ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে

বোল্টের জবাব দিলেন স্টার্ক, জবাবহীন অস্ট্রেলিয়া!

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
বোল্টের জবাব দিলেন স্টার্ক, জবাবহীন অস্ট্রেলিয়া!

অকল্যান্ড থেকে: দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আশা -নিরাশা, বিস্ময়-উচ্ছ্বাসের মিশেলে দারুণ এক ম্যাচ উপহার দিলো ইডেন পার্ক! যে ম্যাচের গায়ে ট্যাগ মার্ক দেওয়া ছিল ‘ব্যাটেল অফ ট্রান্সতাসমান’। সেই ম্যাচে যদি এতো উপদান না থাকলে তার গায়ে এতো তকমা-টকমা এঁটে দিয়ে কি লাভ!

দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল ম্যাচটা যেভাবে বারবার রং পাল্টাছিলো।

তার সঙ্গে দুটো দল যেভাবে বদলাচ্ছিলো স্ট্র্যাট্রেজি! কখনো মনে হচ্ছিলো টেস্ট ম্যাচ, টি-টোয়েন্টি নাকি ওয়ানডে ম্যাচ দেখছি! বিশ্বকাপের ম্যাচ, তাতে নিশ্চিত হওয়া যায় ওয়ানডে ম্যাচ। কিন্তু ওয়ানডে ম্যাচে চারটা স্লিপ, গালি, পয়েন্ট, ফরোয়ার্ড শট লেগ রেখে ফিল্ড প্লেসমেন্ট, দেখলে কে বলবেন এটা টেস্ট  ম্যাচ নয়?

সংশয়টা দূর হয় যখন দেখা যায় খেলাটা সাদা পোশাকে লাল বলে হচ্ছে না। খেলা হচ্ছে সাদা বলে রঙিন পোশাকে। নিশ্চিত হওয়া যায় সীমিত ওভারের ম্যাচ। কিন্তু ম্যাচের যা দাঁড়ালো শেষ পর্যন্ত তাতে একে অনায়াসে বলা যেতে পারে টি-টোয়েন্টি গোছের একটা কিছু। দুটো দল সব মিলিয়ে খেলেছে  ৫৫ দশমিক ৩ ওভার। আর তাতে উইকেট পড়েছে ১৯টা। রান উঠেছে ৩৫৩। যেখানে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সাউথ আফ্রিকা চারশ’-র উপরে রান তুলেছে, ৩শ’ রানের বেশি হচ্ছে প্রায় প্রতি ইনিংসে। সেখানে একটা বড় ম্যাচে রান হলো সব মিলিয়ে ৩৫৩! মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব জাগা স্বাভাবিক। তবে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে বলতেই হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ।

নিউজিল্যান্ড এক উইকেটে ম্যাচটা জিতলো, কিন্তু অনেক নাটকীয়তার পর।   অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের ইনিংস তারা শেষ করে দিয়েছিল মাত্র ১৫১ রানে। অথচ কি দুর্দান্ত শুরু করেছিল অজিরা। মাত্র ৪ দশমিক ৩ ওভারে তাদের স্কোর ছিল ৪৭। ডেভিড ওয়ার্নরের মতো ব্যাটসম্যান উইকেট। কিন্তু সেই অস্ট্রেলিয়ানদের ইনিংস ধসে পড়লো তাসের ঘরের মতো! শেষ কবে অস্ট্রেলিয়ানদের ইনিংস এতো কম রানে গুটিয়ে যেতে দেখেছেন সেটা মনে করতে পারছিলেন না অনেকে।

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ক্রিকেট লেখক নরম্যান, যিনি সিডনিতে মাত্র দিন দুয়েক আগে টেন্ডুলকারের নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন, তিনিতো অস্ট্রেলিয়ানদের খারাপ অবস্থা দেখে বলেই ফেললেন, ‘এই ম্যাচ বোধহয় ডিনারের আগেই শেষ হতে যাচ্ছে!’  ৩২ দশমিক ২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে অল আউট হলো এবং গাপটিল আর ম্যাককালামের সামনে যেভাবে বল করলেন অস্ট্রেলিয়ার সেরা ফাস্ট বোলার মিচেল জনসন, তাতে অনেকের স্মৃতিতে ভেসে উঠলো, দিন কয়েক আগে ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে কিউইদের ডিনার করার সেই দৃশ্য! তাই নরম্যানকে দোষ দিয়ে আর লাভ কি?

কিন্তু মিচেল জনসন! তিনি কি বল করলেন? ম্যাককালামকে ১৪৭ দশমিক ৩ গতিতে একটা বাউন্সার দিলেন। যা ম্যাককালামের হাতে লাগলো। কিন্তু এটুকু ছাড়া আর কিছুই মনে রাখতে চাইবেন না জনসন। এরকম একটা লো স্কোরিং ম্যাচে ৬ ওভারে ৬৮ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকলেন অস্ট্রেলিয়ান এই ফাস্ট বোলার। শেষ কবে এতো খারাপ বোলিং ফিগার দেখা গেছে জনসেনর নামের পাশে মনে করতে পারছেন কি?

কিন্তু তার নতুন বলের পার্টনার আরেক মিচেল কতো নাটকীয়তার জন্ম দিলেন। ৬টি উইকেট নিলেন। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেন। সম্ভাবনা জাগালেন অস্ট্রেলিয়ার জয়েরও। তার ফাস্ট বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেট হারালো ১৪৫ রানে। নিউজিল্যান্ডের এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান বোল্টকে পেয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু বোল্ট তাকে সামলে দিলেন। কিন্তু উইলিয়ামসন কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি হলেন না বোল্টকে নিয়ে। তাই প্যাট ক‍ামিন্সের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই স্ট্রেট ওভার বাউন্ডারি মারলেন। জয় নিশ্চিত করলেন কিউইদের।

রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার অবসান ঘটালেন ইডেন পার্কে হাজির থাকা চল্লিশ হাজার দর্শকের। কিন্তু তিনি কি শুধু নিউজিল্যান্ডের জয়টাকে নিশ্চিত করলেন? না, সেই সঙ্গে নিশ্চিত করলেন পুল ‘এ’ তে পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়ার উপরে থাকাও। এই গ্রুপে নিউজিল্যান্ড আছে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে। এরপর শ্রীলংকা। আর বাংলাদেশ তিন পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে। বাংলাদেশের রান রেট + দশমিক ১৩। আর অস্ট্রেলিয়ার - দশমিক ৩১। ইডেন পার্কে বসে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উইলিয়ামসনকে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করেছিল।

কিন্তু কি আর করা। ধন্যবাদ দিলে দিতে হয় অনেককে। ট্রেন্ট বোল্ট, যিনি ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইনের মেরুদণ্ড ভেঙে দিলেন তাকে ধন্যবাদ না দিলে অন্যায় হবে। মূলত ম্যাচটাকে একপেশে বানিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যান অব দ্য ম্যাচও তিনি। কিন্তু তার বোলিংয়ের জবাব আরেকজন যেভাবে দিলেন তাতেই ম্যাচটা শেষ হলো অনেক নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে। মিচেল স্টার্ক তুলে নিলেন ৬ উইকেট।   ম্যাচ শেষে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ালো ৯-০-২৮-৬! এমন বোলিং ফিগার নিয়েও দিন শেষে তিনি পরাজিত দলের সমস্য! কিন্তু কি আর করা! জয়ী দলে যে ড্যানিয়েল ভেট্টরির মতো একজন বাঁহাতি স্পিনারও আছেন। যার বলে এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানরা ওভার বাউন্ডারি দূরে থাক; বাউন্ডারি মারাও ভুলে গেছেন প্রায়! ভেট্টরির বোলিংয়ের জবাব কি অস্ট্রেলিয়ানরাও প্রায় সেটা ভুলে গেছেন।

এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে চার ম্যাচে ভেট্টরি ২১২ বল ডেলিভারি দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারি পেয়েছেন মাত্র ৪টা! এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়ানরা নিয়েছেন দুটি বাউন্ডারি। ইডেন পার্কে দু’দলের ফাস্ট বোলাররা যেখানে গতির ঝড় তুলেছিলেন সেখানে ভেট্টরির ঘূর্ণি বলও থাকলো এক রহস্যের নাম হয়ে। এতো ছোট মাঠে এরকম একটা বড় ম্যাচে ভেট্টরির ১০ ওভারে ৪১ রান তুলতে পারলো অস্ট্রেলিয়ানরা। আর  ড্যানিয়েল ভেট্টরি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫০ উইকেট নিলেন ওয়ানডেতে।

৫০ রান অবশ্য এই ম্যাচে করেছেন মাত্র একজন ব্যাটসম্যান। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। সেই সঙ্গে তিনি তুলে নিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে হাজার রানও। কিন্তু তার চেয়ে ম্যাককালামের বড় স্বস্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা জিতলো তার দল। মাইকেল ক্লার্কের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন ঠোঁটের কোণায় হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে। হাসতেই পারেন তিনি। এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপে অপারাজিত তার দল। এ নিয়ে অবশ্য  সংশয়ের কিছু নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫

** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।