ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মিথ ভাঙার সাক্ষী শচীন॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫
মিথ ভাঙার সাক্ষী  শচীন॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে শচীন টেন্ডুলকার

‘স্পোর্টস মিউজিয়াম’ এর সাথে বাঙালীর যেটুকু যা পরিচয় সেটা বিদেশের মাটিতে পা রেখে। নিজেদের ক্রীড়া ঐতিহ্য খুব সমৃদ্ধ তেমন দাবিও তারা  করতে পারবেন না।

আর্ন্তজাতিক ক্রীড়া দিগন্তে   মাঝে মধ্যে  যে রুপালী ঝিলিক দেখা যায় বাংলাদেশের, তা মুলত ক্রিকেটের সৌজন্যে। ক্রিকেট বিশ্বটা যে অন্যান্য খেলার  আবার তুলনায় অনেক পুঁচকে! কিন্তু তারপরও ক্রিকেট নামক বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলে। সেটাই বা কম কি? বিশ্বকাপ তো। কিন্তু বিশ্বকাপে যে দলটা খেলে তাদের একটা ক্রিকেট মিউজিয়াম নেই!

বাংলাদেশে ‘নেই’এর তালিকা অনেক বড়। তাই ওটা নিয়ে আর খুব বেশি আক্ষেপ করে লাভ নেই। কিন্তু মেলবোর্নের ন্যাশনাল স্পোর্টস মিউজিয়াম দেখলে আপনার আক্ষেপ বাড়বে। সেখানে সবই আছে। এমসিজির সেই মিউজিয়ামে কি নেই? টেস্ট ইতিহাসের শতবর্ষ উদযাপনের ছবি। যেখানে খুঁজে পাওয়া যায়  স্যার ডনকে। বডি লাইন সিরিজের দুই আলোচিত চরিত্র লারউড-ভোসের থেকে দূরত্ব রেখে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান! ক্রিকেটীয় বিরোধের জেরটা যেন এখনো রয়ে গেছে। অন্তত ছবি সেই কথা বলছে। সেই মেলবোর্নে পা রেখেছে বাংলাদেশ দল। ব্রিসবেন থেকে উড়ে এসেছে তারা। শ্রীলংকার বিপক্ষে এই ম্যাঠেই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ২৬ ফেব্রুয়ারি। তার আগে  এমসিজি-তে  ৮৫ হাজারের উপরে দর্শকের সামনে ভারত খেললো সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে। যে মাঠ ’৯২-র বিশ্বকাপ ফাইনাল বুকে ধারণ করে আছে ,তার কাছে গ্রুপ পর্যায়ের একটা ম্যাচ বাড়তি কি গুরুত্ব পেতে পারে। খুব বেশি পেয়েছে তাও মনে হয় না। তবে একটা কারণে এমসিজির এই ম্যাচটা বাড়তি রং ছড়ালো। আগের দিন মেলবোর্নে ছিল  হোয়াইট নাইট উৎসব। সাদা  যদি হয় শুভ্রতার প্রতীক হয় তাহলে পরদিন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড হয়ে উঠলো নানা রঙে বর্ণীল। এবং সেটা ক্রিকেট উৎসবের সৌজন্যে। আর সেখানে বাড়তি রং ছাড়ালেন মাঠে হাজির থাকা একজন। তিনি শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। স্যার ডনের সঙ্গে যার নামটা এক সঙ্গে উচ্চারণ করতেই বেশি পছন্দ করেন ভারতীয়রা। সেই ভারত যখন সাউথ আফ্রিকার মুখোমুখি এমসিজিতে, তখন মাঠে শচীন। ভারতীয়দের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা। মিডিয়ার কাছে বাড়তি আকর্ষন। টেলিভিশনের পর্দায়ও তাই বার বার দেখানো হলো শচীনকে। সাংবাদিকরা পর্যন্ত ছুটে গেলেন শচীনের কাছে। ছবি তুললেন। ফেসবুকে আপলোড করলেন। শচীন আকর্ষন এখনো মিডিয়ার কাছে সেই আগের মতোই রয়ে গেছে।

এমসিসিতে খেলা দেখছেন শচীন। নিশ্চিতভাবে বলা যায় এরকম একটা ছবি যে কোন  মাঠের গায়ে লাগানো থাকলে সেই মাঠের মর্যাদা বাড়বে। কিন্তু এমসিজির মিউজিয়ামে শচীনের এই ছবিটা জায়গা পাবে কি না জানি না। কারণ, অস্ট্রেলিয়ানরা তুলনামুলকভাবে  একটু রক্ষণশীল। সাদা পোশাকে কিংবা রঙীন পোশাকে আধুনিক ডনকে এমসিজির মাঝখানের বাইশগজ বহুবার দেখেছে। কিন্তু দর্শক শচীনকে এমসিজি শেষ কবে দেখেছে তা বলা কঠিন। অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকরাও ঠিকঠাক বলতে পারছেন না। শচীনের উপস্থিতি ভারতকে  জিতিয়ে দিয়েছে এমনটা বলার লোকেরও অভাব ছিল না মেলবোর্ন সহ অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ভারতীদের মধ্যে। মাঠে নয়, গ্যালারিতে শচীন ম্যাজিক! কিন্তু যারা মাঠে এসেছিলেন বিরাট কোহলি, এবি ডি-ভিলিয়ার্স ডুয়েলের পাশাপাশি ডেইল স্টেইন- মুহাম্মদ সামি, অশ্বিন-ইমরান তাহির-দের ডুয়েল দেখতে তারা খানিকটা হতাশই হলেন। লড়াইটা কোথায় হলো! ভারতের ৩০৭ রানের চাপ-ই সামলাতে পারলো না সাউথ আফ্রিকা। ‘চোকার’ শব্দটা কেন তাদের গায়ে সেঁটে দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে শন পোলকের যতোই আপত্তি থাকুক, সাউথ আফ্রিকা চাপের মুখে আবার ভেঙে পড়লো! তাতে শনের আরো একটা যুক্তি আছে। ‘হয়তো ভাল-ই হলো। সাউথ আফ্রিকা এখন বাকি ম্যাচগুলো চাপ মুক্ত খেলতে পারবে। ’-বলছিলেন’৯৯ আর ২০০৩ এর বিশ্বকাপ থেকে সাউথ আফ্রিকার মর্মান্তিক বিদায়ের অন্যতম সাক্ষী। এমসিজিতেও তিনি দেখলেন দক্ষিণ আফ্রিকা এখনো বড় ম্যাচে ভেঙে পড়ার বদঅভ্যাস থেকে বের হতে পারেনি!
 
উল্টোদিকে  শচীন টেন্ডুলকার অন্যরকম এক মিথের সাক্ষী হলেন। একই সঙ্গে মিথ ভাঙারও স্বাক্ষী থাকলেন। ভারত যে ম্যাচটা জিতলো সেই ম্যাচে এমসিজিতে সেঞ্চুরি করলেন শিখর ধাওয়ান। মিথটা এরকম: ধাওয়ান যে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন, সে ম্যাচ ভারত হারে না। হ্যাঁ, এমসিজি-তেও হারলো না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে  যার সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি আছে, সেই ভদ্রলোকের সেঞ্চুরিতে ভারত  বেশির ভাগ ম্যাচই জিতেছে, সেটাকেও এক সময় মানতে চাইতেন না অনেকে। কারণ শচীনের  কাছে সব সময়ই  তার ভক্তদের প্রত্যাশাটা  একটু বেশি ছিল। শুধু সেঞ্চুরি করলে  হতো না। ম্যাচও জেতাতে হতো তাকে। আর প্রতিপক্ষ ভাবত শচীনের উইকেটটা তুলে নেয়া মানে ম্যাচটা পকেটে পুরে ফেলা। কিন্তু শেখর ধাওয়ানকে প্রত্যাশার সেই চাপ নিতে হচ্ছে না। ধাওয়ানের সেঞ্চুরি, ভারতের জয়। সেটা আরো  একবার দেখলেন শচীন। সেই সঙ্গে দেখলেন; নিজে যা পারেননি এবারের ভারতীয় দলটা তা করে দেখালো। বিশ্বকাপে ভারত এরআগে কখনো জিততে পারেনি সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে। গত বিশ্বকাপে  ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বটে। কিন্তু হেরেছিল সাউথ আফ্রিকার কাছে। বিশ্বকাপ মানে সাউথ আফ্রিকার কাছে হার, এই মিথটাও ভেঙে পড়লো এমসিজিতে! কিন্তু সাউথ আফ্রিকা মানে ‘চোকার’ সেই মিথের কি হলো? সেটা কি আর ব্যাখা করার দরকার পড়ছে?

তবে শন পোলকের কথা ধরে একটা ফুটনোট দিয়ে রাখছি। গত বিশ্বকাপে ভারত হেরেছিল সাউথ আফ্রিকার কাছে। শেষ পর্যন্ত কাপটা অবশ্য ভারত জিতেছিল। অতএব চোকাররাও এখনো স্বপ্ন দেখতেই পারে। ২৯ মার্চ এমসিজিতে যদি সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক এবিডি ভিলিয়ার্স কাপ উচিয়ে ধরেন, সেই ছবিটা নিশ্চয়ই মিউজিয়ামে জমা পড়বে।

বাংলাদেশ সময় ১৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫

** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।