ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জনসচেতনতায় কমেছে অ্যাসিড সহিংসতা

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
জনসচেতনতায় কমেছে অ্যাসিড সহিংসতা সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম: ৯০ দশকে অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আসতো ঝলসে যাওয়া নারীর নাম। এসব ঘটনার অধিকাংশ প্রেমঘটিত কারণে ঘটলেও সময়ের পরিক্রমায় ধরনও পাল্টেছে ।

গত কয়েক বছর ধরে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য ও সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে। আশার কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামে অ্যাসিড সহিংসতা গত কয়েক বছর ধরে নাই বললেই চলে।

চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২১ ও ২০২২ সালে অ্যাসিড সহিংসতার কোনও মামলা হয়নি। তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৬ থানায় ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে গত জুন মাসে অ্যাসিড সহিংসতার একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালে অ্যাসিড সহিংসতার কোনও মামলা হয়নি।  

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্যমতে,  ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত অ্যাসিড হামলার ঘটনা বেড়ে যায়। ২০২২ সালে অ্যাসিড সহিংসতার ১৭টি ঘটনায় ২৭ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে ১৬ জন নারী, ৯ জন পুরুষ এবং দুই শিশু রয়েছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে অ্যাসিড হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম থেকে কোনও অ্যাসিড হামলার ঘটনা নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেম সংক্রান্ত কারণ ছাড়িয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেওয়া, যৌতুক, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে অ্যাসিড হামলা হয়েছে। আবার ধরনও পাল্টেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জমি, সম্পত্তি ও অর্থনৈতিক বিরোধের জেরে হামলা হয়েছে। কয়েক বছরের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিড সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ, প্রতিবেশীর অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা, সাবেক স্বামীর মাধ্যমে, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মাধ্যমে, সাবেক প্রেমিকের মাধ্যমে এবং স্বজন, পারিবারিক বন্ধু, পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে অ্যাসিড সহিংসতা ঘটছে। আইনের প্রয়োগ ও নজরদারি দুর্বল হওয়ায় অনেক সময় অ্যাসিড দমন আইনের মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে কীভাবে অ্যাসিড যাচ্ছে, তা অনুসন্ধানের বাইরে থেকে যাচ্ছে।  

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তাহমিনা ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৯ সালে অধিকাংশ অ্যাসিড সহিংসতা ছিল প্রেম সংক্রান্ত ও বিয়ে নিয়ে ঝামেলায়। পরবর্তীতে জায়গা-জমি ও স্বামী-স্ত্রী এবং পারিবারিক বিরোধের কারণে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। গত কয়েক বছর করোনার কারণে বেকারত্ব বেড়ে গেছে, পারিবারিক মনোমালিন্য থেকে অ্যাসিড সহিংসতা হয়েছে। চট্টগ্রামে গত কয়েক বছর ধরে অ্যাসিড সহিংসতার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। কঠোর আইন ও জনসচেতনতায় অ্যাসিড সহিংসতা কমেছে। সবার সহযোগিতা ও উদ্যোগে অ্যাসিড সহিংসতা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে অ্যাসিড সহিংসতা কমে গেছে এটাকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই।  

অতীতে অ্যাসিড সহিংসতা কেন ঘটেছিল, সেটা গবেষণা করে আজীবনে জন্য বন্ধ করা দরকার। সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অ্যাসিড সহিংসতা প্রতোরোধ গড়তে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩ 
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।