ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

ভোলার চরাঞ্চলে চলছে অতিথি পাখি নিধন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
ভোলার চরাঞ্চলে চলছে অতিথি পাখি নিধন শিকার করা অতিথি পাখি

শীতের শুরুতে দ্বীপজেলা ভোলার উপকূলীয় চরাঞ্চলে অতিথি পাখি এলেও শিকারিদের কারণে সেসব পাখি এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

ভোলা: শীতের শুরুতে দ্বীপজেলা ভোলার উপকূলীয় চরাঞ্চলে অতিথি পাখি এলেও শিকারিদের কারণে সেসব পাখি এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

ভোলার চরাঞ্চলে বিষটোপ দিয়ে প্রতিদিন নির্বিচারে শত শত পাখি শিকার করছে শিকারিরা।

এসব পাখি আবার বিভিন্ন এলাকায় পাচারও করা হচ্ছে। এ কারণে অতিথি পাখির আসা কমে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারস‍াম্য ও সৌন্দর্য হারাচ্ছে মনো-মুগ্ধকর চরগুলো।

অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিকারিদের দৌরাত্ম্য আরো বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে প্রশাসন বলছে পাখি রক্ষায় তাদের কার্যক্রম চলছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মত এ বছরও ভোলার উপকূলের মদনপুর, নেয়ামতপুর, তারুয়া, কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর পাতিলা ও মাঝের চরসহ ২০টি চরে এসেছে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ অতিথি পাখি। এদের মধ্যে বালিহাঁস প্রজাতির সংখ্যাই বেশি। এসব পাখিদের কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে চরগুলো। কিন্তু এসব পাখি চরে এসে ঠিকমত বিচরণ করতে পারছে না।
 
খাদ্যের সন্ধানে দল বেধে উড়তে গিয়েই মারা পড়ছে শিকারিদের হাতে। চর ও ধান খেতে বিষাক্ত বিষটোপ ছিটিয়ে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার।

শিকার করা অতিথি পাখিকয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নদীর তীরে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাটার সময় পানি নেমে যায়। তখন খাদ্যের সন্ধানে বালিহাঁস, নানা রংয়ের পরিযায়ী পাখি বিচরণ করে। পাখির বিচরণকে লক্ষ্য করে চরে বিষ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ওই বিষ মাখা খাদ্য খেয়ে পাখিগুলো মারা যাচ্ছে। সেসময় শিকারিরা মৃত পাখি ধরে নিয়ে বিক্রি করছে।
 
প্রত্যক্ষদর্শী জামাল মাঝি জানান, নদীতে মাছ ধরতে গেলে মেঘনায় অসংখ্য মরা অতিথি পাখি ভাসতে দেখা যায়। ভাটার সময় কীটনাশক জাতীয় দ্রব্য ধানের সঙ্গে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ওই ধান খেয়ে পাখিগুলো পড়ে যায়। অনেক পাখি উড়ে অন্যত্র গিয়ে নদীর পানিতে পড়ে মরে যাচ্ছে। পাখি শিকারি দল অসুস্থ ও মৃত পাখি জবাই করে বাজারের ব্যাগে করে বিভিন্ন হোটেলে ও বাসা বাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করে। এসব পাখি গোপনে প্রতি পিস ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা করে বিক্রি করে তারা।  

নদীতে ভাসমান বেদে বহরের দুই নারী ও পুরুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিকারিরা পাখি শিকার করে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে। কেউ তাদের বাধা দিতে গেলে শিকারিরা তাদের উপর চড়াও হয়। এক শ্রেণির অসাধু চক্র কৃষক, জেলে ও রাখালদের দিয়ে এসব পাখি শিকার করায়।
 
সচেতন মহল বলছে, এভাবে একের পর এক পাখি শিকার হলেও পাখি শিকার বন্ধে নেই কোন কার্যকর ব্যবস্থা। এতে শীতের আগমনী পাখিদের কলতানে মুখর চরগুলোর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ভোলা প্রেসক্লাব সম্পাদক সামস উল আলম মিঠু বলেন, শীতের পাখি আমাদের, আমাদেরই এসব পাখিদের রক্ষা করতে হবে। এসময় পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তবে পাখি রক্ষায় জনসচেতনা ও অভিযান চলছে বলে জানালেন প্রাণিসম্পদ ও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা।
 
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, পাখি রক্ষায় আমাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

এ ব্যাপারে ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট নাজিউর রহমান বলেন, যাতে কোন মতেই অতিথি পাখি শিকার করা না হয়, সেদিকে আমাদের বাড়তি নজরদারি রয়েছে। আমরা যখনি কোন খবর পাই দ্রুত শিকারি চক্রকে আটক করে থাকি। অতিথি পাখি রক্ষায় আলাদা টিম নদীতে টহলে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে উপকূলে পাখি শিকার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও শিকারিদের সচেতন করে তোলার দাবি চরাঞ্চলের মানুষের।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।