ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কুশিয়ারার পানি বেড়ে ডুবল ৮ শতাধিক গ্রাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৪
কুশিয়ারার পানি বেড়ে ডুবল ৮ শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত একটি এলাকা। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: সিলেটে বেড়েছে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবছে নতুন নতুন এলাকা।

দিন যত যাচ্ছে, তৃতীয় দফায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে।

বিশেষ করে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে আট শতাধিক গ্রাম। সুরমার পানিতে দেড়শ এবং পাহাড়ি ঢলে তিনটি উপজেলার ২২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।  এমন তথ্য জানা গেছে জেলা প্রশাসনের প্রাত্যহিক বন্যার পরিস্থিতির প্রতিবেদন থেকে।

জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা সুরমা ও কুশিয়ারা নদী অনেক আগেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবারও (৪ জুলাই) ছয়টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানি প্রথমেই আঘাত হানে। এ যাবত পাহাড়ি ঢলে এ তিন উপজেলার ২২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়ে আক্রান্ত হন ১ লাখ ৬২ হাজার ২৩৪ জন। আর সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর মধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বাঁধ উপচে ও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গিয়ে ৮৭ গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখের অধিক মানুষ পানিবন্দি বলে দাবি উপজেলা প্রশাসনের। আর জেলা প্রশাসনের হিসাবে ৯০ সহস্রাধিক।

আর কুশিয়ারা নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমার একাংশ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার ৮ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬২ জন। এর মধ্যে ওসমানীনগর উপজেলায় সর্বাধিক ৮ ইউনিয়নের ২৭৩ গ্রাম প্লাবিত হয়ে মোট ২ লাখ ৩৭ হাজার ২০৮ জনসংখ্যার ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৬৭ জন বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন।  

জকিগঞ্জে ৮৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ হাজার ৯৭৮ জন, বিয়ানীবাজারে ৯৬ গ্রামের ৪৫ হাজার ৯০০ জন, গোলাপগঞ্জে ১৫৭ গ্রামের ৪৩ হাজার ২০৭ জন, বালাগঞ্জে ১৪০ গ্রামের ৩৩ হাজার ৪৫৬ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৬টি গ্রামের ১৩ হাজার ৬৪৪ জন, দক্ষিণ সুরমায় ৬৫ গ্রামের ২০ হাজার ১০ জন বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবারও সিলেট বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার সুরমা ও কুশিয়ারার সবকটি পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সীমান্ত এলাকার নদ-নদীর পানি কমেছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে ১৫২ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে দিনভর ১০৩ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে সুরমার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরের ভেতরে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় অনেক বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। অনেকেই আবার স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।

নগরের মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসে বলেন, টানা বৃষ্টি ও সুরমার পানি বেড়ে যাওয়ায় এলাকার অনেকের বাসায় পানি ওঠেছে। প্রতিবার সড়ক ডোবার সঙ্গে ঘরে ভেতরও পানি প্রবেশ করে। জলাবদ্ধতার কারণে পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র অবস্থানের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এ নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বিয়ানীবাজারের দুবাগ এলাকার কমর উদ্দিন, বালিঙ্গা গ্রামের আশরাফ মিয়া, কুড়ারবাজারের রায়হান হোসেন জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে গ্রামের রাস্তাঘাট, ঈদগাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় নৌকা যোগে চলাচল করতে হচ্ছে। গ্রামের প্রধান সড়কও ডুবে গেছে। যে কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

অন্যদিকে কুশিয়ারার পানি না কমায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জের উপজেলার বাসিন্দারা। উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক, হাসপাতাল রোড ডুবে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি এখন নদীতে গিয়ে মিলছে। এ কারণে নদীর পানি বাড়লেও সীমান্তবর্তী নদ-নদীর পানি কমেছে। নদ-নদী পানিতে ভরা থাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিন আছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের বুধবার জানিয়েছে, জেলার ১ হাজার ১৮৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৫। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার ৬৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২০৭টিতে ৯ হাজার ২৩৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২৪
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।