ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বুমরাহর দারুণ বোলিংয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
বুমরাহর দারুণ বোলিংয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়

পাকিস্তানের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ভারত গুটিয়ে গেল ১১৯ রানে। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলকে মনে করে হয়তো কোনো ভক্ত বলতেই পারেন, এ আর এমন কী সংগ্রহ।

তবে তা পাড়ি দেওয়া যে সহজ কর্ম নয়, সেই চিত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগেই দেখিয়েছে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম। আজও এর ব্যতিক্রম হলো না।

স্টেডিয়াম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। তবে ভারত-পাকিস্তান মহারণের খাতায় আরও একটি রোমাঞ্চকর লড়াই যোগ করে দেওয়ার পেছনে কৃতিত্ব যে এই মাঠটিরই। যা ব্যাটারদের জন্য দুর্বোধ্য, সেটাই বোলারদের কাছে স্বর্গ হয়ে উঠেছে। সেই স্বর্গের নায়ক আজ জাসপ্রিত বুমরাহ। যার দুর্দান্ত বোলিংয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ভারত জয় পেয়েছে ৬ রানের ব্যবধানে।   

৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট। বোলিং ফিগারটি হয়তো আজীবন স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে বুমরাহর। ১১৯ রান করায় যখন ভারতের পক্ষে বাজি ধরার লোক ছিল হাতেগোনা, তখন ভারত সবচেয়ে বড় আস্থাটি রেখেছিল ডানহাতি এই পেসারের কাঁধে। বুমরাহও হতাশ করেননি। তার প্রতিটি ভারতকে ক্রমশই জয়ের কাছে টেনে নিয়ে যায়।  

তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান খেলছিল বেশ বুঝেশুনেই। কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের। তৃতীয় ওভারে রিজওয়ানকে সাজঘরে ফেরানোর ফন্দি এঁটেছিলেন বুমরাহ। কিন্তু শিভাম দুবে ক্যাচ মিস করায় হতাশই হতে হয় তাকে। যদিও পঞ্চম ওভারে বাবরকে ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন ডানহাতি এই পেসারই। লেংথ ডেলিভারিটি খেলা নিয়ে প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন বাবর। শেষ পর্যন্ত খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তিনি। স্লিপ ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ক্যাচ নেন সূর্যকুমার যাদব। ১০ বলে ২ চারে ১৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যান পাক অধিনায়ক।

রিজওয়ানের সঙ্গে থিতু হওয়া উসমান খানকে ফেরাতে ১১তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ভারতকে। নিজের প্রথম বলেই উসমানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন অক্ষর প্যাটেল। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় ভারত। ১৩ রান করা উসমানের জায়গায় এসে ফখর জামানও আউট হন ১৩ রানে। দেখে মনে হয়েছিল দ্রুত ম্যাচ শেষ করার জন্য নেমেছিলেন। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হয়ে ফিরতে হলো ৮ বলে ১ চার ও ১ ছক্কা মেরে।

রিজওয়ান যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের হাতেই। কিন্তু রানের চেয়ে বেশি ডট খেলে দলের ওপর চাপ বাড়িয়েই যাচ্ছিলেন এই ওপেনার। শেষ পর্যন্ত তার ইতি ঘটে অদ্ভুত এক শটে। ১৫তম ওভারে বুমরাহর হালকা ওপরের লেংথের ডেলিভারি বুঝে ওঠার আগেই ক্রস ব্যাট চালান তিনি। কিন্তু বল ব্যাটে লাগাতে না পেরে উল্টো হারিয়ে ফেলেন নিজের স্টাম্প। ৪৪ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় তার ৩৩ রানের ইনিংসটি জন্ম দেবে অনেক প্রশ্নের।  

সেই ওভারে মাত্র ৩ রান দেন বুমরাহ। এরপর দ্রুতই শাদাব খানকে সাজঘরে ফেরান পান্ডিয়া। ১৯তম ওভারে বুমরাহ আসেন নিজের শেষ ওভারটি করতে। সেখানেও ৩ রান খরচ করেন তিনি। শিকার করেন ইফতিখারকেও। শেষ ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য ১৮ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের,হাতে ৪ উইকেট। কিন্তু অর্শদীপ সিং প্রথম বলেই তুলে নেন ইমাদ ওয়াসিমের উইকেট (১৫)। এরপর নাসিম শাহর কাছে দুটি চার হজম করলেও পুরো ওভারে ১১ রানের বেশি দেননি বাঁহাতি এই পেসার।

এমন হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন নাসিম। বুমরাহর মতো আজ নায়ক হয়ে উঠতে পারতেন তিনিও। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত বিফলে যায় তার দারুণ বোলিং ফিগারটি।

বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যে আধঘণ্টা দেরিতে অনুষ্ঠিত টসে জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। নাসিম তার বোলিংয়ের সফলতা পান কোহলিকে ফেরানোর মাধ্যমে।  বিশ্বকাপের গত আসরে এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন কোহলি। কিন্তু এবার তাকে খোলস ছেড়ে বের হতে দেননি নাসিম। তার প্রথম বলে কোহলি চার মারলেও তৃতীয় বলে সাজঘরে ফেরেন উসমান খানকে ক্যাচ দিয়ে। অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের ডেলিভারি খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন ৪ রান করা এই ব্যাটার। পরের ওভারে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে (১৩) নিজের শিকারে পরিণত করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।

দুই ওপেনারকে হারানোর পরও পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫০ রান তুলে ফেলে ভারত। ঋষভ পন্ত ও অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটে চাপে কাটিয়ে ওঠার আভাস দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু  অষ্টম ওভারে নাসিমকে তেড়ে মারতে গিয়ে উল্টো নিজের স্টাম্প হারিয়ে ফেলেন অক্ষর। ১৮ বলে ২০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। সর্বোচ্চ রান করা ঋষভকে শেষ পর্যন্ত নত স্বীকার করতে হয় আমিরের কাছে। ৩১ বল খেলে ৬ চারে ৪২ রান করেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক।

ইনিংসের এক ওভার বাকি থাকতেই নিজেদের সবকটি উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট শিকার করেন নাসিম ও রউফ। এছাড়া আমির দুটি ও শাহিনের শিকার একটি উইকেট। পেসারদের এমন জ্বলে ওঠার দিনেও পাকিস্তানকে হতাশায় ডোবালেন ব্যাটাররা। এই হারে সুপার এইটে যাওয়ার সমীকরণ আরও জটিল হয়ে গেল তাদের জন্য। কেননা দুই ম্যাচ খেলে এখনো পয়েন্টের খাতাই খুলতে পারেনি। সমান ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে এ গ্রুপের শীর্ষে আছে ভারত। একই পয়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রেরও। বাকি দুই ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচ জিতলেই সুপার এইটে খেলবে স্বাগতিকরা।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ১১৯/১০ (ঋষভ ৪২, অক্ষর ২০; নাসিম ৩/২১, রউফ ৩/২৩, আমির ২/২৩)
পাকিস্তান: ১১৩/৭ (রিজওয়ান ৩১, ইমাদ ১৫, বাবর ১৩; বুমরাহ ৩/১৪, পান্ডিয়া ২/২৪)
ফল: ভারত ৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: জাসপ্রিত বুমরাহ।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪

এএইচএস

 

   

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।