ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বন্যায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, ১৭ হাজার হেক্টর ফসল নিমজ্জিত

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
বন্যায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, ১৭ হাজার হেক্টর ফসল নিমজ্জিত প্লাবিত এলাকা। ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: অবিরাম বর্ষণ আর উজানের ঢলে পানি বাড়তে থাকায় পঞ্চম দফায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

যা এই বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি সেতুপয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমরসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত ১২০টি চরের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেসঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। জেলার ৯টি উপজেলার ৬৭টি উন্মুক্ত পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এদিকে বন্যায় নিম্নাঞ্চলগুলোতে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা। বন্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। লোকজন গবাদিপশু নিয়ে আবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ভারী বর্ষণে সবজি ভিলেজখ্যাত কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ী, মোঘলবাসা, হলোখানা, রাজারহাটের ছিনাই, মহিধর, মীরেরবাড়ি. দেবালয় এবং ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙা ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে শত শত হেক্টর বেগুন, মূলা, কপি, লালশাকের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।

খড় নষ্ট ও গোচারণভূমি ডুবে থাকায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। খড়ের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গরুর মালিকরা। চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে বাড়ছে ভোগান্তি। অনেক এলাকায় প্রায় শতভাগ আমন ক্ষেত এখন পানির নিচে।

কুড়িগ্রাম সদরের ধরলা অববাহিকার ভোগডাঙ্গা, পাঁচগাছি ইউনিয়ন এলাকার কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও বন্যায় নষ্ট হয়েছে সবজিক্ষেত। কয়েক দফা রোপা-আমন নষ্ট হওয়ার পর আবারও তলিয়ে যাওয়ায় নতুন করে আর আমন লাগানো সম্ভব হবে না। এতবেশি বন্যা হলে আমন মৌসুমে আবাদ করা ছেড়ে দিতে হবে। গোচারণ ভূমি ডুবে থাকায় ও খড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে চরম সংকটে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ বছর বন্যায় নদীপাড়ের মানুষেরা খুবই কষ্টে দিন পার করছেন। পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষজন যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখনই আবারও বন্যার পানি এসে ফসলসহ ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়াও এই ইউনিয়নে গত দুই সপ্তাহে অনন্ত শতাধিক ঘর-বাড়ি ধরলা নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

রোববার বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারে কার্যালয়, জেলা ও দায়রা আদালত, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল রোড, কলেজ মোড় থেকে জেলা প্রশাসকের বাসভবন রোড সর্বত্রই একফুট থেকে ৩/৪ ফুট পর্যন্ত পানি। সড়কগুলোতে হাঁটুপানিতে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা ও গাড়ি চলছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারগুলোর রাস্তা ও চত্বরও পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও একই অবস্থা বিরাজ করছে কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, চর কুড়িগ্রাম, সরদারপাড়া, হাসপাতালপাড়া, নতুন রেলস্টেশনপাড়া, রৌমারীপাড়া, তালতলা, চর হরিকেশ, ছয়ানিপাড়া বস্তি, পিটিআই বস্তিসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায়।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার রৌমারীপাড়া এলাকার শাহীন আহম্মেদ, হাটির পাড়ের মকবুল হোসেনসহ অনেকেই বাংলানিউজকে জানান, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যাবস্থা, পুরনো ড্রেন পরিষ্কারের অভাব ও কিছু জায়গায় ড্রেন না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে বেহালদশা বিরাজ করায় দুর্ভোগকে সাথী করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে জানান, পাকা ড্রেন সংস্কার ও কিছু স্থানে নতুন ড্রেন নির্মাণ পরিকল্পনা থাকলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না। শুধু ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নয় অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সীমিত সাধ্য সত্ত্বেও তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছেন বলে দাবি করে জানান, চেষ্টা চলছে জনদুর্ভোগ কমাবার। সেজন্য মাঠে কাজ করছে পৌর কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. শামসুজ্জামান মিয়া বাংলানিউজকে জানান, পঞ্চম দফা বন্যায় ১৬ হাজার ৭৭৯ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা-আমন ১৫ হাজার ৬৯৭ হেক্টর, মাসকালাই ৬৫৪ হেক্টর, শাকসবজি ৩৫০ হেক্টর এবং চীনা বাদাম ৮০ হেক্টর।

কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক সুবল চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা ২৪ ঘণ্টার রেকর্ডে এ বছরের সর্বোচ্চ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ধরলাসহ অন্যন্য নদ-নদীতে পানি আরও দুই-একদিন বাড়বে। তবে বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
এফইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।