ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

পরিবার নিয়ে চশমা হনুমানের খুনসুটি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
পরিবার নিয়ে চশমা হনুমানের খুনসুটি কোলে শাবক নিয়ে চশমা পরা হনুমান/ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজ

লাউয়াছড়া থেকে ফিরে: সেদিন আমরা ছিলাম পিকনিকের আমেজে। বাংলানিউজের ফ্যামিলি ডে’র আয়োজনে অগ্রবর্তী দল কাজ করছিলো লাউয়াছড়ার বাগমারা বিটে। অপরিচ্ছন্ন, অগোছালো একটি পিকনিক স্পটকে গুছিয়ে পরিচ্ছন্ন করে নান্দনিক করতেই ছিলো যতো চেষ্টা। শীত শেষে বসন্তের আগমনী বার্তা স্পষ্ট সংরক্ষিত এ চিরহরিৎ বনে। আকাশপানে চেয়ে থাকা লম্বা গাছগুলো ফেলে দিচ্ছে তাদের আবরণ। নিচে শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি।

সুনীল ও তার স্ত্রী তখন পরিষ্কার করছিলেন বনঘেঁষে। হঠাৎ গাছের মাথায় নড়েচড়ে বসলো কি যেন।

তাকিয়ে দেখা গেলো একেবারে নিচে নেমে এসেছে একটি হনুমান। চশমা পরা হনুমান। দলেরও অনেকে এর আগে দেখেনি এ হনুমান। কিন্তু নিচের মানুষগুলোকে পাত্তা দিলো না মোটেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় তারাও যেন খুশি! একনাগাড়ে খেয়ে চললো লতা-পাতা। তখন ক্যামেরা হাতে না থাকার আক্ষেপ পোড়াচ্ছিলো। ত্রাণকর্তা হয়ে এলেন বাগমারা বনবিটের কর্মকর্তা জুলফু মিয়া। তার বাইকে সওয়ার হয়ে দ্রুত নিয়ে আসা হলো ক্যামেরা।

কোলে শাবক নিয়ে উপরে উঠতে উদ্যত মা হনুমানটি/ছবি: আসিফ আজিজভাগ্য সদয়, তখনও তারা বসে ছিলো যেন ছবির পোজ দেওয়ার জন্য। ততক্ষণে আশপাশের গাছের পাতাও নড়তে শুরু করেছে। আগে থেকেই জানতাম এরা দলবেঁধে থাকে। সে সম্ভাবনা থেকেই একা বনে ঢোকা। কিছুদূর ঢুকেই দেখা গেলো সত্যিই একটি দল এখানে। তিনটি বড় একটি শিশুর দল।

ডাগর চোখে তাকিয়ে দলের একটি পুরুষ সদস্য/ছবি: আসিফ আজিজনিচের মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে বারবার এ গাছ থেকে ওগাছে লাফাচ্ছিলো। এরইমধ্যে মা ও তার শাবককে পাওয়া গেলো একটি উঁচু অন্ধকারগোছের একটি গাছের ডালে। ক্যামেরার লেন্সে বেড় পাওয়া মুশকিল। ক্লিক অথবা শুকনো পাতার শব্দ পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে পড়লো কয়েক সেকেন্ডের জন্য। একেবারে চোখ চোখ রেখে তাকানো যারে বলে। মায়ের কোল সেঁটে লক্ষ্মীছাড়ার মতো বসে থাকলো শাবকটি। দুজনেরই চোখের চারপাশ গোলাকৃতির সাদা রঙে ঢাকা। ঠিক যেন চশমা পরে বসে আছে। ভেতরে কালো ডাগর চোখ। ঠোঁটের চারপাশেও তাই। হাত দেড়েক লম্বা লেজ আর ধূসর লম্বাটে লোম শরীরে।

রাস্তার পাশের গাছে বসা চশমা পরা হনুমান/ছবি: আসিফ আজিজমাথায় যেন টুপি পরা। চোখে চোখ রেখে আবার মাঝে মধ্যে দাঁত খিচিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা থেকেও বিরত থাকলো না। ভাবখানা এমন যে, এই গহীন বনে তোমার কি!

কিন্তু বেশিক্ষণ সুযোগ না দিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই উঠে গেলো গাছের মটকায়। আর টিকি দেখা গেলো না বনের ঘনত্বে। তবে পাশ থেকে অবস্থান জানান দিতে লাগলো আরেকটি। তার সঙ্গেও কিছুক্ষণ হলো চোখাচোখি।   এভাবে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রাস্তার পাশে আসতেই দেখা মেহগনি গাছে দেখা দিলো আরেকটি দল। নিচে তখন পিকনিকে আসা স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদেরও একদফা বিনোদন দিয়ে বনে এসে বন্যপ্রাণী দেখার ইচ্ছে সার্থক করে দিলো দলটি।

রাস্তার পাশের গাছে বসা চশমা পরা হনুমান/ছবি: আসিফ আজিজমৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চশমা পরা হনুমানরা সাধারণত দলবেঁধে থাকে। পুরো বন এরা ঘুরে বেড়ায়। লাউয়াছড়া বনে এরা যথেষ্ট সংখ্যায় আছে। গাছের কচিপাতা ও সব ধরনের ফল এদের প্রধান খাবার। বনে এদের খাদ্য সংকট নেই।

বাংলাদেশের সাতছড়ি, লাউয়াছড়া, রেমা-কালেঙ্গা ও কাপ্তাই সংরক্ষিত বনে এদের বেশি দেখা মেলে। তবে বনের মধ্যে দিয়ে ট্রেন লাইন ও সড়ক থাকায় প্রায়ই এদের যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে জীবন হারাতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।