ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

সাধারণের প্রতিক্রিয়া: গরিব মারার বাজেট, বাড়েই কিন্তু কমে না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৩
সাধারণের প্রতিক্রিয়া: গরিব মারার বাজেট, বাড়েই কিন্তু কমে না

ঢাকা: জাতীয় সংসদ ভবনে বাজেট উপস্থাপনের পর এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষে ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেশি।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলের পর থেকে শুক্রবার (২ জুন) সারাদিন বিভিন্নজনকে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত বাজেট ‘গরীব মারার’। প্রতি বাজেটে সব কিছুরই দাম বাড়ে। যা কমে, সেগুলো নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে থাকে না। মধ্যবিত্তরাও ধুকে ধাপে ধাপে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জিডিপির মোট আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকার। প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি ঠিক করা হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এ ঘাটতি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৩৪ হাজার ২৭৮ কোটি এবং চলতি বছরের মূল বাজেটের চেয়ে বেশি ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেশি।

সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর অভিমত, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেট নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কোনো কাজে আসবে না। গরিব বান্ধব বাজেট বলা হলেও এটি গরিব মারার বাজেট। বাজারের নিত্য পণ্যের মূল্য তো বাজেট ছাড়াই বাড়ছে। তাহলে এ বাজেট করে লাভ কী?

বিকেলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে জনমত নেয় বাংলানিউজ। এ তালিকায় ছিলেন পথচারী, ভিক্ষুক, দোকানি, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী।

তাদের মধ্যে একজন তানভীর আলম। বেসরকারি এ কর্মকর্তা বলেন, গত এক বছরে খাবার, পরার, পড়ার প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। কাজু বাদাম, বাসমতী চাল কজন খান? খেজুর কি মানুষ সারা বছর খায়? এসবের দাম বাড়ানো হবে। জামা কাপড়ও মানুষ সারা বছর কেনে না। বইপত্র, লেখার কলম- সব কিছুরই দাম বাড়তি। বাজার তো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। বাজেটে যে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হলো তাতে করে একজন গরিব মানুষ না খেয়ে মরবে। মাংসের দাম কমানো হচ্ছে, ভালো। কিন্তু কজন প্রতিদিন মাংস খান? আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারকে নিত্যদ্রব্য কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। এরমধ্যে আমাদের বেতনও বাড়েনি। সব মিলিয়ে এ বাজেটের কোনো মানে হয় না। এটা গরিব মারার বাজেট।

কালশি রোডের চায়ের দোকানি সোহেলে বলেন, চা পাতা, চিনির দাম তো আগেরতেই বাড়সে। এহন সিগারেটের দামও বাড়ব। আগের বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানির পর মাইনষ্যে অহন কমদামি সিগারেট খায়। এবার বাড়াইলে হেউডাও খাইবো না। সরকারে একবারে সিগারেট বিক্রিই বন্ধ কইরা দেয় না কেন? আজকে বাড়তি দাম দিয়া সিগারেটের বক্স কিনসি। অথচ বাজেটে কইসে নাকি দাম বাড়াইবো। অহনো কি বাড়াইসে? সরকার কিসু কইলেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়।

পল্লবী এলাকার মুদি দোকানি মো. নাদিম হোসেন বলেন, এই বাজেট গরিবের লাইগা না। পুরাডাই মনে করেন শুভঙ্করের ফাঁকি। আমারই বা করার কি আসে। বাড়তি দামে কিনমু, বিক্রিও সেইভাবে করমু। সরকার একদিকে তাকাইলে আরেক দিকে তাকায় না।

মিরপুর এলাকার রূপকথা ডেইরি মিল্কের স্বত্বাধিকারী মুকতাদির হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান আর হাতে গোনা কয়েকটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও শতকরা ৯০ ভাগ কর্মস্থলে বাড়েনি। তারা আগের বেতনে দিন পার করছে। এসব আমরাও বুঝি। কিন্তু সরকার কি বোঝে? যদি হতো তাহলে বাজেট সেভাবেই হতো। উচ্চবিত্তদের জন্য নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য এ বাজেট নয়। এবার যেসব পণ্যের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তা না বাড়ালেও পারতো সরকার। বাজেটের আগে থেকেই আমার দুধের বেচাকেনা অনেক ধীরগতি। পাস হওয়ার পর বোঝা যাবে আমাদের সামনে সুদিন আসবে নাকি দুর্দিন।

নাম প্রকাশ করতে চান না, একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আজ বাজারে এসেছিলাম ৩ হাজার টাকা নিয়ে। অর্ধেক মাসের বাজার করবো। কিন্তু যা দেখতে পাচ্ছি, সম্ভব না। আমাদেরই রেশন কিনতে সমস্যা হচ্ছে, অন্যান্যদের অবস্থা কি তা অনুধাবন করতে পারছি। প্রান্তিক লোকজনের অবস্থা তো আরও দুরূহ। এ অবস্থায় বলা যাবে না, বাজেট জনবান্ধব হয়েছে। তবে সরকার হয়ত বিষয়টি নিয়ে ভাববে। আমরাও তাই চাই।

প্রতীক হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আগের অর্থমন্ত্রী শিক্ষায় ভ্যাট বসাতে চেয়েছিলেন। আমরা আন্দোলন করেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ওপর সদয় দৃষ্টি দিয়েছিলেন। এবারের বাজেট জনবান্ধব হয়নি, তা নিশ্চিত। আমরা আবার তার কাছে আবেদন করতে পারি বাজেট নিয়ে ভাবতে। না হয় আমরা এখন খাবারে কষ্ট পাচ্ছি, যাতায়াত, নিত্যপণ্য নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি। আগামীতে আমরা কোনো কিছুই করতে পারব না যদি মূল্য বৃদ্ধি ধারাবাহিক হয়। বাংলাদেশের একজন ছাত্র হিসেবে তার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, যাতে তিনি এ নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কল্যাণে বাজেটে সংশোধন অনেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৩
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।