুল বাকির অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩ 
এসএস/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।