ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

শুরুর আগেই বিলীনের শঙ্কায় ওয়াটার প্লান্ট

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
শুরুর আগেই বিলীনের শঙ্কায় ওয়াটার প্লান্ট ভাঙন কবলিত ওয়াটার প্লান্ট। ছবি: মুশফিক সৌরভ

বরিশাল: আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার আগেই বিলীন হওয়ার হুমকিতে পড়েছে বরিশাল নগরের বেলতলা খেয়াঘাটের সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্লান্টটির পাশ দিয়ে বয়ে চলা কীর্তনখোলায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ত‍াই দেখা দিয়েছে শুরুর আগেই অস্তিত্ব রক্ষার শঙ্কা। নদীর তীব্রভাঙনে ইতিমধ্যেই প্লান্ট এলাকার একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে।

সরোজমিনে দেখা গেছে,  প্লান্টের ভেতরের হাউজে পানি জমে শেওলা পড়ে শুকিয়ে আছে।   বিভিন্ন প্লেটেও পড়েছে শেওলার শুকনো আস্তর।

রঙ ঝলসে গেছে সবকিছুরই।
 
কীর্তনখোলা নদীর তীব্র ভাঙনে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের গাইড ওয়ালের প্রায় ৪শ’ ফুট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নীচের মাটি ও বালি নদীতে বিলীন হয়ে একাংশ কেবল পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি ভবনের। বরিশালে ভাঙ্গছে ওয়াটার প্লান্টের একাশ।  ছবি: মুশফিক সৌরভ

বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে আরো একটি ভবন ও গাইড ওয়ালের বাকি অংশ। প্লান্টের কাজের জন্য তৈরি দুটি লেক ও মূল প্লান্টটিও রয়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে। আর পুরো প্লান্টটি দেখভালে ঠুঠো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করছেন ঠিকাদারের নিয়োগ দেওয়া দুই ব্যক্তি।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বেলতলার প্লান্টটি কীর্তনখোলা নদী ভাঙনের মুখে। এখন জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধের প্রয়োজন রয়েছে, যা না হলে প্লান্টটি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ বলেন, গত বছর বর্ষায় ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এলাকায় আকস্মিক ভাঙন দেখা দিলে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। শুধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টই নয়, আশপাশের নদী তীরবর্তী চরবাড়িয়া এলাকার সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ডিপিপি দাখিল করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। চলতি মাসে প্রি একনেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। দ্রুত কাজটি শুরু এবং সম্পন্নের চেষ্টা চলছে। শ্যাওলা জমেছে ওয়াটার প্লান্টে।  ছবি: মুশফিক সৌরভ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য দিনে প্রয়োজন সাড়ে ৪ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার লিটার। ধারণক্ষমতা না থাকায় নগরীর বর্ধিত এলাকার বিশাল এক অংশ বাদ দিয়ে বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ কোটি ৫৭ লাখ লিটার পানি। নগরবাসীর বাকী পানির চাহিদা মেটাতে কীর্তনখোলা নদী তীরের বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং নগরীর রুপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এর কাজ শুরু হয়। এ প্লান্ট দুটো চালু হলে ১ কোটি ৬০ লাখ করে আরো ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
 
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ও বরিশাল মহানগরীতে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় বেলতলা ও রুপাতলীতে অবস্থিত সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটির শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি প্লান্ট থেকে নগরীর প্রায় ৭টির মতো রিজার্ভ ট্যাংক পর্যন্ত (ট্রান্সমিশন পাইপলাইন) পাইপলাইন টানার কাজও শেষ হয়ে গেছে। শ্যাওলা জমেছে বরিশালের ওয়াটার প্লান্টে।  ছবি: মুশফিক সৌরভ

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, প্লান্টটি চালু করতে কীর্তনখোলা নদী শাসন ও ভাঙন রোধের জন্য ইতিমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা স্থান পরিদর্শন করেছেন। নদী ভাঙনের বিষয়টি তাদের আওতাভুক্ত হওয়ায় প্লান্টটি রক্ষায় সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

নগরবাসীর দাবী, জনাসাধারণের সুবিধার্থে সরকারি ব্যয়ে নির্মিত প্লান্টটি জরুরি ভিত্তিতে যেন রক্ষা করা হয়। পাশাপাশি প্লান্ট রক্ষায় নদী শাসনসহ প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
এমএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।